দেখার কী কেউ নেই?

থেমে নেই সাতক্ষীরার কলারোয়ায় অশ্লীল ড্যান্স, জুয়া আর নেশার আসরের কথিত সার্কাস

রাত প্রায় পৌনে ১২টা। অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ও ৪/৫টি প্রাইভেটকার-মাইক্রো হুহু করে চলে গেলো সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার গয়ড়া বাজারের মধ্য দিয়ে বয়ারডাঙ্গার দিকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা এমনটাই দেখে জানালেন, গভীর রাতে নগদ টাকার জুয়া খেলা, মদ-ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের অবাধ আসর আর অশ্লীল ড্যান্সের সমাহারে সজ্জিত বয়ারডাঙ্গার কথিত সার্কাসে গেলেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ওই সকল মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার আরোহীরা। এমনকি সীমান্তের চোরাপথ গলিয়ে ভারত থেকেও গভীররাতের এ জঘণ্য আসরে যোগ দিচ্ছে কতিপয় ভারতীয় জুয়ারীরা। ১’শ থেকে দেড়শ’ টাকার টিকিটের বিনিময়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত যতসামান্য সার্কাসের খেলাধুলা ও বিচিত্রা অনুষ্ঠান হলেও অন্ধকার গভীর হলেই মধ্যরাতে কথিত বিচিত্রাও আরো গভীর হয়ে ওঠে। অর্ধনগ্ন নয় বরং প্রায় উলঙ্গ ড্যান্সে মশগুল হয়ে ওঠে যুবক থেকে মধ্য বয়সীরা। আর মদ-ফেনসিডিলসহ মাদকের নেশা তো ওপেন ব্যাপারে পরিণত হয়। পাশাপাশি চলে নগদ টাকার ওয়ানটেন, চরকা ঘুরানো খেলাসহ বিভিন্ন জুয়ার জমজমাট আসর। আর দিনের আলোয় ভ্যান ও অন্য যানবাহন যোগে লাকী কুপনের নামে ২০টাকার টিকিট বিক্রি করে সন্ধ্যায় হয় তার লটারি খেলা। কথিত সার্কাসে লাকীকূপণের নামে লটারির টিকিট বিক্রয় ও পুরষ্কার বিতরণ, নির্ধারিত টিকিটের বিনিময়ে বিচিত্রা অনুষ্ঠানসহ সার্কাস পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে সরকারি কোন অনুমোদন দৃশ্যমান নয়। আর সেই অনুমোদন নিয়ে চলছে ধু¤্রজাল। এলাকাবাসীসহ সেখানকার ছোট থেকে বড় প্রায় সকলেরই এ বিষয়টি জানা থাকলেও অজ্ঞাত ও রহস্যময় কারণে এই অনৈতিক, অসামাজিক বিষয়ে কিছুই জানা নেই সংশ্লিষ্ট মহলের। এলাকাবাসীর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের মুখেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। অশ্লীল ড্যান্স, জুয়ার আসর আর নেশার আড্ডার মধ্য দিয়ে চলছে কলারোয়ার বয়ারডাঙ্গায় দি কিং স্টার সার্কাস। যতসামান্য ও নামেমাত্র সার্কাসের অন্তরালে গভীর রাতে সেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে বেশ কয়েকজন মেয়েদের দিয়ে অর্ধনগ্ন নয় বরং প্রায় উলঙ্গ অশ্লীল ড্যান্স। রয়েছে ওয়ানটেন, চরকাঘুরানোসহ বিভিন্ন নামীয় নগদ টাকার জুয়ার আসর। বাদ যাচ্ছে না মদ, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ নানান নেশার আড্ডা। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে এমনটাই জানালেন। উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের বয়ারডাঙ্গা প্রাইমারী স্কুলের পার্শ্ববর্তী একটি ফসলী মাঠে বিশাল প্যান্ডেল দিয়ে চলছে এমনই অপসংস্কৃতিমূলক, অনৈতিক, বিবেক বর্জিত, ঘৃণ্য, অপকর্মমূলক কর্মকান্ড। কিন্তু দেখার যেন কেউ-ই নেই। গত কয়েকদিন ধরে সেখানে প্রতিরাতে এমন অবস্থা চলছে। জানা গেছে, গত কয়েকমাস আগে সেখানে বসে ঢাকার দোহারের জনৈক সেলিম রেজার মালিকানাধীন দি কিং স্টার সার্কাসের প্যান্ডেল। সেই সময় ২/৪দিন একটি হাতি নিয়ে নামেমাত্র লোকদেখানো সার্কাস শুরুর পর প্রায় নগ্ন ড্যান্স, জুয়া ও নেশার আসর বসায় এলাকাবাসীর চাপে ও দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা বন্ধ হয়ে যায়। কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও টিনঘেরা সার্কাসের প্যান্ডেল উঠেনি। সম্প্রতি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আবারো নতুন উদ্যোমে শুরু হয় সেই সার্কাসের কার্যক্রম। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সার্কানে নেই সেই হাতি। বিকেল থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত সার্কাসের নামে লোকদেখানো ও নামে মাত্র কয়েকজন ব্যক্তিদের দিয়ে শারীরিক কসরত-জাতীয় খেলাধুলা ইত্যাদি প্রদর্শিত হচ্ছে। কোন পশু-পাখি নেই। তবে রাত একটু গভীর হলেই শুরু হচ্ছে সার্কাসের আসল খেলা। স্থানীয় অনেকে জানালেন, ‘সত্যিকারের হাতি না থাকলেও রাত ১২টার পরে হাতির মতো মোটাসোটা কয়েকজন মেয়েরা অর্ধনগ্ন নয় বরং প্রায়-নগ্ন ও প্রায় উলঙ্গ হয়ে ড্যান্স করছে।’ এমনকি টাকার বিনিময়ে ওই সকল মেয়েদের শরীরে স্পর্শকাতার স্থানে হাত দিতেও দেয়া হচ্ছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানালেন। এই অশ্লীল ড্যান্সেই থেমে নেই সেখানকার পরিবেশ। পাশের টেন্টেই চলছে ওয়ানটেন নামক জুয়া সহ বিভিন্ন নামীয় নগদ টাকার ছড়াছড়ির জুয়ার আসর। জুয়ায় মশগুল ব্যক্তিরা শুধু নয় পাশের অনেকেই তখন থাকে নেশার মহাসাগরে। রীতিমত মদ, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মরননেশার আড্ডাখানায় সেখানে প্রায় প্রকাশ্যে বিকিকিনি হচ্ছে এগুলো। এলাকার উঠতি যুবকসহ অনেকেই মেতে উঠছে এ নেশায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়ারীরা রীতিমত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল যোগে সেখানে এসে জুয়া ও নেশার আড্ডায় যোগ দিচ্ছে। এমনকি অবৈধপথে ভারত থেকে এসেও অনেক ভারতীয়রা ওই আড্ডায় মত্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন কেউ কেউ। সার্কাসের বেশ কয়েকটি ঊচ্চ শব্দের মাইকের কারণে গভীর রাতে গ্রামের সাধারণ মানুষ যেমন বিরক্ত হচ্ছে তেমনি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই সার্কাসকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। অতিসম্প্রতি স্থানীয় কয়েক যুবক সার্কাসের সামনে স্থানীয় এক আ’লীগ নেতাকে মদের বোতল ও লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে। এদিকে, ওই সার্কাসকে কেন্দ্র করে টাকা চালাচালি হচ্ছে বলে অনেকে জানালেন। কিছু অসাধু ব্যক্তি ও স্বার্থনেষী মহল সার্কাসের সুস্পষ্ট দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনৈতিক ভাবে টাকা পকেটস্থ করছে বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয় সচেতনমহল ও ইউনিয়নবাসী অবিলম্বে ওই সার্কাস বন্ধ করে দেয়ার জন্য ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ ঊদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। সাধারণ মানুষের অভিমত ‘দেখার কী কেউ নেই?’ কথিত ওই সার্কাসের অনুমোদন ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিয়য়ে জানতে চাইলে কলারোয়ার ইউএনও অনুপ কুমার তালুকদার জানান, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, অনুমোদনের বিষয়টি ডিসি স্যারের এখতিয়ার। কলারোয়া থানার ওসি মুন্সি মোফাজ্জেল হোসেন কনক জানান, সার্কাসে অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে জানা নেই, ডিসি অফিসের অনুমোদনকৃত কোন কাগজপত্র এখনো পায়নি। অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জানান, আপনাদের উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলুন। উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে মোবাইল করলে তার নাম্বার বিজি পাওয়া যায়। বয়ারডাঙ্গা সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় বিজিবির অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে সাতক্ষীরা ৩৮বিজিবি ব্যাটালিয়নের অপস অফিসার জানান, জেলা প্রশাসক অফিস থেকে কোন অনুমোদনের পেপারস এসেছে কিনা জানতে হবে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, যদি অনুমোদন দেয়াও হয়ে থাকে তবে অবিলম্বে সেই অনুমোদন বাতিল করে গ্রাম্যসমাজকে বাচাঁতে প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিৎ। দিনের আলোয় কিংবা সন্ধ্যারাতে নয় প্রয়োজনে রাত ১২টার পরে পরিচয় গোপন রেখে সরেজমিন তদন্ত করে সত্যতা দেখতে সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।



মন্তব্য চালু নেই