তিস্তায় সর্বোচ্চ পানির রেকর্ড

গত তিন মাস পানি শূন্যতায় ভুগছে উত্তরের প্রমত্তা তিস্তা নদী। এই তিন মাসের মধ্যে আজই সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ পানি এসেছে তিস্তায়।

এত দিন কোনোরকম লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোড্ডিমারী ইউনিয়নে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম দোয়ানী তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকা।

তিস্তা ব্যারাজের উজানে স্বাভাবিক পানির ধারা না থাকায় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে ব্যারাজের ভাটি অঞ্চল। চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তিস্তায় পানিশূন্যতা চলছেই।

আর সেই প্রমত্তা তিস্তায় পানির ধারা স্বাভাবিক করার দাবিতে সিপিবি-বাসদসহ বাম মোর্চার রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। এর মধ্যে তিস্তা অভিমুখে রাজনৈতিক দলগুলোর লংমার্চ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

এর মধ্যে কয়েকবার ক্ষমতার স্বাদ নেওয়া বিএনপিও তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে। গত ১৯ এপ্রিল তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প এলাকায় সিপিবি-বাসদের কেন্দ্রীয় নেতাদের লংমার্চ কর্মসূচি শেষে এক সমাবেশের পর থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ কিছুটা উন্নতির দিকে মোড় নেয়।

ব্যারাজ এলাকায় ২৫০ থেকে ৩৫০ কিউসেকের পানির প্রবাহ ওপরের দিকে বাড়তে থাকে। সিপিবি-বাসদের লংমার্চ কর্মসূচির চার দিন পর ২৩ এপ্রিল বিএনপির লংমার্চ তিস্তা হ্যালিপ্যাড মাঠে পৌঁছানোর আগেই ব্যারাজের উজানে প্রায় প্রমত্তা তিস্তা টইটম্বুর হয়ে ওঠে।

এ সময়ের পানির প্রবাহের পরিসংখ্যানের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়ে দাঁড়ায় ২২ এপ্রিল। এদিন ৩ হাজার ৬ কিউসেক পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। কিন্তু ২৩ এপ্রিল তিস্তা হ্যালিপ্যাড মাঠে যখন বিএনপির লংমার্চ চলছিল তখন ব্যারাজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ১ হাজার ২৪২ কিউসেক।

চলতি সপ্তাহের শনিবার পানি প্রবাহ ছিল ১ হাজার ৩৬৬ কিউসেক, রোববার ছিল ১ হাজার ৯৫৫ কিউসেক।

এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার পানি মাপা হয়েছে ৩ হাজার ২৬০ কিউসেক পানি। গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড পানি এসেছে আজ মঙ্গলবার।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ‘আমরা তিস্তার ন্যায্য হিস্যার পানি চাই। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার আন্তরিকভাবে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে প্রমত্তা তিস্তার পানির প্রবাহ স্বাভাবিক করবে এটি বাংলাদেশের তিস্তা পাড়ের গণমানুষের প্রত্যাশা।’

তিস্তা পাড়ের বোরো চাষি আসাদুল ইসলাম ও সুখরঞ্জন রায় রাইজিংবিডিবিডিকে বলেন, ‘এবার পানির অভাবে সব জমি চাষ করতে পারিনি। যেটুকু আবাদ করেছি সঠিকভাবে চাষ করতে না পারায় খেতের ধানও সুবিধামতো ফলন হয়নি।’

তাদের মতো একই কথা খালিশা চাপানি এলাকার চাষি শাহ আলম মিয়ার।

‘তিস্তাপুত্র সামাজিক আন্দোলন’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক সবুজ খন্দকার। তিনি তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ কমার পেছনের কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘১৯৭৭ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টনের যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন পানি পাওয়ার গ্যারান্টি ক্লজ এবং মতবিরোধ হলে আরবিট্রেশনের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ১৯৯৭ সালে গঙ্গার পানি বণ্টনের যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে গ্যারান্টি ক্লজ ও আরবিট্রেশন ক্লজ দুটি ভারত তুলে দিয়েছে।’

সবুজ খন্দকার বলেন, ‘এর পরও আন্তর্জাতিক নদী ব্যবহার যে নীতিমালা রয়েছে, তাতেও অভিন্ন নদীতে বাংলাদেশের অধিকারের স্বীকৃতি মেলে।’

ডালিয়া দোয়ানী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পানি কমা কিংবা বাড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে আটকে আছে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু তিস্তার উজান ভারতে এবং উৎপত্তিও সেখানে। তবে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আমরা পাচ্ছি না। যেটুকু পানি পাচ্ছি তা দিয়ে সেচের চাহিদাই তো মিটছে না, সেখানে নদীতে পানিপ্রবাহ কোথা থেকে থাকবে। তিস্তা নদীকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই ১০ হাজার কিউসেক পানির প্রবাহ রাখতে হবে।’



মন্তব্য চালু নেই