ড. ওসমান ফারুকের যুদ্ধাপরাধ সম্পৃক্ততার অনুসন্ধান শুরু

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বিএনপি নেতা ড. ওসমান ফারুকের যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অনুসন্ধান শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এজন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা। বিষয়টি তদারকির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একজন প্রসিকিউটরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।খবর জাগো নিউজের।

এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৭১ সালে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের কিছু তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। এগুলোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা কতটুক অনুসন্ধানে তা বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক মিয়া।

তিনি জানান, ড. ওসমান ফারুকের অপরাধের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে ৭১ সালে অবস্থানরত ময়মনসিংহ শহর এবং ড. ওসমান ফারুকের নিজস্ব এলাকা কিশোরগঞ্জে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করবেন।

চলতি মাসের শেষ দিকে তার অপরাধ আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করার জন্য প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টিম ময়মনসিংহে যাবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রসিকিউশন টিমের অন্যতম সদস্য সৈয়দ হায়দার আলী জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক কাজও শুরু করা হয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন করার পর প্রতিবেদন আমাদের হাতে আসলে আমরা আইন অনুযায়ী চার্জ গঠন করার জন্য ট্রাইব্যুনালে পাঠাবো।

মামলা (তদন্ত) করার জন্য যাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার নাম মো. হেলাল উদ্দিন। একইসঙ্গে মামলা পরিচালনা করার জন্য প্রসিকিউশন টিম থেকে রাষ্ট্রপক্ষে প্রকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে নিয়োগ করা হয়েছে।

তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক জানান, ড. ওসমান ফারুকের ব্যাপারে তদন্ত সংস্থা থেকে প্রাথমিক খোঁজখবর নেয়ার পর তার অপরাধ অনুসন্ধান করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠানিকভাবে মামলাও করা হবে।

পুলিশ অফিসার হেলাল উদ্দিন এর আগে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার (আইও) তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন। তাকেই সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ততা অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে।

এ বিষয়ে মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রসিকিউটর সায়েদুল হক সুমন জানান, ড. ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত সংক্রান্ত কাজ করার জন্য একটি টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। আমাকে ওই টিমের সঙ্গেও রাখা হয়েছে। তবে মামলার গোপনীয়তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

অপরদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, মামলার তদন্ত শুরু করা হযেছে। তবে কবে কখন থেকে শুরু করা হয়েছে তা প্রকাশ করা যাবে না।

এর আগে ২০১৬ সালের ৪ মে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট আমলের প্রভাবশালী এই মন্ত্রীর নাম (যুদ্ধাপরাধ) মানবতাবিরোধীদের তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক মিয়া।

একাত্তরে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সানাউল হক বলেন, একাত্তরে সংঘঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের ১১ জন প্রফেসরের নাম পাওয়া গেছে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড করেছেন। তাদের মধ্যে ড. ওসমান ফারুকের নামও দেখতে পান অনুসন্ধানকারীরা। তখন তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।

তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ এই সমন্বয়ক জানান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, `কাগজপত্রে দেখা যায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ওসমান ফারুকসহ ১১জন শিক্ষক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছিলেন। সে সময় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নেন তারা।



মন্তব্য চালু নেই