দলনির্বিশেষে তিন স্তরে পদোন্নতি আসছে

জনপ্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতির জন্য তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাদের গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই পদোন্নতি ঘোষণা করা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এতে বিভিন্ন সময়ে পদবঞ্চিত কর্মকর্তারা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। যে তিন স্তরের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে, সেগুলো হলো সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব ও যুগ্ম সচিব।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি পদোন্নতির জন্য তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাদেরে গোয়েন্দা প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। এই প্রতিবেদন যাচাবাছাই ও কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এরপর তালিকাটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে অনুমোদন হয়ে এলে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতির জন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ কর্মকর্তার গোয়েন্দা প্রতিবেদন যাচাই করতে দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে দক্ষ ও যোগ্য প্রায় ৬০ ভাগ কর্মকর্তার ইতিবাচক গোয়েন্দা প্রতিবেদন এসেছে। এ সংখ্যা প্রায় ৭০০। তবে তাদের অধিকাংশকে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

তবে এবার পদোন্নতির বেলায় দলীয় পরিচয়ের বিষয়টি বড় করে দেখা হচ্ছে না বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলসহ বিভিন্ন সরকারের সময়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এসএসবি বোর্ড পদোন্নতির সুপারিশ করেছিল। এ কারণে বহু মেধাবী কর্মকর্তাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হতে হয়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নেতিবাচক (দলীয় চিহ্নিত) তালিকায় যাদের নাম ছিল, তাদের পদোন্নতি না দেয়ার একটি ধারা এত দিন ধরে রেখেছিল এসএসবি বোর্ড।

এবারই প্রথম নেতিবাচক গোয়েন্দা প্রতিবেদন যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

সূত্র জানায়, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়েছে। যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব, উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব আর সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব- এ তিন স্তরে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে গঠিত এসএসবি কর্তৃক প্রতিবেদন পরীক্ষার পর পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তাদের নাম সুপারিশ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও এসএসবির সুপারিশসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে। এই মুহূর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আগামী সোমবার তিনি দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে।”

বিদেশ যাওয়ার আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, “তিন স্তরের পদোন্নতির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব পদোন্নতি নিয়ম অনুযায়ীই দেয়া হচ্ছে। যাদের যোগ্য মনে হবে, তাদেরই পদোন্নতি দেওয়া হবে।”

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তিন স্তরের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৮৪ ও ৮৫ ব্যাচের বাদ পড়া ১০০ কর্মকর্তাকে বিবেচনা করা হয়েছে। এর আগে ৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের তিন দফায় অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর পরও যারা বঞ্চিত হয়েছেন, তারা এবার পদোন্নতি পাচ্ছেন। ওই ব্যাচ থেকে প্রায় ১৬ জন কর্মকর্তা এখন সচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তাদের এর আগে এক দফা অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিতে ৮৬ ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তারা ছাড়াও নবম ও দশম বিসিএসের অতীতে বাদ পড়া কর্মকর্তারা স্থান পাবেন বলে জানা গেছে। এ সংখ্যা হলো ১৫০। উপসচিব পর্যায়ে পদোন্নতিতেও আনা হচ্ছে অতীতের বাদ পড়া প্রায় দেড় শ কর্মকর্তাকে।



মন্তব্য চালু নেই