নতুন পোশাকে ছিন্নমূল শিশুদের ঈদ আনন্দ

বয়স ৭ কি ৮। মাথার চুল উশকোখুশকো। গলায় কালো সুতোয় একটি তাবিজ ঝুলানো। তামাটে গায়ের রঙ্গে মাটি মাখা কালো হাফ পেন্ট। নগ্নপায়ে চোখ কচলাতে কচলাতে এসে বলে স্যার আমার মা মইরা গ্যাছে, বাপে আরেকটা বিয়া কইরা চইলা গ্যাছে। আমারে কয়ডা টেহা দেন ভাত খামু। পাঁচ টাকা দিয়ে, আবার টাকার লোভ দেখাতেই নতুন গল্প বলতে শুরু করে তারেক। এভাবে শিখিয়ে দেয়া গল্প মানুষের কাছে বলে করুণা চায় হাজারো কোমলমতি তারেক।

এমন গল্প লাখো পথশিশুর। যারা পথেই থাকে। তাদের কোনো ঠিকানা নেই। অভিভাবকহীন এসব পথশিশুর নেই কোনো ভবিষ্যতও। যার কারণে কেউ তাদের নিয়ে রাজনীতি করে আবার কেই ব্যবহার করে অন্যায় কাজে। অথচ কেউ ভাবে না এরা আমাদের সমাজেরই বাসিন্দা। এরাও কারো না কারো সন্তান। এদের যাপিত জীবনের দায়িত্বও বর্তায় আমাদের উপর।

এমন শতাধিক পথশিশুকে একত্রে করে আসন্ন ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে তাদের মুখে হাসি ফোটানের দায়িত্ব নিয়েছে একদল দুরন্ত কিশোর। স্বপ্ন ছোয়ার নেশায় এগিয়ে যাওয়া এসব কিশোর গত কয়েক বছর ধরে নিজেদের খাবারের টাকা থেকে কিছু অর্থ বাঁচিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা চালায় আশপাশের ছিন্নমূল শিশুদের মুখে হাসি ফোটাবার। সঙ্গে এলাকার কিছু ভাই সহযোগিতা করে ছোট মানুষের ছোট এই উদ্যোগকে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় কারওয়ানবাজার সংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্কে পথশিশুদের মাঝে বিতরণ করা হয় নতুন পোশাক।

সংগঠনের সভাপতি মেরাজ মাহফুজ বলেন, দেশে এতো পথশিশুর মধ্য থেকে শতাধিক শিশুকে নতুন পোশাক দেয়া উল্লেখযোগ্য কিছু না, তবু চেষ্টা করি কিছু শিশুর মুখে হাসি ফোটানোর। উদ্যোগী হলে সব পথশিশুর মুখেই হাসি ফোটানো সম্ভব।

সংগঠনের পরামর্শক গণমাধ্যমকর্মী মাইদুর রহমান রুবেল বলেন, এই সমাজে বিত্তবানের অভাব নেই। তারা একটু দৃষ্টি দিলেই ছিন্নমূল শিশুদের চাহিদা পূরণ হয়ে ভেসে যায়। কিন্তু কে ভাবে কার কথা। অন্ধ সমাজপতিদের নিজেদের অফুরন্ত চাহিদা পূরণ করে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথা ভাবা তাদের সময়ে পড়ে না। এক দল কিশোর তরুণের এই উদ্যোগ সত্যি প্রশংসার যোগ্য। সামর্থবানরা যে কাজ করতে পারে না তা সফল করা এসব তরুণদের দুঃসাহস বলা চলে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালিকণা বিন্দু বিন্দু জল/গড়ে তোলে মাহদেশ সাগর অতল। কবিতার মতোই এই কিশোরদের ইচ্ছাও একদিন বড় হবে।

ইউনিসেফ ও বিআইডিএস গবেষণা অনুযায়ী, ২০০৫ সালে দেশে পথশিশু ছিল ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ জন। চলতি বছর শেষে দেশে এর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ। ২০২৪ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬ লাখের বেশি। পিতা-মাতা, আত্মীয় পরিজনহারা শিশুরা জীবন-সংগ্রামে নামে বাধ্য হয়েই।

এরাতো আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই স্বজন। রাষ্ট্রের উপর সব সপে না দিয়ে দিনকানা সমাজপতিদের বিবেককেও জাগ্রত করতে হবে এসব শিশুর সুরক্ষায়। না হয় আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত, কথাতেই থেকে যাবে। যেমন কাজির গরু কেতাবেই থাকে গোয়ালে নয়।

অনুষ্ঠান সফল করতে সহায়তা করে বন্ধুযোগ। এসময় উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যমকর্মী হাসান মাহমুদ, সিকান্দার রেমান। আরো ছিলেন রাইয়ান, অর্ক, মিতু, রিয়া, অথই, শাকিল, অর্নব, উজ্জল, নুসরাত, আয়েশা, আহসান প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই