তিস্তা চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গ মানবে না

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তি করার চেষ্টা করছে বলে লোকসভায় অভিযোগ এনেছে ক্ষমতাসীন দলের এক সাংসদ। সোমবার (২৭ মার্চ) ভারতের লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায় এ অভিযোগ করেন।

তৃণমূলের এ সাংসদ অভিযোগ করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে না জানিয়েই এ চুক্তির চেষ্টা হচ্ছে। এ চুক্তির বিষয়ে কেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হচ্ছে না। সৌগত রায় আরো বলেন, রাজ্য সরকারকে কিছু না জানিয়ে যদি তিস্তা চুক্তির শর্তাবলি চূড়ান্ত হয়; তাহলে তৃণমূল তা মানবে না।

সৌগত রায় জিরো আওয়ারে বিষয়টির প্রতি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পশ্চিম বাংলার স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দেয়া যে রাজ্য সরকার মানবে না, তা তিনি জানিয়ে দেন। এসময় তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে, তা যদি সত্য হয়, সে ক্ষেত্রে এই চুক্তিতে বাংলার সরকার অনুমোদন দেবে না।

তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পানি বণ্টন ইস্যুতে দ্বৈত নীতি অবলম্বন করছে সরকার। পাকিস্তানকে যখন সিন্ধু নদের চুক্তির বিষয়ে পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের কথা বলছে ভারত, তখন তিস্তা চুক্তির বিষয়ে চেষ্টা করছে সরকার। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সিন্ধু নদের পানি চুক্তি রয়েছে। উরিতে জঙ্গি হামলার পর থেকে ভারত সরকার ওই চুক্তি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, রক্ত আর পানি এক সঙ্গে বইতে পারে না।

সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী যতটা পানি পাকিস্তানে যাওয়ার কথা, তার চেয়ে একটুও বেশি যাতে পাকিস্তান না পায়, ভারত সরকার তা নিশ্চিত করতে চাইছে। পাকিস্তানের আপত্তি অগ্রাহ্য করে চন্দ্রভাগার উপর একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও ভারত তৈরি করছে।

ভারতের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পাকিস্তানকে অতিরিক্ত পানি দেয়া হবে না, ভারত এমনই নীতি নিয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত উল্টো নীতি নিচ্ছে বলে সৌগত রায় অভিযোগ করেছেন। দেশের ক্ষতি করে বাংলাদেশকে পানি দেয়ার চেষ্টা মানা হবে না বলে তিনি সংসদে জানিয়েছেন।

এর আগে গত ২৩ মার্চ দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল এবিপি আনন্দকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ওই সময় তিনি বলেন, কেন্দ্র কিছু না জানালেও শিগগিরই তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে বলে শুনেছি।

মমতা বলেন, কোন শর্তে এ চুক্তি হচ্ছে সে বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্র থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। তবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য না জানা পর্যন্ত তিনি চুক্তিতে অনুমোদন দেবেন না বলেও তিনি জানান।

এর আগেও বিজেপি সরকারের বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করেছিল, মমতাকে এড়িয়েই তিস্তা চুক্তি করবেন মোদি। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য সরকার সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে চুক্তি করতে হলে, রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়। তিস্তায় মমতার না হওয়ায় এতোদিন ধরে ঝুলে আছে চুক্তিটি।



মন্তব্য চালু নেই