দিল্লি যতটা পেয়েছে, ঢাকা ততটা পায়নি

রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, দিল্লিকে ঢাকা যতটা সুবিধা দিয়েছে, ঢাকা ততটা পায়নি। নিজেদের স্বার্থেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তবে ফারাক্কা সমস্যার মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত পানি সমস্যার সমাধান খাতা-কলমে থেকে যাবে বলেও মত দেন বক্তারা।

শনিবার হোটেল লেইক শোরে ‘ভারত নির্বাচন: বাংলাদেশ-ভারত গোলটেবিল বৈঠক’ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘ইনস্টিটিউট অফ কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’। এতে দেশি-বিদেশি বিশ্লেষকরা অংশ নেন।
আলোচনায় ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের নিয়ে বিজিপি নেতা নরেদ্র মোদির মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বেশিরভাগ আলোচক।
পিকেএসফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, নরেদ্র মোদি সম্প্রতি ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্ককে সম্প্রসারিত না করে সঙ্কুচিত করবে।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক নির্বাচনী সমাবেশে দলটির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মোদি বলেন, তার সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের ভারত থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন। মোদি বলেন, আপনারা এটি লিখে রাখতে পারেন। ১৬ মে’র পর এসব বাংলাদেশি ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে তৈরি হয়ে থাকলেই ভালো করবে।
লেইক শোরের অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীনা সিক্রি। তিনি বলেন, ভারতে এখন নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। যেই ক্ষমতার আসুক না কেন বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ।
তিনি বলেন, ১৯৯২ সালে যখন খালেজা জিয়া ভারতে এসেছিলেন তখনও ভারতে অবস্থানকারী ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছিল। আলোচনার মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে সন্তোষজনক সমাধানে আসা সম্ভব।
ভারতের সাবেক মেজর জেনারেল দীপংকর ব্যানার্জি বলেন, পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা ও আলোচনার মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা যেতে পারে।
জগলূল আহমেদ চৌধুরী বলেন- আসাম, উড়িষ্যার এলাকাগুলোতে কংগ্রেসের সমর্থক বেশি। বিরোধীদের ভোট পেতে সেখানে মোদি বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য রাখছেন। স্পর্শকাতরতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি লাভবান হতে চাইছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে শর্ট টার্ম, মিডিয়াম টার্ম ও লং টার্ম এই তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একাত্তরের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল। এখন ভারতের সঙ্গে তিস্তা নিয়ে কথা হচ্ছে। ফারাক্কা নিয়ে কথা বলা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। ফারাক্কা সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সমাধান হবে না বলে তিনিও মনে করেন।
এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের মতে, ভারতে যে সরকারই আসুক বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রাখতেই হবে। বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান না হলে অন্যরা ‘কমফোর্টেবল’ থাকতে পারবে না। নয়া দিল্লিকে ঢাকা যতটা সুবিধা দিয়েছে, ততটা পায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আর এর পেছনে কাজ করেছে রাজনৈতিক অবিশ্বাস। গত ৪০ বছরে রাজনৈতিক অবিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি আসেনি বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিকের সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আলোচনায় অংশ নেন।


মন্তব্য চালু নেই