ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী আব্দুর রহমানের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসন্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শান্তির নগরী সুপ্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় অঙ্গীকারে সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন এর মনোনীত এবং আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখসহ সকল পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আলহাজ আব্দুর রহমান এর নির্বাচনী ইশতেহার
মেয়র প্রার্থী আব্দুর রহমানের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি :
১. শুধু দুর্নীতি দমন নয়, দুর্নীতি মূলোৎপাটন কর্মসূচি গ্রহণ।
২. ভেজাল মুক্ত খাদ্যও ইনসাফপূর্ণ বাজার নিয়ন্ত্রন।
৩. নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন।
৪. শ্রমের মর্যাদা ও শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা।
৫. রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ীর নিবন্ধন (রেজিষ্ট্রেশন) ফি- মওকুফ।
৬. সি.এন.জি লাইসেন্স ফি অর্ধেক করন।
৭. বাসা ভাড়া সহনশীলাবস্থায় আনয়নের জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স ৩০% কমানো।
৮. ব্যবসায়িক কর্মকা- গতিশীল ও নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. হকারদের স্থায়ী বরাদ্দ এবং ছিন্নমূল ও ভ্রাম্যমান হকারদের পরিচয়পত্র প্রদান।
১০. পথিক এবং ভ্রাম্যমান মানুষের জন্য নতুন ২০০০ স্যানিটারী টয়লেট নির্মাণ করা।
১১. গরীব-দুঃখী অসহায় ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যাংক স্থাপন।
১২. ক্ষুদে টোকাইদের পূনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ।
১৩. ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে টেন্ডার হবে কিন্তু টেন্ডারবাজী করতে দেয়া হবে না।
১৪. নারী জাতির মর্যাদা সমুন্নত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান।
১৫. ক্লিন ঢাকা গ্রীন ঢাকা।
১৬. ওয়ান স্টেপ সেবা প্রদান।
১৭. ‘ইউটিলিটি সার্ভিস’ তথা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করন।
১৮. বিশ্বের বৃহত্তম নর্দমা বুড়িগঙ্গাকে পরিচ্ছন্ন নদীতে পরিনত করন।
“মেয়র আসে, মেয়র যায়
জনদুর্ভোগ দিন দিন বৃদ্ধি পায়,
আসুন! সবাই মিলে এর আমূল পরিবর্তন ঘটাই
জনমনে শান্তি ও তাঁদের মূখে হাঁসি ফোঁটাই।”
সম্মানিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনবাসী,
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্,
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা আমাদের প্রিয় ও গর্বের শহর। ঢাকা শহরের রয়েছে এক বিশাল ঐতিহ্য এবং গৌরবময় ইতিহাস। প্রায় চারশত বছর পূর্বে মোগল আমলে ঢাকায় রাজধানী স্থাপিত হয়েছিল। অনেক ঘটনা বহুল উত্থান-পতনের পর ঢাকা এখন স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাজধানী। দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৪ বছর। ৪৪ বছরের মধ্যে ঢাকা সিটিতে অনেক চেয়ারম্যান, প্রশাসক ও মেয়রগণ আসীন ছিলেন। বিভিন্ন উন্নয়ন ও কাম্যমানের নাগরিক সুবিধা প্রদানের কথা বলে ঢাকা সিটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সরকার নিয়োগ দিয়েছেন জনপ্রতিনিধির পরিবর্তে দু’জন সরকারী কর্মকর্তাকে।
নাগরিকগণ একান্ত আশাবাদী ছিলেন, সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাগণ প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তিতে সিটি কর্পোরেশনের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে, কিন্তু সে আশা দূরাশায় পর্যবসিত হয়েছে। ইতিপূর্বে নির্বাচিত মেয়রগণ সিটির উন্নয়নের জন্য, সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য বারংবার সিটির জনগণের সাথে মুখরোচক বহু ওয়াদা দিয়েছেন। কেউ ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ওয়াদা করেছেন, কেউবা মেগাসিটিতে উন্নীত করার কথা বলেছেন। কেউ আবার বিশ্বমানের মহানগরী গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কেউ আধুনিক ডিজিটাল মহানগরী গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
প্রিয় মহানগরবাসী,
আমরা দেখতে পাই বিগত মেয়রগনের দেয়া সকল ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি, দেখানো সকল স্বপ্ন ও ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার অকার্যকর ও অন্তঃসারশূন্য ফাঁকা বূলিতে পরিণত হয়েছে। ঢাকা আজ বসবাসের অনুপোযোগী একটি সিটিতে পরিণত হতে চলেছে। বিশ্বের নোংরা ও পরিবেশ দূষণ সিটিগুলোর তালিকায় ঢাকা সিটির নাম উঠেছে।
ঢাকা সিটিতে বসবাসরত অনেকের মুখে আক্ষেপ ও দু:খের কথা শুনা যায়। তাঁরা বলেন, চাকুরী বা ব্যবসা না থাকলে ঢাকায় থাকতাম না। বাধ্য হয়েই ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। মনে চায় ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাই। ঢাকায় থাকতে আর মনে চায় না। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে শত অভিযোগ তুলে তাঁরা বলেন, ঢাকায় জনদূর্ভোগ খুব মারাত্মক, স্বাস্থ্য টিকে না। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ দূষণ, যানজট, ধুলা-বালু, বিশুদ্ধ পানির মারাত্মক সঙ্কট, অপ্রতুল পানি সরবরাহ, অনেক সময় সাপ্লাইকৃত পানি মুখে নেয়া যায় না, নিত্য ব্যবহার্য কাজ-কর্মে পানি ব্যবহার করা যায় না, পানি দিয়ে দূর্গন্ধ আসে, রোগ-ব্যাধির আধিক্য, ঠিকমত গ্যাস সরবরাহ থাকে না এছাড়া জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রব, খাবারে মারাত্মক ভেজাল, হাইজ্যাক-ছিনতাই, মাদকদ্রব্যের অবাধ ছড়াছড়ি, জান-মালের নিরাপত্তার মারাত্মক হুমকী, শিক্ষার পরিবেশ সঙ্কট, যানজটের কারণে কোন কাজই ঠিকভাবে করা যায় না, গন্তব্যে ঠিক মত পৌঁছা যায় না।
এছাড়াও মানব জীবনে হতাশা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা নিত্য নৈমত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর বাহির থেকে কোন ব্যক্তি ঢাকা সিটিতে কাজে আসলে পরিবেশগত কারণে যথাসম্ভব ঢাকা থেকে দ্রুত চলে যান। এ হলো ঢাকা সিটির বাস্তব বেদনাময় করুন আংশিক চিত্র।
প্রিয় সিটি কর্পোরেশনবাসী,
ঢাকা আজ বসবাসের পরিবেশ হারিয়ে যেতে চলেছে, ঢাকার জৌলুস ও ঐতিহ্য ম্লান হতে চলেছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা আজ মারাত্মক হুমকীর মুখে। এ চরম দূরাবস্থার কারণ এবং এর সমাধান আমাদের উদঘাটন করতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকা বাজেট হওয়া সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশনে কাংখিত মানের উন্নয়ন হল না কেন? বসবাসোপযোগী ঢাকা কেন হল না। কাম্যমনের নাগরিক সুবিধা কেন নিশ্চিত হল না? এ জিজ্ঞাসা সকল নাগরিকের। বারংবার মূখরোচক স্লোগানের ধোঁকায় আমরা আর কতবার নিপতিত হব। এত্থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।
প্রিয় সিটিবাসী,
ঢাকা নগরীর দুরাবস্থার জন্য কারা দায়ী; এ গোষ্ঠিকে চিহ্নিত করতে হবে, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। ঢাকা সিটির উন্নয়নের পথে, অগ্রযাত্রার পথে যারা বারবার ছোবল মারে তাদেরকে ভোটের মাধ্যমে বয়কট করতে হবে। ঢাকা সিটির এ দূরাবস্থার জন্য মূল কারণ হল- দুর্নীতি, টেন্ডারবাজী, অপরিকল্পিত কর্মকান্ড ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ক্ষমতাসীন দলের অশুভ প্রভাব-প্রতিপত্তি। এ কারণে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড টেকসই হয় না।
সিটি কর্পোরেশন আজ একটি অশুভ কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠির সিন্ডিকেটে পরিনত হয়েছে। তা না হলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা সিটির এ করুন দশা হতে পারে না। এ সিন্ডিকেটের কারনেই ঢাকা সিটি আজ বিশ্বের অন্যতম মানব বসবাসের অনুপযোগী সিটিতে পরিনত হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য সিটির তুলনায় ঢাকা সিটির পরিবেশ দুষণের সূচক অনেক উর্ধে। ঐতিহ্যবাহী-গৌরবময় ঢাকা আজ অনেকটা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
প্রিয় নগরবাসী,
আপনারা যদি সুস্থ পরিবেশে বাঁচতে চান, শান্তি-সুখে থাকতে চান, তাহলে এ অশুভ কায়েমী স্বার্থবাদী সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাংতে হবে। নোংরা রাজনীতির প্রভাব-দৌরাত্ম থেকে ঢাকা সিটিকে রক্ষা করতে হবে। জনজীবনে স্বস্তি ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। নগরকে বসবাসোপযোগী শান্তির নগরীতে পরিনত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আমূল পরিবর্তনের। দরকার ব্যাপক সংস্কারের। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের। প্রয়োজন সৎ, যোগ্য ও আল্লাহভীরু নেতৃত্বের।
প্রিয় ঢাকাবাসী,
সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে এর অনেক তিক্ত মাশূল আমাদের দিতে হবে। নতুন প্রজন্ম অনেক হুমকীর মুখে পড়বে। জনজীবনে আরো মারাত্মক অশান্তি ও বিপর্যয় নেমে আসবে। জনজীবন যে কতো দূর্বিসহ হয়ে ওঠবে যা কল্পনাও করা যায় না। কোন বুদ্ধিমান এক গর্তে দু;বার পড়ে না; অর্থাৎ কোন বুদ্ধিমান একই ভূল দ’বার করে না। এ দূরাবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য এদেশের শান্তিকামী ও মুক্তিকামী মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ‘সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন’। সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন এবং আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, বিভিন্ন পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে আমি আব্দুর রহমান মেয়র পদে ফ্লাস্ক মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।
প্রিয় সিটিবাসী,
আপনাদের কাছে আমি একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চাই,
“মেয়র আসে, মেয়র যায়
জনদুর্ভোগ দিন দিন বৃদ্ধি পায়,
আসুন! সবাই মিলে এর আমূল পরিবর্তন ঘটাই
জনমনে শান্তি ও তাঁদের মূখে হাঁসি ফোঁটাই।”
এ নির্মম বাস্তবতা নিরসনকল্পে আমাদের সকল ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে, পরিবর্তন ঘটাতে হবে সিটির সমগ্র কর্মকান্ডে, পরিবর্তন ঘটাতে হবে নীতি ও নেতৃত্বের, সংস্কার ও সংশোধনী আনতে হবে নাগরিক সেবা প্রদানের বিধিমালায়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, টেন্ডারবাজী ও টেন্ডারগুছের অশুভপ্রবনতা থেকে সিটি কর্পোরেশনকে মুক্ত রাখতে হবে। উন্নয়নের নামে নিম্নমানের কাজ কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না।
এ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ‘সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন’ নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত সিটি কর্পোরেশনের সকল ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজন মনে করছে। নগরবাসীর জীবন মান উন্নয়নের জন্য যতগুলো সংস্থা গড়ে ওঠেছে তার মধ্যে সিটি কর্পোরেশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন থেকে জনগণের সত্যিকারের কল্যাণ ও কাম্যমানের উন্নয়ন নির্ভর করে মেয়র ও কাউন্সিলরগণের সততা, যোগ্যতা ও তাঁদের গৃহীত নীতি, পরিকল্পনা ও ক্ষমতাসীন সরকারের সহযোগীতার ওপর।
মেয়র ও কাউন্সিলরগণের সততা, যোগ্যতা ও তাঁদের গৃহীত নীতিসমূহ এবং সরকারের সহযোগীতা যত উন্নত হবে জনগণের কল্যাণ ও নগরীর উন্নয়নও তত উন্নত হবে।
পক্ষান্তরে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরগণ যদি সৎ ও যোগ্য না হন এবং সরকারের সহযোগীতা কাঙ্খিতমানের না থাকে, তাহলে তাঁদের নির্বাচনী ওয়াদা ফাঁকাবুলি ও ধোকাবাজিতে পরিণত হবে। তাঁদের থেকে নাগরিকের প্রকৃত কোনো কল্যাণ ও নগর উন্নয়নের কোন আশা করা যায় না।
এ বাস্তবতা সামনে রেখেই সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন-এর পক্ষে আমি ২৯ দফা কর্মসূচি সম্বলিত নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছি এবং দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি, নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত কর্মসূচীসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এবং সকলের সহযোগীতা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে একটি উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শান্তির নগরী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করব, ইনশাআল্লাহ্।
নির্বচনী ইশতেহার নিম্ন রূপ-
১. শুধু দুর্নীতি দমন নয়, দুর্নীতি মূলোৎপাটন কর্মসূচি গ্রহণ : নগর উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা হল দুর্নীতি। দুর্নীতিকে পাকাপোক্ত করার জন্য সন্ত্রাস, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতাসীনদলের আশ্রয় নেয়া হয়। অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী কর্মকান্ডও দুর্নীতির একটি হাতিয়ার। অপরিকল্পিত কর্মকান্ডের মাধ্যমেও জনগণের আমানতের খেয়ানত করা হয়। তাই সর্বাগ্রে আমাদের কাজ হবে দুর্নীতি নির্মূলে কর্মসূচি গ্রহণ করা। স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মূলোৎপাটন করা। এ লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ উত্থাপন করা হলো :
ক. সিটি কর্পোরেশনে সংঘটিত দুর্নীতি, টেন্ডারবাজী, স্বজনপ্রীতি ও দলীয় অসুভ প্রভাব-প্রতিপত্তির বিরুদ্ধে নগরবাসীকে সচেতন করা হবে। এ কাজে সকল প্রচারযন্ত্র, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মসজিদের ইমাম, আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখসহ অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের সমন্বিত ভূমিকা পালনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
খ. নগরবাসীর আভ্যন্তরীন মূল্যবোধকে উন্নত করার জন্য ব্যবহারিক জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা হবে। কারণ একজন সত্যিকারের ধার্মিক মানুষ কখনও অন্যের ক্ষতি তো দুরের কথা দেশ ও মানুষের অকল্যান চিন্তাও করতে পারে না, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসসহ কোন অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয় না।
গ. সিটি কর্পোরেশনের গণপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণকে সততা ও যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশংসাপত্রসহ পুরস্কৃত করা হবে।
ঘ. সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কোন জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা, কর্মচারী যদি কোন দুর্নীতি বা অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, তবে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগতভাবে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ঙ. সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতাকে ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।
চ. ‘ওয়ান স্টেপ সেবা প্রদান’ বা এক টেবিলে গিয়ে যাতে লোকজন এক একটা কাজ সুসম্পন্ন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ছ. অফিস পরিচালনায় আমূল পরিবর্তন আনা হবে। নিম্ন করনিক থেকে বড় কর্মকর্তা কেউই নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ফাইল বা কার্যাদেশ ধরে রাখতে পারবে না।
জ. জনসাধারণের কাজকর্ম সরল ও সহজ করা হবে। অহেতুক সময় ক্ষেপন যাতে না করতে হয়, তার জন্য ন্যূনতম কাগজপত্রের ভিত্তিতে অফিস আদেশ জারির ব্যবস্থা করা হবে।
ঝ. দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিটি অফিসে ‘অভিযোগ বাক্স’ স্থাপন করা হবে এবং মেয়র, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সংরক্ষিত আসনের ১ জন কাউন্সিলর, ২ জন সাধারণ কাউন্সিলর- মোট ৫ সদস্য বিশিষ্ট টীম অভিযোগ পত্রগুলো দ্রুত তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ঞ. গোপনীয়ভাবে দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের খোঁজখবর নিয়ে প্রাথমিকভাবে চারিত্রিক সংশোধনের চেষ্টা করা হবে। সংশোধিত না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ট. ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে টেন্ডার হবে; কিন্তু টেন্ডারবাজী করতে দেয়া হবে না।
ঠ. অনলাইন ব্যবস্থা আরো উন্নত করা হবে।
২. ভেজালমুক্ত খাদ্য ও ইনসাফপূর্ণ বাজার নিয়ন্ত্রন : খাদ্য মানুষের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত অপরিহার্য; যদি সে খাদ্য ভেজাল মুক্ত হয়। ভেজাল যুক্ত খাদ্য বিভিন্ন রোগের কারণই শুধু নয়; জীবনসংহারীও বটে। এজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা সিটিকে ভেজাল মুক্ত করা হবে। এছাড়াও ইনসাফ ভিত্তিক বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রন করা হবে। যাতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হয়।
৩. নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন : দেশী-বিদেশী নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। এদের পরামর্শে এবং বাস্তবতার নিরিখে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আধুনিক মেগাসিটিতে রূপান্তর করা হবে। এক্ষেত্রে ইস্তাম্বুল, হংকং, সিংগাপুর এবং কুয়ালালামপুরকে অনুসরণ করা হবে।
৪. ‘ইউটিলিটি সার্ভিস’ তথা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরন : নগরবাসীর জীবনমান সুন্দর-স্বাচ্ছন্দ রাখার স্বার্থে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সার্বক্ষণিক সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। রাস্তা-ঘাট, পয়ঃনিষ্কাসনব্যবস্থা আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা হবে।
৫. জনজীবনকে শঙ্কামুক্ত ও নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ : জনজীবন শঙ্কামুক্ত ও নিরাপদ রাখার স্বার্থে সকল প্রকার সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী নির্মূল করা হবে। মাদক, ইভটিজিংসহ সকল প্রকার অপসংস্কৃতিক কর্মকান্ড কঠোর হস্তে দমন করা হবে। জাতির ভবিষ্যত ছাত্র ও যুবসমাজের চরিত্র বিধ্বংসী কর্মকান্ড কোনরূপ বরদাশ্ত করা হবে না।
৬. শ্রমের মর্যাদা ও শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা : এদেশে শতকরা ৮০ভাগ মানুষ শ্রমিক। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে শ্রমিকের সংখ্যা আরো বেশী। শ্রমিকদের অবহেলা, অসম্মান করলে এবং তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখলে কোন দেশ, কোন অঞ্চল এবং কোন শহর কখনো উন্নতি লাভ করতে পারে না। এ জন্য শ্রমিকদের সাথে সুন্দর ব্যবহারের আচরন বিধি করা হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার যাতে ব্যাহত না হয় এ ব্যাপারেও একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
৭. নারী জাতির মর্যাদা সমুন্নত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান : মায়ের জাতি নারী সমাজের মর্যাদা ক্ষুণ্নকারী যেমন- নারী নির্যাতন, নারী অপহরণ, এসিড নিক্ষেপসহ এরূপ জঘন্য কর্মকা- সমূহ কঠোর হস্তে দমন করা হবে। যৌতুকমুক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি ঘোষণা করা হবে। মায়ের জাতি নারী সমাজের সম্মান-মর্যাদা রক্ষার্থে বিজ্ঞাপনের নামে নারীদের অশোভনীয়-অশ্লীল প্রদর্শনী বন্ধ করা হবে। লোকাল বাসে ১০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে। এছাড়া মহিলাদের জন্য আলাদা বাসের সূব্যবস্থা করা হবে। নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বতন্ত্র মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, মেডিকেল কলেজ ও টেকনিক্যাল কলেজ নির্মাণ করা হবে।
৮. গরীব-দুঃখী অসহায় ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যাংক : পঙ্গু ও কর্মোক্ষম ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ভিক্ষুকমুক্ত মহানগরী ঘোষণা করা হবে। স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রিক্সা, ভ্যান, টেম্পু, সিএনজি ও ট্যাক্সি চালকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাঁদেরকে মালিকানায় উন্নীত করা হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকেও এ প্রকল্পের আওতাভূক্ত করা হবে। সাথে সাথে বেকারদের কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করণের লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৯. যানজট নিরসনকরণ : যানজট নিরসনে পুলিশ-প্রশানের সাথেসমন্বয় সাধনকরে ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে পরামর্শ ও সহযোগীতা নিয়ে আরও ফ্লাইওভার, ওভারব্রিজ এবং কুড়িল থেকে সদরঘাট, গাবতলী থেকে গুলিস্থান পর্যন্ত উড়াল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
১০. সংখ্যালঘুদের সার্বিক অধিকার নিশ্চিতকরণ : সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তাঁদের জানমাল ও সম্মানের যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া হবে। তাঁরা যাতে শঙ্কামুক্ত জীবনযাপন করতে পারেন, তার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
১১. ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা : সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সকল ধরণের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক হানাহানি ও সংঘর্ষ নিরসনকল্পে সকল ধর্ম-বর্ণ ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক সহাবস্থান সম্প্রীতি-সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুগোপযোগী ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে সকল ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ বৈঠকের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রশাননের সাথে সমন্বয় করে কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক উস্কানী ও সংঘাত বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১২. সিটি কর্পোরেশনের স্বার্থ ও আমানত রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান : সিটি কর্পোরেশনের বেদখল হয়ে যাওয়া সকল সম্পত্তি পুন:রূদ্ধার করে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আনা হবে। অবৈধ স্থাপনাসমূহ আইনানুযায়ী ভেঙ্গে ফেলা হবে। সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কর্মকা- সুঁচারুরূপে সম্পাদনের জন্য ন্যায্য ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
১৩. ব্যবসায়িক কর্মকান্ড গতিশীল ও নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ : সকল ব্যবসায়ী যাতে সহজ ও নিরাপদ-নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা করতে পারেন, তার জন্য সুষ্ঠু, সুন্দর ও উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হবে। শিল্প সুরক্ষা ও বিকাশে এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্কন্নোয়নে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
১৪. মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ : সুস্বাস্থ্য, সুশিক্ষা ও চরিত্রের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে আজকের শিশুরা যাতে আগামীতে দেশের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ অবদান রাখতে পারে, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। মায়েরা যাতে সহযে সুচিকিৎসা পেতে পারেন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
১৫. ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশ : পীর-আউলিয়ার পূণ্যভূমি এবং মসজিদের নগরী ঢাকা সিটি (দক্ষিণ) এর জনগণ একটি সুস্থ ও গতিশীল সংস্কৃতি লালন করে আসছেন। আমাদের সংস্কৃতির এ ঐতিহ্যকে রক্ষা, লালন ও বিকশিত করণ এবং যে কোন অপসাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী নয়, এমন সকল প্রানবন্ত ক্রীড়া ও শিল্পকলা বিকাশের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।
১৬. ‘ক্লিন ঢাকা গ্রীন ঢাকা : পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ দূষণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অবাধে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা হবে। মহানগরীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ধুলা-বালিমুক্ত রাখার সুব্যবস্থা করা হবে এবং বৃক্ষ নিধন বন্ধ ও রোপনের বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
১৭. নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ : একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। এজন্য নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাই দায়ী। দেশী-বিদেশী নগর বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৮. রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ীর নিবন্ধন ফি- মওকুফ : ক্ষুদ্র যানবাহন- রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ী ইত্যাদি যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ফি- মওকুফ করে দেয়া হবে। যাতে গরীব যানবাহন মালিকদের হয়রানী এবং অর্থকষ্ট লাঘব হয়।
১৯. হকারদের জন্য স্থায়ী বরাদ্দ এবং ছিন্নমূল ও ভ্রাম্যমান হকারদের পরিচয়পত্র প্রদান : ছিন্নমূল ও ভ্রাম্যমান হকারদের হয়রানী বন্ধের জন্য তাঁদের পরিচয় পত্র প্রদান করা হবে। পরিচয় পত্রধারীদের কোন রকমের পুলিশী এবং অন্যান্য অশুভ শক্তির হয়রানী বন্ধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হকারদের স্থায়ী পূনর্বাসনের আগে যে যেখানে আছে সেখানে থেকেই ব্যবসা চালিয়ে যাবে। অযথা কাউকে হয়রানী করতে দেয়া হবে না।
২০. বিশ্বের বৃহত্তম নর্দমা বুড়িগঙ্গাকে পরিচ্ছন্ন নদীতে পরিনত করন : বুড়িগঙ্গা নদী আজ বিশ্বের বৃহত্তম নোংরা-দুর্গন্ধময় নর্দমায় পরিনত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্য এবং ইতিহাস হলো, ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীঁরে অবস্থিত। আর এখন অবস্থা হলো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের বৃহত্তম নর্দমা বুড়িগঙ্গার তীঁরে অবস্থিত। নদীর সন্নিকটে গেলে, নৌকা কিংবা লঞ্চে আরোহন করলে বমি আসে, রুমাল দিয়ে নাক চেপে রাখতে হয়।
এ কলঙ্ক মোচনের জন্য বুড়িগঙ্গা নর্দমাকে, মনোমুগ্ধকর পরিষ্কার বুড়িগঙ্গা নদীতে রুপান্তর করা হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ণের জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নদী এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে পানি দূষণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে সকল নর্দমার ময়লা পানি বুড়িগঙ্গা নদীতে পতিত হয়, সে সকল নর্দমার পানি সরাসরি যাতে নদীতে পতিত হতে না পারে সে লক্ষ্যে নদীর দু’কিনারা ঘেঁষে দু’টি শক্তিশালী পয়:নিষ্কাশন ড্রেন নির্মাণ করা হবে। নিষ্কাশন ড্রেন দিয়ে নদীর দু’পাড়ের সকল ময়লা পানি বহু দূরে নিয়ে ‘সর্বাধুনিক ডাম্প’ স্থাপন করে দুষিত পানি রিসাইক্লিন করে জাপানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে।
২১. পথিক এবং ভ্রাম্যমান মানুষের জন্য নতুন ২০০০ স্যানিটারী টয়লেট নির্মাণ করা : ভাসমান এবং ভ্রাম্যমান মানুষেরা যাতে রাস্তা-ঘাটে পায়খানা-প্রসাব করে পরিবেশ নোংরা করতে না পারে এবং ভ্রাম্যমান ও পথিকদের সূবিধার্থে নতুন ২০০০ স্যানিটারী টয়লেট নির্মাণ করা হবে। যা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্ববধানে পরিচালিত হবে।
২২. সভা-সমাবেশ করার জন্য ২০টি মাঠ বরাদ্ধ : গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশ করা মৌলিক অধিকার। রাস্তাঘাটে সভা-সমাবেশ করলে যান চলাচলে অনেক প্রতিবদ্ধকতা সুষ্টি হয়। লোকজনের অনেক কষ্ট হয়। জনসভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য যাতে কোনরূপ রাস্তা-ঘাট বন্ধ এবং অহেতুক যানজট না হয়, সে লক্ষ্যে ২০টি মাঠ বরাদ্ধ করা হবে।
২৩. সু-স্বাস্থ্য রক্ষায় সুপেয় পানির প্রয়োজন পূরণে প্রতিটি থানায় ১টি করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে : পানির লাইন এবং সুয়ারেজ লাইন যাতে কখনও একাকার হয়ে না যায় তার কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওয়াসার সাথে সমন্বয় করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-এর প্রতিটি থানায় ১টি করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে। বস্তি এলাকায় পানির সরবরাহ সহজলভ্য করা হবে।
২৪. ৩০% হোল্ডিং ট্যাক্স কমানো হবে : বাড়ীর মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে সু-সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি নীতিমালা করা হবে। যাতে উভয় পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। বাসা ভাড়া সহনশীলাবস্থায় আনয়নের জন্য বাসাবাড়ীর হোল্ডিং ট্যাক্স ৩০% কমানো হবে।
২৫. সি.এন.জি লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা : যাত্রীসেবা উন্নত করণের লক্ষ্যে বি.আর.টির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সি.এন.জি এর লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। যাতে মালিকরা ড্রাইভারের কাছ থেকে দৈনিক জমার নির্দিষ্ট টাকা ন্যায়-সঙ্গতভাবে নিতে পারেন। মিটার ব্যবহারে বিশেষ নীতিমালা প্রনয়ন করা হবে যাতে মালিক ও চালকদের যথাযথ স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।
২৬. প্রতিটি থানায় ১টি করে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা : খেলা-ধুলার মানোন্নয়নের জন্য প্রতিটি থানায় ১টি করে উন্নতমানের খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা হবে।
২৭. ধুলা-ধোঁয়া, মশা, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে টাস্ক ফোর্স গঠন : ধুলা, ধোঁয়া, মশা, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে প্রতিটি বিষয়ে একটি করে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। যাতে তড়িৎ গতিতে উপরোক্ত সমস্যাগুলো নিরসন করা যায়। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের সাথে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
২৮. সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন ছোট-বড় সকল রাস্তা-ঘাট, পানির লাইন, ক্যাবল লাইন, ইলেক্ট্রিক লাইন, সুয়ারেজ লাইন ও আইল্যান্ডগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্মত করা হবে।
২৯. ক্ষুদে টোকাইদের পূনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ : ক্ষুদে টোকাইদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য ফ্রি শিক্ষাসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভোটারগণের প্রতি আবেদন
সম্মানিত শান্তিকামী ও মুক্তিকামী ভাই ও বোনেরা!
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকা জঞ্চাল, সীমাহীন অনিয়ম, অপরিকল্পিত কাজকর্ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং উন্নয়নমূলক কাজে-কর্মে ক্ষমতাশীন দলের হস্তক্ষেপ চলে আসছে, তা নিরসন করে জনজীবনকে সাচ্ছন্দময় করে গড়ে তোলার জন্য আসন্ন সিটি নির্বাচন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে ঢাকার ভবিষ্যৎ।
আপনারা সম্মিলিতভাবে উপরোক্ত সমস্যাগুলোর আমূল পরিবর্তন ঘটাতে চাইলে আমি আব্দুর রহমানও আপনাদের খাদেম হিসেবে কাজ করতে একান্ত আগ্রহী। একাজে সফলতা অর্জনের জন্য আমি আপনাদের দোয়া চাই। আমি ইশতেহারে যে সকল কথা বলেছি জীবনের বিনিময়ে হলেও আমি তা বাস্তবায়ন করব, ইনশাআল্লাহ্। আমার প্রতি এদেশের শান্তিকামী, মুক্তিকামী দেশপ্রেমিক মানুষের ভালবাসা, পীর-মাশায়েখ এবং উলামায়ে কেরামগণের দোয়া এবং তত্ত্ববধান রয়েছে। এটাই আমার কাজের প্রেরণা। আমাকে ভোট দেয়া এবং নির্বাচিত করা মানে ঢাকা সিটির আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করব বলে আমি মনে করি।
পরিশেষে সকলের প্রতি আমার বিনীত আবেদন, আপনারা আমাকে ফ্লাস্ক মার্কায় ভোট দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখা এবং ঢাকাবাসীর সেবা করার সুযোগ দিন।
আমি সকলের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, শান্তি-মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করছি।
পরম করুনাময় মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলের সহায় হোন, আমীন।
সম্মিলিত নগর উন্নয়ন আন্দোলন-এর সমর্থিত
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী
আব্দুর রহমান
প্রতীক : ফ্লাক্স
মন্তব্য চালু নেই