দোষ স্বীকার না করলেও মোবাইল কোর্টে শাস্তি

অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষ স্বীকার না করলেও সাক্ষ্য নিয়ে এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) শাস্তি দিতে পারবে। ‘মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯’ সংশোধন করে এ বিধান রাখা হচ্ছে।

জাতীয় সংসদ ভবনে সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘মোবাইল কোর্ট (সংশোধন) আইন, ২০১৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিষয়ে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এ অনুমোদনের কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ সালে প্রণয়ন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ আইনের বিধান অনুযায়ী বিচারযোগ্য ব্যক্তি দোষ স্বীকার করলেই কেবল মোবাইল কোর্টে শাস্তি দেওয়া যায়।’

‘অনেকেই দোষ করে তা স্বীকার করেন না; স্বীকার না করলে মোবাইল কোর্টের আওতায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি দিতে পারেন না। এখানে একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সংশোধিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে, দোষ স্বীকার করলে শাস্তি তো পাবেনই, দোষ স্বীকার না করলে সাক্ষ্য নিয়ে এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি দিতে পারবেন’ বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এই আইনের সংশোধনী বিচারিক আদালতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে কি না— জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোন কনফ্লিক্ট (দ্বন্দ্ব) হবে না।’

আইনটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের সুযোগ বাড়াবে কি না— সংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের কোনো আশঙ্কা নেই।’

সংশোধিত আইনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ও বায়োমেট্রিক্স মোবাইল কোর্টের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’

সাধারণত জীববিদ্যার তথ্য নিয়ে যে বিজ্ঞান কাজ করে তাকে বায়োমেট্রিক্স বলে। বায়োমেট্রিক্স মানুষের আচরণগত বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে।

তিনি বলেন, ‘আইনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভিত্তিতে নেই, তবে এটি একেবারে নতুন বিষয় নয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ও বায়োমেট্রিক্স ব্যবহারের সুযোগ আছে। মোবাইল কোর্টে এটি যুক্ত করা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।’

এ ছাড়া প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারবেন।

‘ভেজালবিরোধী অভিযান, ইভটিজিং প্রতিরোধ, দুর্নীতিমুক্তভাবে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ, নির্বাচনকালীন সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিতে মোবাইল কোর্ট আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনটি প্রয়োগ করতে গিয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা হয়। আইনের সীমাবদ্ধতা দূর এবং আইনটি আরো কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে সংশোধনী আনা হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।

মোবাইল কোর্ট আরো কার্যকর করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন, মন্ত্রিসভা বৈঠক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি ওয়ার্কশপ থেকে মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধনের সুপারিশ পাওয়া যায়। সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশোধিত আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে বলে জানান মোশাররাফ হোসাইন।

২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট আইনের অধীনে সাড়ে পাঁচ লাখ কেস (মামলা) নিষ্পত্তি হয়েছে— জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তির হার খুব হাই (বেশি) ও স্পিডি (গতিময়)। মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে ৯৩টি আইন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’



মন্তব্য চালু নেই