সুপ্র আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশ এবং গণসংগীত অনুষ্ঠানে বক্তারা

দরিদ্র ও জনবান্ধব করনীতি ব্যবস্থা চালু এবং করের বিপরীতে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে

সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান-সুপ্র আয়োজিত ‘কর ন্যায্যতা নিশ্চিত কর, উন্নয়নের সোপান গড়’-শীর্ষক শ্রমিক সমাবেশ উপলক্ষ্যে অদ্য ২০ মার্চ ২০১৫, বিকাল ৩.০০ টা হতে ৫.০০ টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়াম, ঢাকায় একটি শ্রমিক সমাবেশ এবং গণসংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সভায় বক্তারা বলেন, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ, অবসরকালীন আর্থিক সুবিধা, শ্রম নিশ্চয়তা প্রভৃতি নিশ্চিত করাসহ করের বিপরীতে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এবং দরিদ্র ও জনবান্ধব করনীতি ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় সুপ্র’র জাতীয় পরিষদের সদস্য জনাব মাধব চন্দ্র দত্ত’র সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ই¯্রাফিল আলম এমপি, মাননীয় সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। শ্রমিক সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সুপ্র’র জাতীয় পরিষদ সদস্য এমএ ছালাম এবং ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সুপ্র’র নির্বাহী পরিষদের সদস্য জনাব ডেইজি আহমেদ। এছাড়া অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাধীণ বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন এর সভাপতি জনাব শামীমা নাসরিন, বিভিন্ন এনজিও, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ, বাজেট এলায়েন্স গ্রুপের নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ ও সুপ্র সচিবালয়ের সদস্যবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব ই¯্রফিল আলম এমপি বলেন, আমাদের কর ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ত্রুটি মুক্ত নয়। যদি কর ব্যবস্থা পর্যালোচনার মাধ্যমে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় তবে সরকারের রাজস্ব আয় তিন থেকে চার গুন বৃদ্ধি করা সম্ভব। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন ৮০% ব্যবসায়ী ট্যাক্স দেওয়ার যোগ্য কিন্তু তারা ট্যাক্স দেন না। ”নো ট্যাক্স নো সিভিলাইজেশন” এই উক্তি উচ্চারনের মাধমে তিনি বলেন এভাবে চলতে থাকলে দেশ চলবে কি ভাবে। তিনি উল্লেখ করেন অনেক জন প্রতিনিধি কোন ট্যাক্স দেন না। তিনি বলেন শ্রমিক’রা পুষ্টি হীনতায় ভুগছেন যা উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। শ্রমিকদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন এই ধরনের অব্যস্থাপনা পরিহার করার জন্য সুশাসনের পয়োজন, জনগনকে সচেতন করতে হবে। ট্যাক্স আদায় সার্বজনীন করতে হলে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে এর প্রচারনা চালাতে হবে।

সভায় বক্তারা আরও বলেন,বর্তমান সরকার সুবিধা বঞ্চিত কৃষক ও শ্রমিকদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এবারের বাজেট বক্তৃতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী সে কথা পূর্ণব্যক্ত করেছেন। গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নূন্যতম মজুরী বৃদ্ধি করে ৫,৩০০ টাকা নির্ধারণ করলেও এখনো অনেক কারখানা মালিক এর শতভাগ বাস্তবায়ন করেননি!! অথচ সরকার তৈরী পোশাক শিল্পখাতের রপ্তানীর উপর অগ্রিম আয়কর ০.৮০% থেকে কমিয়ে ০.৩০% , ফ্লাক্স ফাইবার ও কৃত্রিম স্টাপল ফাইবার এর আমদানি শুল্ক যথাক্রমে ১০% হ্রাস করে ৫% এবং ৫% থেকে হ্রাস করে ৩% নির্ধারণ করেছে। এসকল সুবিধা মালিক পক্ষকে বেশী মুনাফা ভোগী করলেও এর কোন সুফল শ্রমিকেরা পায়নি! অন্যদিকে বিগত দিনে সরকার দেশের ৪টি গার্মেন্টস অধ্যুষিত এলাকায় পোশাক ফ্যাক্টরীতে শিশু যতœ ও মাতৃ ক্লিনিক স্থাপনের ঘোষণা দিলেও এখনো তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় নি!! এ চিত্র যে শুধু তৈরী পোশাক খাতেই নয় এটি শ্রম খাতের সর্বত্র বিদ্যমান।

সুপ্র মনে করে, এদেশের সাধারন মানুষ প্রতিনিয়ত কর বা ভ্যাট প্রদান করলেও সাংবিধানিক অধিকার বলে তারা রাষ্ট্রের কাছ থেকে সে তুলনায় প্রয়োজনীয় মৌলিক সুবিধা, চাহিদা ও সেবা পাচ্ছে না। অন্যদিকে সমাজের অপেক্ষাকৃত সম্পদশালীরা রাষ্ট্রকে যেমন প্রতিনিয়ত কর ফাঁকি দিচ্ছে তেমনি সর্বাধিক রাষ্ট্রীয় সুবিধাও ভোগ করছে! এ কারনে রাষ্ট্র জনগনের কাছে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সেবা সঠিকভাবে ও সময়মত পৌঁছে দিতে পারছে না। ফলে সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শ্রমিক সমাবেশ শেষে গণসঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুপ্র।

আসন্ন বাজেট ও ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে সামনে রেখে আজকের শ্রমিক সমাবেশে তৃণমূলের দাবি-

১. করের বিপরীতে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে;

২. প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে;

৩. নিত্য প্রয়োজনীয় সেবা ও দ্রব্যের উপর মূসক বা ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে;

৪. দরিদ্র ও জনবান্ধব করনীতি ব্যবস্থা চালু করতে হবে;

৫. প্রয়োজনে দরিদ্র প্রবন এলাকাকে পরোক্ষ কর বা ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখতে হবে;

৬. বিলাসজাত দ্রব্যের উপর অপেক্ষাকৃত অধিক হারে কর আরোপ করতে হবে;

৭. শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ,অবসরকালীন আর্থিক সুবিধা, শ্রম নিশ্চয়তা প্রভৃতি নিশ্চিত করতে হবে;

৮. কর আহরনে অনলাইন ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে;

৯. কর প্রশাসনকে আরো বিকেন্দ্রীকরণ ও আধুনিকায়ন করতে হবে;

১০. প্রত্যক্ষ কর নির্ভর বাজেট ঘোষনা করতে হবে;

কর নীতিমালা প্রণয়ন, কর আইন সংশোধন বিষয়ে তৃনমূল মানুষের মতামতের গুরুত্ব অনুধাবন করত: তা অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই