দৈনন্দিন জীবনে রসুন :

তাড়াতাড়ি রসুন ছেলার তরিকা (ভিডিও)

আমাদের দৈনন্দিন রান্নার একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুসংগ হল রসুন। রসুন রান্না করা খাবারের স্বাদই শুধু বাড়ায় না, পুষ্টিমানে ভরপুর রসুন। কিন্তু রসুন ছেলাটা বেশ কষ্টসাধ্য। উন্নত বিশ্বে রান্নাঘরে নানাবিধ যন্ত্রপাতির আধিক্য থাকলেও আমাদের দেশে সেগুলো নেই। তবে কিছু কৌশল প্রয়োগ করলে খুব তাড়াতাডি রসুন ছেলা যায়।

 

রসুনের অজানা কিছু গুনাগুন
রসুন এক দারুণ পেনিসিলিন জাতীয় মসলা। আমরা নিত্যদিন বিভিন্ন তরকারীতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি এই মসলাটি। কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানি না এর গুণাগুণের মাত্রা কতোখানি। আপনি অবাক হয়ে যাবেন যদি জানেন যে, এই রসুন মানুষের দেহে এমন কোনো রোগ বালাই নেই যার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে না।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ ওয়েবসাইট ‘মেডলাইন প্লাস’ জানিয়েছে, বিশ্বের অসংখ্য মানুষ কোলন, রেক্টাল, পাকস্থলী, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট, মূত্রথলি ও ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুন ব্যবহার করে থাকেন।
মিনারেলস সমৃদ্ধ মসলা রসুন। এর পরিমাণ এতো বেশি যে, কারো কারো কাছে এটি মিনারেলসের মিনি স্টোর হিসেবে পরিচিত। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফসফরাস, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাভিন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও ভিটামিন ‘সি’।
এটি চমৎকার অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টি-ফাংগাল, অ্যান্টি-ভাইরাল হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের বিভিন্ন রোগবালাই থেকে দূরে রাখে।

১. প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক
রসুনে থাকা ভিটামিন ‘সি’র কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। কেননা এই ভিটামিন স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। একই সঙ্গে তা রক্তনালি নমনীয় রাখে।

২. রক্ত চলাচলে সহায়তা
রসুনে ‘অ্যাজোইন’ নামক এক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। এ পদার্থ নির্বিঘ্নে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। পাশাপাশি রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে। একই সঙ্গে রক্তের কোলেস্টরেল কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

৩. হরমোন নিঃসরণ
রসুনে থাকা সালফার আমাদের শরীরের নানা হরমোন নিঃসরণ করতে সহায়তা করে।

৪. হৃদরোগজনিত সমস্যা
হৃদজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভীষণ কার্যকর এ ভেষজ। ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণিত, এটি উচ্চ রক্তচাপও কমিয়ে দেয়।

৫. রোগজীবাণু ধ্বংস
রসুনে থাকা ‘অ্যালিসিন’ পদার্থ ক্ষত সারাতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া পদার্থটি যক্ষা, আমাশয়, টাইফয়েড প্রভৃতির রোগজীবাণু ধ্বংস করে।

৬. ঠাণ্ডা কমায়
ঠাণ্ডা লাগা, গলা বসে যাওয়া কিংবা গলাব্যথা, মাথাব্যথা, গেঁটে বাত, হাঁপানি, ব্রংকাইটিসের সমস্যায় রসুন চিবিয়ে খেলে এ ধরনের সমস্যাগুলো একেবারেই থাকে না।

৭. ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
ডায়াবেটিকদের জন্য উপকারী মসলা এই রসুন। এটি ব্লাড সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৮. হজমের সমস্যা দূর করে
লিভারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং হজমের সমস্যা দূর করে এ ঔষধি। অ্যালার্জি সারিয়ে তুলতে এর ভূমিকা সুবিদিত।

৯. ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনে
অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, ফুড পয়জনিং নিবারণ করে এ মসলা।

১০. পুরুষের সুস্থ স্পার্ম তৈরি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি মিলিলিটার শুক্রাণুতে ২০ মিলিয়নের কম স্পার্ম থাকলে যেকোনো পুরুষ অনুর্বর হতে পারেন। বাজে খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, অ্যালকোহল, অনিয়ন্ত্রিত জীবন, ব্যায়ামে অনীহা প্রভৃতি কারণে দিন দিন অনুর্বরতা বাড়ছে। এক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক মসলা রসুন। কেননা সুস্থ স্পার্ম তৈরিতে রসুনের জুড়ি মেলা ভার।

রসুন সেবনে সতর্কতা
রান্নার উপকরন হিসেবে রসুনের ব্যবহার আবহমান কাল থেকেই। শুধু রান্নায় স্বাদের তারতম্য আনার জন্য নয়, রসুনের পুষ্টিগুণও রসুনকে পৌঁছে দিয়েছে উপাদেয় মসলার তালিকায়। তাই রান্নার অনুষঙ্গের পাশাপাশি রসুন স্বাস্থ্য ভাল রাখার মন্ত্র হিসেবেও কাজ করছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ১৭ টি এমাইনো এসিড ময়শ্চার, প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেল, ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট। ভিটামিন ও মিনারেলের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, থিয়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, এবং আয়োডিন, সালফার এবং ফ্লোরিনও আছে অল্প পরিমাণে।

একটি মাঝারি সাইজের রসুনে ১ লাখ ইউনিট পেনিসিলিনের সমান অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি অ্যামিবিক ডিসেনট্রি নির্মূলের ক্ষেত্রে রসুন বেশ কার্যকরী। তাই রসুন স্বাস্থ্যের জন্য কত উপকারী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কিন্তু আপনি জানেন কি, এই অতি উপকারী রসুনেরও আছে নানা অপকারিতা? হ্যাঁ, ঠিক মতন বা সঠিক উপায়ে রসুন সেবন না করলে তা ডেকে আনতে পারে ভয়ানক বিপদ। এমনকি তা ডেকে আনতে পারে আপনার জন্য স্বাস্থ্য হানির ঝুঁকিও। আসুন, জেনে নেয়া যাক রসুন সেবনের সতর্কতা সম্পর্কে।

-যাদের শরীর থেকে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না, অতিরিক্ত রসুন খাওয়া তাদের জন্য বিপজ্জনক। কারণ, রসুন রক্তের জমাট বাঁধার ক্রিয়াকে বাধা প্রদান করে। ফলে রক্তপাত বন্ধ হতে অসুবিধা হতে পারে।

-কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। অতিরিক্ত রসুন শরীরে এলার্জি ঘটাতে পারে। যাদের নানান রকম এলারজিক সমস্যা আছে তারা অতিরিক্ত রসুন না খাওয়াই উত্তম।

-রসুন খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে অস্বস্তি বোধ করলে রসুন খাওয়া বন্ধ রাখুন।

-শিশুকে দুগ্ধদানকারী মায়েদের রসুন না খাওয়াই ভালো। কারণ রসুন খাওয়ার ফলে তা মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশুর পাকস্থলীতে ঢুকে শিশুর পেট ব্যথার কারণ ঘটাতে পারে।

-কাঁচা রসুন বেশি খাওয়া উচিত নয়। বেশি খেলে অনেক সময় মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়তে দেখা যায়।

– কাঁচা রসুন সেবনে অনেকের চামড়ায় চুলকানি দেখা দিতে পারে।

লক্ষ্য রাখুন
রসুন নরম হয়ে গেলে বা সবুজ রঙ দেখা দিলে সেই রসুন কিনবেন না। কারণ এসব রসুনের কার্যগুন নষ্ট হয়ে যায়। কেনার সময় মাঝারি আকারের রসুন কিনুন।

 

তাড়াতাড়ি রসুন ছেলার তরিকা :



মন্তব্য চালু নেই