ধার্মিক পরিবারের মেয়ে হ্যাপি

অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপী ধার্মিক পরিবারের মেয়ে হওয়ায় কিছুটা বাধা আসে তার এ পথচলায়। হ্যাপি বলেন, আমি জানি অনেকেই আমাকে দোষারোপ করছেন। বিশেষ করে রুবেলের ভক্তরা। কিন্তু তাদের কাছে প্রশ্ন, আমার জায়গায় থাকলে তারা কি করতেন? কেউ কেউ বলছেন, প্রেম করার আগে বিষয়টি ভাবিনি কেন? তাদেরকে বলতে চাই, আবেগের কাছে কিছুই আটকায় না, আমার বেলায়ও তাই হয়েছে।

সব বাধাকে উপেক্ষা করে নাচগান শিখেছেন ছোটবেলা থেকেই। যখন থেকে সিনেমা বিষয়টি বুঝতে শেখেন, তখন থেকেই বাংলা সিনেমা দেখেন। এ জন্য বাবা-মার বকাও শুনতে হয়েছে বহুবার। বিশেষ করে, মৌসুমী-শাবনূরদের অভিনয় খুব পছন্দ তার। তাদের অভিনয় দেখেই সিনেমার নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা জাগে তার।

১৩ ডিসেম্বর থেকে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয় রুবেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা হ্যাপীর এ মামলা। জাতীয় দলের পেসার রুবেল বেশ পরিচিত মুখ হলেও এখন অনেকের প্রশ্ন, কে এই হ্যাপী? এ নিয়ে চারদিকে এখন আলোচনা তুঙ্গে।

হ্যাপীর কারণেই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে রুবেলের। সম্ভাবনাময় এক খেলোয়ারের ক্যারিয়ার কী তবে এখানেই শেষ হয়ে যাবে? নিত্যনতুন ঝড় উঠছে চায়ের কাপে। হ্যাপী সম্পর্কে জানতে একটু পেছনে যেতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার সাদাতের আদালত রুবেলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর হ্যাপী আবেগে কাঁদতে শুরু করেন। পরে আদালত থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন।

আদালত থেকে বের হতে হতে হ্যাপী বলেন, ‘আই হ্যাভ ওন দ্য ম্যাচ। আদালত ন্যায়বিচার করেছে। দেশের আইনের চোখে সবাই সমান। আমি তার প্রামাণ পেয়েছি। আদালত সঠিক কাজ করেছে। কিন্তু এ কথা বলেই অঝোরে কান্না শুরু করেন হ্যাপী।

রুবেলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার পরপরই আদালত চত্বরে হট্টগোল বেধে যায়। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে আদালত চত্বরে। একপর্যায়ে হ্যাপী হট্টগোলের মধ্যে পড়ে যান। পরে পুলিশ ও আইনজীবীরা হ্যাপীকে নিরাপদে তারা গাড়িতে তুলে দেন।

২০১৩ সালে মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের কিছু আশা কিছু ভালোবাসা ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে হ্যাপীর। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন চিত্রেও কাজ করেছেন বাগেরহাটের এই মেয়ে। বর্তমানে তাদের গোটা পরিবার থাকেন রাজধানীর রূপনগরের আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে।

সেই ইচ্ছার রথ সচল হয় নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের কাছে এসে। কিছু আশা কিছু ভালোবাসা ছবির মাধ্যমে অভিষেক হয় তার।

এ ছবিতে হ্যাপীর বিপরীতে অভিনয় করেন অভি। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন মৌসুমী, শাবনূর ও ফেরদৌস। এরই মধ্যে বদরুল আমিন পরিচালিত রিয়েলম্যান সিনেমার শুটিং, ডাবিং শেষ করে এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে।

আলোচনার বাইরে থাকা এ অভিনেত্রী এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছেন। আলোচিত আনহ্যাপী ঘটনার নায়িকা হ্যাপীকে ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে রুবেলের জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে হ্যাপীর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্যের ঝড় উঠছে।

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেগবান হচ্ছে এসব মন্তব্যের সংখ্যা। গণমাধ্যমকে হ্যাপী জানান, এখন আমি মানসিকভাবে আরো শক্ত। কারণ আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কারাগারে পাঠিয়েছেন রুবেলকে। কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছি এ মামলায়।

হ্যাপী জানান, সমাজে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। কিন্তু ধনীর দুলালদের কারণে অনেকেই প্রকাশ করতে সাহস পায় না। আমি না হয় একটু সাহস দেখালাম।

এদিকে হ্যাপীর আইনজীবী তুহিন হাওলাদার বলেন, জামিন নামঞ্জুর করে রুবেলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এটি আদালতের সঠিক সিদ্ধান্ত। অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আদালত।

তিনি আরো জানান, এছাড়া এরকম একটি মামলায় আসামি জামিনে থাকলে তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করতে পারে। এমনকি সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাতে পারে আসামিপক্ষ। এ কারণে রুবেলের জামিনের বিরোধিতা করেছি।

ধর্ষণের অভিযোগে ১৩ ডিসেম্বর মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন হ্যাপী। মামলায় অভিযোগ করা হয়, জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার হ্যাপীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন।

এরপর মামলা তুলে নিতে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয় বাদী নাজনীন আক্তার হ্যাপীকে। বলা হয়, দু-একদিনের মধ্যে মামলা তুলে না নিলে অপহরণ করে গুম করে ফেলা হবে। পরে নিরাপত্তার জন্য মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপী।

ক্রিকেটার রুবেল হোসেনকে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দিতে সোমবার হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন হ্যাপীর আইনজীবী মোহাম্মদ ইউনুস আলী আকন্দ। মঙ্গলবার তিন দফায় আবেদনটি শুনানির জন্য উঠলে আকন্দ অনুপস্থিত থাকায় হ্যাপীর আবেদন খারিজ করে দেয় বিচারপতি গাজী রেজাউল হক এবং বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ।

হ্যাপী আরো জানান, বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল ঘোষণার পাঁচ দিন আগেই তিনি রিট আবেদন দায়ের করেছিলেন। মামলার নথি পেতে দেরি হয়েছে। রুবেল বিশ্বকাপে খেলতে পারবে কি পারবে না তা নিয়ে হ্যাপীর কোনো মাথা ব্যথা নেই।

হ্যাপী জানান, দলে কি প্রভাব পড়ল তা তার ভাবার বিষয় নয়। তার কাছে রুবেল কোনো ক্রিকেটার নয়, সে একজন প্রতারক ও অপরাধী। অপরাধী অপরাধ করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে, তা তিনি মানতে পারছেন না। তিনি রুবেলের শাস্তি চান।

হ্যাপী জানিয়েছেন , তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। এখনই আশা ছাড়তে নারাজ তিনি।

রুবেলের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিজেই সামাল দিচ্ছেন দাবি করে হ্যাপী বলছেন, মামলা দায়েরের পর তার পরিবারও তার পাশে নেই। পুরো প্রক্রিয়া তাকে একাই সামাল দিতে হচ্ছে। বাইরে বের হলেই বাজে কথা শুনতে হচ্ছে। তবু তিনি হাল ছাড়তে নারাজ।

উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর নাজনীন আক্তার হ্যাপি ধর্ষণের অভিযোগ এনে মিরপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রুবেল হ্যাপির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। রুবেলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে বলে দাবি করেন হ্যাপি।

“হ্যাপি নায়িকা হলেন যেভাব”-এই নিউজটি বিস্তারিত পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন:

হ্যাপি নায়িকা হলেন যেভাবে ( ভিডিও )



মন্তব্য চালু নেই