দ্বন্দ্ব ভুলে ফের একত্রিত হচ্ছে পুরনো ও নতুন জেএমবি

আদর্শিক দ্বন্দ্ব ভুলে পুরনো ও নতুন জেএমবির সদস্যরা এখন একত্রে সংগঠিত হচ্ছে। জেএমবির নেতৃত্বের ব্যাপারেও কয়েক বছর আগে কেউ কাউকে কোনো ছাড় দিতে রাজি হয়নি। ফলে ভেতরে ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব বিরাজ করছিল। কিন্তু এই অবস্থার এখন পরিবর্তন হয়েছে। তারা দ্বন্দ্ব ভুলে একে অপরকে ‘ছাড়’ দিচ্ছে এবং একসঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে সংগঠিত হচ্ছে। এদিকে র‌্যাব ও পুলিশ পুরনো জেএমবি ও নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্যদের হালনাগাদ তালিকা করার কাজ শুরু করেছে। তালিকা তৈরির সঙ্গে সঙ্গে এদের গ্রেফতারের চেষ্টাও চলছে। পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, পুরনো ও নব্য জেএমবির জঙ্গিদের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে। এই তালিকায় আরো নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। নব্য জেএমবির তামিম চৌধুরী, মারজান, গান্ধীসহ অনেকের নামই একসময় তালিকায় ছিল না। কিন্তু পরে গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে এদের নাম বেরিয়ে এসেছে। তখন নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। পরে মহিলা সেলের সদস্যসহ আরো অনেকের নাম তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এভাবে তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। তালিকাভুক্তদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

এদিকে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, নব্য জেএমবির তৎপরতা শুরু হওয়ার পর পুরনো জেএমবির সঙ্গে প্রথমে আদর্শিক বিরোধ শুরু হয়। পরে নেতৃত্ব নিয়েও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিষয়টি কারো জানা ছিল না। ২০১২ সালে র‌্যাবের গোয়েন্দারা বিষয়টি জানতে পারে। ২০১৫ সালে তানভীর কাদেরির নেতৃত্বেই নতুন জেএমবি ও পুরনো জেএমবির একটি অংশ একত্রিত হয়। তখনই বিষয়টি জানা যায়। এখনো তারা তাদের সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের সবাই র‌্যাবের নজরদারিতে রয়েছে। জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত যে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুলিশ পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ও র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে নব্য জেএমবি ও পুরনো জেএমবির সদস্যরা আবারো একত্রে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। একত্রিত হতে নব্য ও পুরনো জেএমবির নেতারা একে অপরকে বেশ ‘ছাড়’ দিচ্ছে। নব্য জেএমবির নেতারা বেশি আগ্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে বিশ্বাসী। আর্থিকভাবেও নব্য জেএমবি অনেক বেশি সক্ষম। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গেও তারা সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম। কিন্তু পুরনো জেএমরি সদস্যরা এসব ব্যাপারে সক্ষম নয়। তাছাড়া নব্য জেএমবির নেতাদের নেতৃত্ব পুরনো জেএমবির নেতাকর্মীরা মেনে নিতে রাজি ছিল না।

আবার নব্য জেএমবির নেতারা পুরনো জেএমবির নেতৃত্বে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে কখনোই রাজি হয়নি। পুরনো জেএমবি নেতারা কিছুটা ধীর গতিতে চলতে চায়। মূল নেতৃত্ব তাদের হাতেই রাখতে চায়। এ কারণে নব্য জেএমবির সঙ্গে পুরনো জেএমবির কোনো দিক থেকেই মিল ছিল না। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে এখন তারা একে অপরকে সর্বোচ্চ ‘ছাড়’ দিয়ে একত্রে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। নব্য জেএমবির যেসব নেতাকর্মী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে, তারাই আবার নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একত্রে সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি জানার পর জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধে দায়িত্বরত গোয়েন্দারা নতুন ও পুরনো জেএমবির সদস্যদের হালনাগাদ তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও র‌্যাব পৃথকভাবে তালিকা করছে। এই তালিকা ধরেই গ্রেফতার অভিযান চালানো হবে। এখনো নব্য জেএমবির কয়েকজন দুধর্ষ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে পুরনো জেএমবির বেশ কয়েকজনের খোঁজ পাওয়া গেছে। নব্য জেএমবি ও পুরনো জেএমবির কোনো সদস্যকেই খাটো করে দেখা হচ্ছে না। এছাড়া যারা পুরনো ও নব্য জেএমবিকে অর্থ, অস্ত্র, বিস্ফোরক ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদেরও জেএমবির সহযোগী হিসেবে দেখা হবে। এদের অনেককেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বেশ কয়েকজন কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছে। জেএমবির সঙ্গে সক্রিয়দের তালিকা হালনাগাদ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা অব্যাহত থাকবে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, সংগঠিত জেএমবি যে কোনো সময় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর জন্য ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে গোয়েন্দারা সতর্ক রয়েছেন। জেএমবি, আনসারউল্লাহ বাংলাটিম, আনসার আল ইসলামসহ আরো যেসব জঙ্গি সংগঠন রয়েছে, তাদের সবার কার্যক্রম নিয়মিত নজরদারিতে রাখা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া মাত্র অভিযান চালানো এবং গ্রেফতারের জন্যও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই