দাম বাড়ালো ভারত, মজুদদারদের পোয়া বারো

রমজান এলে এমনিতেই পিঁয়াজের দাম বাড়ে। এরমধ্যে ভারত এই পণ্যটির রপ্তানিমূল্য প্রায় দ্বিগুণ করেছে। ফলে বাংলাদেশের বাজারে এখন হু হু করে বাড়বে পিঁয়াজের দাম। আর এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুদদারেরা।

পিঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতে টনপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে পিঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। টনপ্রতি ৫০০ টাকায় পিঁয়াজ আমাদনি করলে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৪০ টাকা। আর স্থানীয় বাজার পর্যন্ত পৌঁছতে আরও প্রায় ২০ টাকা যোগ হবে এর সঙ্গে। সব মিলিয়ে প্রতিকেজি পিঁয়াজের পাইকারি বাজার দর দাঁড়াবে ৬০ টাকার কাছাকাছি। আর খুচরা বাজার পর্যায়ে আসতে আসতে ৭০-৮০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

আর যেসব ব্যবসায়ী রমজানকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই মজুদ রেখে পিঁয়াজের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকেন তাদের তো পোয়া বারো! অন্যবারের তুলনায় এবার তারা অনেক বেশি খুশী হবেন। কারণ, এবার রোজার শুরুতেই পিঁয়াজের দাম ৬-৭ টাকা বাড়লেও এ-ই প্রথম দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে। ঠিক এ-ই সুযোগটারই অপেক্ষায় ছিলেন তারা।

কাওরান বাজারে পিঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা ওমর ফারুক বলেন, ‘যারা পিঁয়াজের মজুদ রেখেছিল তারা তো লাল হয়ে গেলো। তারা এক চান্সেই ধনী হয়ে গেলো।’

তিনি বলেন, ‘৫০০ ডলারে পিঁয়াজ কেনার ফলে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৪০ টাকা। আর বাজার পর্যন্ত আসতে খরচ আরো বেড়ে যায় ২০ টাকা। আর এ সময়টাতে তো বাজারে একটু বেশি দামে ছাড়বেই। সুতরাং পিঁয়াজের দাম ৮০-৯০ টাকা হয়ে যাবে স্বাভাবিকভাবে। এখন যাদের মজুদ আছে তারা তো আর কম দামে বিক্রি করতে পারবে না। তারা বেশি দামেই বিক্রি করে যাবে।’

শ্যাম বাজারের পাইকারি বিক্রেতা হাজী মো. সেলিম বলেন, ‘যাদের কাছে পিঁয়াজ রয়ে গেছে তারা তো ভালো পয়সা কামাবে এবার। কারণ রোজার আগে তারা খুব একটা সুযোগ পাচ্ছিল না। কিন্তু ভারত সে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এখন তো পিঁয়াজ বিক্রি হবে ডাবল ডামে।’

তবে এ ব্যবসায়ী মনে করেন, পিঁয়াজ বিক্রির জন্য এখন থেকে শুধু ভারতের বাজারের দিকে তাকিয়ে থাকলে দেশীয় বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। অন্য দেশ থেকে কীভাবে পিঁয়াজ আমদানি বাড়ানো যায় তা নিয়ে চিন্তা করা উচিৎ। কারণ শুধু ভারতের বাজারে দাম বাড়লেই আমাদের বাজারে আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দীনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের শুধুমাত্র ভারতের বাজারের ওপর নির্ভর করাটা কিছুটা বোকামিই হয়েছে। কারণ পিঁয়াজের প্রায় ৯০ শতাংশ চাহিদা মেটানো হয় আমদানি থেকে। কাজেই অমরা ভারত ছাড়াও অন্য দেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানির জন্য কাজ করছি।’

এই মুহূর্তে পিঁয়াজের দাম কতটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করাটা একটু কঠিনই হয়ে পড়বে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো। যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ না হারায়।’

উল্লেখ্য, রমজানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত খুচরা বাজারে পিঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে প্রায় ৬-৭ টাকা। এরই মধ্যে ভারত আবার তাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৬৭ শতাংশ কর আরোপ করেছে। যেখানে পিঁয়াজ রপ্তানিতে টনপ্রতি ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫০০ ডলার।

এখন ৩০০ ডলার থেকে ৫০০ ডলার হওয়ার কারণে আমদানি মূল্য বাড়বে। আর এর সাথে সাথে পিঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হবে এটাই স্বাভাবিক। ৩০০ ডলারে আমদানি করে খরচ পড়ছে ২৪-২৫ টাকা। এই খরচে পিঁয়াজ এনে ব্যবসায়ীরা এখন খুচরা বাজারে ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি করছে। বৃহস্পতিবার থেকেই এ পিঁয়াজ কিনতে হবে ৫০০ ডলারে। এখন আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আরেকবার সুযোগ পাবে দাম বাড়নোর। ৫০০ ডলার হলে প্রতিকেজি পিঁয়াজের আমাদানি মূল্য পড়বে ৩৫-৪০ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে রমজানের আগে পিঁয়াজের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে পারেনি তা উসুল করে নেবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এককভাবে ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানি হয় মোট আমদানির ৮০ শতাংশ। মাত্র ১০ শতাংশ মেটানো হয় দেশীয় উৎপাদন এবং বাকি ১০ শতাংশ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই