নতুন কাঠামোয় বেতন এখনো অনেক দূর

‘নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট অক্টোবরের শেষে না হলেও নভেম্বরের শুরুতেই হবে’- সরকারের নীতিনির্ধারকদের এমন ঘোষণায় সরকারি চাকরিজীবীরা ডিসেম্বরে নতুন কাঠামোতে বেতন পাওয়ার আশা করছিলেন। তাঁরা খরচের পরিকল্পনাও করেন নতুন করে। এখন দেখা যাচ্ছে, সবই মিছে!

নতুন কাঠামোয় বেতন পেতে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হবে সরকারি চাকরিজীবীদের। কারণ অনেক, সেসবের সমাধান করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আবারও বসতে হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। পুরনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে নতুন নির্দেশনা যুক্ত করে আবার পাঠাতে হবে আইন মন্ত্রণালয়ে, ছাড়পত্রের জন্য। তারপর গেজেট জারি, তারপর নতুন কাঠামোয় বেতন। ঠিক কত দিন লাগবে তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও নভেম্বরের বেতন ডিসেম্বরে নতুন কাঠামোয় না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গেজেট জারির কাজ অনেক দূর এগিয়েছিল। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নতুন বেতন কাঠামোর নথিপত্র মঙ্গলবার ফেরত এনেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে তিনি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেগুলোর সংযুক্তি ছাড়াই নতুন কাঠামো আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। এখন পুরো বেতন কাঠামো খতিয়ে দেখে অর্থমন্ত্রী প্রয়োজনমতো নতুন সিদ্ধান্ত সংযুক্ত করবেন।

নতুন বেতন কাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থাকছে না। তা ছাড়া বিভিন্ন গ্রেডে নির্ধারিত সময়ের পর ইনক্রিমেন্টও হবে না। তাই ১০ বছর অন্তর অথবা সর্বশেষ ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্তির পর ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন স্কেল পরবর্তী গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী, এটা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত কাঠামোতে নেই। এ ছাড়া এক বছর ইনক্রিমেন্ট বন্ধ রাখা, বিশেষ বিভাগের জন্য বাড়িভাড়া বাবদ অতিরিক্ত ২০ শতাংশ অর্থ দেওয়া, গত ৩০ জুনের পর কর্মকর্তাদের পাওয়া সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখা, চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের নতুন কাঠামো দেওয়া প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এগুলোর সুরাহা করে আবার ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ জন্য কত দিন সময় লাগবে তা অনুমান করতে পারছেন না কেউ।

কিছু সিদ্ধান্তবিষয়ক আপত্তি

প্রতিবছর সরকারি কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্ট হয়; তবে একেকজনের একেক দিনে। এখন একই তারিখে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। কিভাবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে তা নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ঠিক করেছে, এক বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বন্ধ রাখা হবে। এরপর একই দিনে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া শুরু হবে।

একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারের উদ্দেশ্য ভালো; ইনক্রিমেন্টে শৃঙ্খলা আনাই লক্ষ্য। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বিতর্কিত হয়ে যাবে এক বছরের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দিলে। মন্ত্রিসভা ইনক্রিমেন্ট কর্তন করেনি। এটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ইনক্রিমেন্ট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কোনো কর্তৃপক্ষ নিতে পারে না। এটা বন্ধ রাখা হলে মামলা বাড়বে।

আইন মন্ত্রণালয় বলছে, চলতি অর্থবছরের ইনক্রিমেন্ট দিয়েই আগামী বছর থেকে একই দিনে তা চালু করা যাবে।

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে নতুন বেতন স্কেল ঠিক করেছে সরকার। এটা ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর ধরা হবে। কিন্তু নতুন স্কেল ঘোষণার আগেই কয়েকটি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সিলেকশন গ্রেড এবং কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের টাইম স্কেল যোগ করে অফিস আদেশ জারি হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই এসব বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এটা বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন, একটি বিশেষ বিভাগের জন্য সরকারি বাড়ির ব্যবস্থা থাকার পরও বাড়িভাড়া বাবদ অতিরিক্ত ২০ শতাংশ অর্থ চেয়েছে তারা। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের সময় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তবু অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব বহাল রাখতে চায়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা কিভাবে সম্ভব? যাঁরা সরকারি বাড়িতে থাকেন তাঁরা বাড়িভাড়া চাইতে পারেন না। বেশির ভাগ সরকারি কর্মচারী বাড়ি পান না। যাঁরা পান তাঁদের বেতনের একটা অংশ কেটে নেওয়া হয়। আরো সাড়ে সাত ভাগ কাটা হয় বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। এ অবস্থায় বাড়তি ২০ ভাগ অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব অযৌক্তিক। আইন মন্ত্রণালয়ও এতে আপত্তি জানিয়েছে।’

চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা নতুন স্কেলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর জন্য বিধিবিধানও সংশোধন করা হবে। এটিও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কর্মকর্তাদের মতে, চুক্তিতে নিয়োগ পান অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা। তাঁদের জন্য নতুন বেতন স্কেল কার্যকর করার সিদ্ধান্ত জটিলতার সৃষ্টি করবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক

গত ১৯ অক্টোবর একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। তাতে বলা হয়, নতুন বেতন স্কেলের গেজেট প্রকাশের পর প্রজাতন্ত্রের সব চাকরিজীবীর বেতন নির্ধারণ (পে ফিক্সেশন) করার প্রয়োজন হয়। এ-সংক্রান্ত প্রক্রিয়াকে দ্রুততর, সহজ ও নির্ভুল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর আদেশ গেজেট আকারে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এটি কার্যকর হবে। প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবীকে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে লগ ইন করে বেতন নির্ধারণের জন্য নির্দিষ্ট ছক পূরণ করতে হবে। এর জন্য আবশ্যিকভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনডিআই) নম্বর এবং তাতে উল্লেখ করা জন্মতারিখ দিতে হবে।

পরিপত্রে আরো বলা হয়, যেসব সরকারি চাকরিজীবীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাঁদের অনতিবিলম্বে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন করতে পরামর্শ দেওয়া হলো। যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্রে ত্রুটি রয়েছে তাঁদের আবশ্যিকভাবে তা সংশোধন করিয়ে নিতে হবে।

সূত্র জানায়, গেজেট জারির আগেই সংশোধন করতে না পারলে বেকায়দায় পড়তে হবে।



মন্তব্য চালু নেই