দরিদ্রদের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু
দীপক চৌধুরী : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষকে ভালবাসতেন হৃদয় দিয়ে, দরিদ্রমানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অতি সহজে মানুষের হৃদমন্দিরের কাছে যাওয়ার কারণেই দলকে সুসংগঠিত করতে পেরেছিলেন। আর এ কারণেই ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ডাকে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গ্রন্থ’, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ বিশ্লেষণ করে জানা যায়- হাজার বছর ধরে চলে আসা অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই বাংলায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কোনো স্থান হতে পারে না, শোষকের স্থান হতে পারে না- এমনটাই মনে করতেন তিনি।
আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন দেশের জন্য, দলের জন্য। দলকে সংগঠিত করার আগে বঙ্গবন্ধু এ ভূখ-ের গ্রামে-গঞ্জে জেলা শহরে সর্বত্র বাইসাইকেলে চড়ে ঘুরেছেন। বিভিন্ন গ্রাম গ্রামান্তর ঘুরে দেখার পাশাপাশি মানুষের খোঁজ নিতেন বঙ্গবন্ধু। মানুষের দুঃখ কষ্টের খোঁজ নিতেন। অসুস্থ দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে দেখতে ছুটে যেতেন হাসপাতালে। দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যদিয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব ও ভালবাসার উদারতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেসার কথা, যিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু এ ভূখ-ের মানুষকে গভীরভাবে চিনতে ও জানতে পেরেছিলেন তাদের সঙ্গে মিশে, চাহিদা শুনে। তাদের অভাব-অভিযোগ-আনন্দ তাকে ভাবিয়ে তুলতো। সাধারণ মানুষের কথা থেকেই এদেশের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন তিনি। সংগঠনকে সমৃদ্ধ করতে মানুষের সঙ্গে কথা বলবার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় তিনি ওয়াপদা রেস্টহাউজ, সার্কিট হাউজে কিংবা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে রাত্রিযাপন করতেন।
শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনীতির পুরোটা সময় দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সব সময়ই এ দুটো বিষয় নিয়ে ছিলেন সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু বুঝতেন-পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মূল কথা।
মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া সেই নেতা কীভাবে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন, জাতির জনকের সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন এর অনেককিছু আমরা জানি। কিন্তু ১৯৭১ সালে মার্চের সেই ভয়াবহ আক্রমণ বাঙালির জীবনে আরেক অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের মনে বাঙালিরা সব সময়ই ছিল নীচু শ্রেণির; যাদের ভাষা-সংস্কৃতি থেকে জীবনাচরণ সবই ছিল ‘অপাকিস্তানি’। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তা অনুমান করতো এবং বুঝতে পেরে অপারেশন সার্চলাইট শুরু করেছিল। যার ফলে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয় বাংলাদেশে।
অপারেশন সার্চলাইটের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বেশ আগেই, একাত্তরের ফেব্রুয়ারি মাসে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত সাংবাদিক রবার্ট পেইনের ম্যাসাকার বইতে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এক সামরিক বৈঠকে ইয়াহিয়া খান বাঙালিদের খতম করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই সেনা বৈঠকে ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, ‘ওদের ৩০ লাখ মেরে ফেলো। বাদবাকিরা আমাদের হাত থেকেই খেয়ে বেঁচে থাকবে (কিল থ্রি মিলিয়ন অব দেম, অ্যান্ড দ্য রেস্ট উইল ইট আউট অব আওয়ার হ্যান্ডস)।
এরপরও কী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকানো গেছে, বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য এনেছে বাঙালি বীরেরা।
মন্তব্য চালু নেই