‘ধীরে চলো নীতি’তে কূটনীতিকেরা

চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ১৬ জন বিদেশি কূটনীতিক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে কিছুটা সময় নিতে আগ্রহী। সহিংসতা বন্ধ ও সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে ইতিমধ্যে তারা সরকার ও বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে এক দফা আলোচনা করেছেন। দুই পক্ষের অনড় অবস্থানে কূটনীতিকেরা আপাতত ‘ধীরে চলো নীতি’ অনুসরণ করছেন।

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে চিঠি দিয়েছিলেন, তার জবাব এখনো নিউইয়র্কে পাঠানো হয়নি। চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে বান কি মুন ‘সংসদের বাইরের বিরোধী দলকে’ নিয়ে সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান।

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সফরের জন্য মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের ওপর চাপ রয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের। দুই প্রধান দল নিজেদের অবস্থানে ছাড় না দেওয়ায় বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ সফর নিয়ে মার্কিন কূটনীতিকদের অনীহা রয়েছে। তবে কংগ্রেসের চাপ এড়ানো না গেলে নিশা দেশাই ঢাকায় আসতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন বলেন, বিদেশি কূটনীতিকেরা নিজেরা মধ্যস্থতা করবেন না। তারা বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের বর্তমান সংকট সমাধানে প্রয়োজনে সহযোগিতা করতে আগ্রহের কথা বলেছেন। কিন্তু দুই পক্ষ অনড় অবস্থানে থাকায় বাস্তব কারণেই তাঁরা ধীরে চলার নীতি নিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপানসহ ১৫টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিকেরা চলমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগে নিজেদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তারা বলছেন, মধ্যস্থতা নয়, বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে ‘সেতুবন্ধ’ হিসেবে তারা কাজ করতে চান।

জানতে চাইলে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কূটনীতিক গত বৃহস্পতিবার বলেন, আপাতত কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা নেই। এখনকার পরিস্থিতি তাঁরা পর্যালোচনা করছেন। পরে সম্ভব হলে দুই পক্ষের সঙ্গে আবার আলোচনা হবে।

সরাসরি না বললেও প্রকারান্তরে তাদের কেউ কেউ স্বীকার করছেন, দুই দলের অনমনীয় অবস্থানের কারণে তারা কালক্ষেপণ করাটাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনার আগে কূটনীতিকেরা নিজেদের মধ্যে বারবার কথা বলেছেন। ১ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীসহ প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা এবং ৩ মার্চ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার পর তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা কমে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুর বাসায় জার্মানিসহ অন্তত সাত দেশের কূটনীতিকেরা আলোচনা করেন বলে জানা গেছে।

এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত সংশ্লিষ্ট দুই দেশের কূটনীতিকেরা জানান, বর্তমানে তাদের আলোচনায় রাজনৈতিক পরিস্থিতির তুলনায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাত ও কৃষির ওপর প্রভাবের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

তবে ইদানীং সহিংসতা ও জানমালের ওপর হামলা কমে যাওয়ায় তাদের কেউ কেউ কিছুটা স্বস্তি বোধ করছেন বলে জানান।

গত মঙ্গলবার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৬ জন কূটনীতিককে খুব স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, বিএনপিকে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তা ছাড়া গণতন্ত্রে সহিংসতাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

সরকারের এই অবস্থান বিএনপির কাছে জানাতে কূটনীতিকদের বলা হয়েছিল। এরপর বিএনপির অবস্থানে পরিবর্তন আসেনি। কাজেই এই মুহূর্তে কূটনীতিকদের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসার তেমন সম্ভাবনা নেই। -প্রথম আলো



মন্তব্য চালু নেই