দুটো বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে

যেকোনো সময় বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এই প্রতিবেদনে অধ্যাপক হুমায়ুন আখতারের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দুই দিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। তার হিসেবে, ওই শক্তি যদি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করা হয়, তা ৭.৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে।

সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমিকম্পের শক্তি জমা হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘একটা হচ্ছে উত্তরপূর্ব কোনে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টে, আরেকটা হচ্ছে আমাদের পূর্বে চিটাগাং ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে। এখানে আসলে দুইটা বড় ধরনের ভূমিকম্প আমাদের বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। উত্তর প্রান্তে যেটা ডাউকি ফল্ট এখানে সংকোচনের হার হচ্ছে প্রতি একশ বছরে এক মিটার। গত ৫শ থেকে ৬শ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড নেই। তার মানে ৫-৬ মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে। এটা যদি আমি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করি তাহলে এটা হচ্ছে ৭.৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। এবং এখান থেক ঢাকা শহর হচ্ছে দেড়শ কিলোমিটার।’

তবে রাজধানী ঢাকা বড় ভূমিকম্পের মতো অবস্থায় নেই বলে মনে করেন তিনি। তবে এই খবরে আশান্বিত হওয়ার সুযোগ মোটেও নেই। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে ঢাকা।

160421133743_bd_earthquake_graphic_640x360_bbcbangla

অল্প সময়ের ব্যবধানে স্বল্প ও মাঝারি মাত্রার কয়েক দফা ভূমিকম্পে বাংলাদেশ কেঁপে ওঠায় রাজধানীর অনেকেই বড় ধরনের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। অবশ্য এসব ভূমিকম্পের কোনোটিরই কেন্দ্র বাংলাদেশ ছিল না। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে গোটা দেশ। এতে কয়েকটি ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া যায়। তবে যথাযথ নিয়ম মেনে ভবনগুলো তৈরি করা হলে ওই মাত্রার ভূমিকম্পে ভবনগুলোর ক্ষতি হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকার ভবনগুলোর বেশিরভাগই ভূমিকম্প সহনীয় নয় বলে আলোচনা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। ভবনগুলোর পাশপাশি ভূমিকম্পের পর ঢাকার জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা গ্যাসের লাইনও।

সব মিলিয়ে ৭-৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প যদি বাংলাদেশে আঘাত হানে তবে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারীর বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রয়েছে চার লাখের বেশি ভবন। রাজউক এলাকায় যে সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি; যার অধিকাংশই ভূমিকম্প সহনীয় নয়।

ভূমিকম্পের বিষয়ে জনসচেতনতায় ঘাটতি থাকার বিষয়টিও উঠে এসেছে তার কথায়।

বিবিসির প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়েছে, বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি সিডিএমপির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। যেখানে তৈরি হবে সাত কোটি টন কংক্রিটের স্তুপ।

সিডিএমপির সাবেক ন্যাশনাল প্রজেক্ট ডিরেক্টর মুহাম্মদ আবদুল কাইয়ূম বলেছেন, ভূমিকম্পের ভয়ে আতঙ্কিত না হয়ে এ দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই