ঢাকার ইতিহাসে এই প্রথম তাজিয়া মিছিলে হামলা

প্রায় ৪০০ বছর ধরে ঢাকায় শিয়া সম্প্রদায় পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল করে আসছে। পবিত্র আশুরাকে ঘিরে শান্তিপূর্ণ এই আয়োজনকে ঘিরে বরাবরই সব ধর্মের মানুষের আগ্রহ প্রচুর। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করতো। শিয়া সম্প্রদায়ের বাইরেও আয়োজন দেখতে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসতেন অন্য সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ।

প্রতিবছরের মতো এবারও সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ শুক্রবার মধ্যরাতে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলাকালে পুরান ঢাকার হোসনি দালানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। মুহূর্তে রক্তাক্ত হয় ঘটনাস্থল। হামলায় মারা যায় এক কিশোর। আহত হন শতাধিক।

সরকার ও প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা এ হামলার বিষয়ে বিভিন্ন কথা বললেও এই হামলায় ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছেন আয়োজকরা। পুরান ঢাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তবে এরমধ্যেও শনিবার সকালে নির্ধারিত সময়ে তাজিয়া মিছিল বের করেছে শিয়া সম্প্রদায়।

তাজিয়া মিছিলের সংগঠকদের অন্যতম একজন এম. এম. ফিরোজ হোসাইন বলেন, “আমরা শিয়া মুসলিমরা ৪০০ বছর ধরে ঢাকায় এই তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে আসছি। কখনও আমরা কোন ধরনের হুমকি পাইনি এবং কখনও আমাদের ওপর কোনো হামলাও হয়নি।”

তিনি এই হামলার ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক বলেও দাবি করেন। প্রশাসনের মতো আয়োজকরাও মনে করছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এই হামলা করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই সাজ্জাদ হোসেন নামের ১৫-বছর বয়সী এক কিশোর নিহত হয়। তার বাড়ি লালবাগ এলাকায় এবং সে তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে সেখানে এসেছিল।

আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অনেকের চিকিৎসা চলছে মিডফোর্ট হাসপাতালে। তাদের চিকিৎসায় বহু মানুষ হাসপাতালে গিয়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়েছেন।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের বেশিরভাগই আশঙ্কামুক্ত। তবে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হোসনি দালান চত্বরে বিভিন্ন জায়গায় হতাহতদের ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে। শিয়াদের মসজিদের মধ্যেও

পুলিশ ওই জায়গা এবং যেসব জায়গায় বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে সেই জায়গাগুলো নিরাপত্তা কর্ডন করে ঘিরে রেখেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র সদস্যরা সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করছেন।

এদিকে আয়োজকদের কাছে হোসনি দালান চত্বরের সিসিটিভির ফুটেজ আছে বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশ ওই ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করেছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

স্থানীয় চকবাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক জানিয়েছেন, তাজিয়া মিছিলের জন্য হোসনি দালান চত্বরে এক হাজারের বেশি শিয়া মুসলিম জড়ো হয়েছিলেন।

তাদের মিছিল শুরু করার প্রস্তুতির সময়ই পর পর তিনটি বোমা বিস্ফোরিত হয়।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহজনক তিনজনকে আটক করা হয়েছে।এছাড়া বিস্ফোরিত হয়নি এমন আরও দুটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ উল্লেখ করেছে, উদ্ধার করা বোমাগুলো কালো স্কচ টেপ দিয়ে প্যাঁচানো ছিল।

এগুলো হাতে তৈরি গ্র্রেনেড বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।

এদিকে, শনিবার ভোররাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

তিনি বলেছেন, তাজিয়া মিছিলের জন্য সেখানে পুলিশ, র‌্যাব এবং সাদা পোশাকে পুলিশের ব্যাপক নিরাপত্তা নেয়া হয়েছিল।

এমন নিরাপত্তার মধ্যে বোমা হামলাকারীরা তাজিয়া মিছিলে অংশ নেয়ার সাজ নিয়ে হোসনি দালান কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা মনে করছেন।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, এটি কোনো জঙ্গি হামলা নয়। দেশে যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারাই পরিকল্পিতভাবে এই নাশকতা করেছে।



মন্তব্য চালু নেই