তিনি জানতেন না স্বাধীনতার সাথে একদিন বেঈমানি করবে এদেশের ৯০শতাংশ লোক
ভারতের সীমান্তবর্তী গিদালদহ স্টেশন সংলগ্ন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সেকশনকে ফল-ইন করিয়েছেন ৬নং সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন দেলোয়ার।
-তোমাদের মধ্যে কে এই কাজ করেছে। স্বীকার কর। স্বীকার করলে মাফ করে দেব।
আর যদি স্বীকার না কর, পুরো সেকশনকে শুট করব।
সবাই চুপ। মাথা নিচু করে আছে সবাই।
-তাড়াতাড়ি বল। গর্জে ওঠেন ক্যাপ্টেন দেলোয়ার।
-আমার কাছে সংবাদ আছে, তোমরা পাকসেনাদের সেই দালালকে তার বাড়িতে ধরার পরও তাকে ছেড়ে দিয়েছ। কেন ছেড়ে দিয়েছ? স্বীকার করলে ক্ষমা করে দেব। রাগে কাঁপতে থাকেন ক্যাপ্টেন দেলোয়ার।
ভয়ে মাথা নিচু করে লাইন ছেড়ে বেড়িয়ে আসে একজন মুক্তিযোদ্ধা।
-স্যার, আমি ছেড়ে দিয়েছি।
-কেন?
-স্যার, টাকার বিনিময়ে।
-কত টাকা।
-গুনিনি স্যার। এক ব্রিফকেস ভর্তি টাকা এবং বড় এক পোটলা সোনাদানা গয়না।
-তোমার সাথে আর কে কে ছিল?
-আরও তিনজন স্যার।
-তাদের দেখিয়ে দাও।
তার আগেই লাইন থেকে বেড়িয়ে আসে সেই তিনজন। ক্যাপ্টেন দেলোয়ার, এই চারজনকে দাঁড় করিয়ে বাকিদের ফল আউট করিয়ে দিলেন।
-তোমরা স্বীকার করছ তোমাদের অপরাধ?
-হ্যাঁ স্যার। আমরা দোষী। জঘন্য অপরাধ করেছি।
-তোমরা কি জান, ঐ অপরাধী তার দলবল এনে সবাইকে হত্যা করতে পারত।
-হ্যাঁ স্যার।
-তোমরা কিছু খাবে?
-না স্যার।
মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার সাথে বেঈমানি এবং বাণিজ্য করার অপরাধে তাদের চোখ বেধে রেল ব্রিজের উপর দাঁড় করিয়ে গুলি করার নির্দেশ দিলেন ক্যাপ্টেন দেলোয়ার।
নদীর পানির স্রোতে ভেসে গেল চার জনের লাশ।
ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন দেলোয়ার। তিনি জানতেন না মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার সাথে একদিন বেঈমানি করবে এদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ লোক। বাণিজ্য করবে আরও বেশি।
হতভাগা চারজন কোনদিন জানতে পারবে না, এদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ লোক হবে তাদের যোগ্য উত্তরসূরি।
লেখাটি মাহবুব কবির মিলন এর ফেইসবুক পেজ থেকে নেওয়া
মন্তব্য চালু নেই