ট্রেন লাইনচ্যুত: নাশকতা নয় কারিগরি ত্রুটি
সিলেট-আখাউড়া রেললাইনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মনু ও টিলাগাঁও স্টেশনের মধ্যবর্তী ইশবপুরে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়া নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী ওই আন্তঃনগর ট্রেন দুর্ঘটনা অবরোধকারীদের নাশকতার কোনো পরিকল্পনার অংশ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রাথমিকভাবে নাশকতা জনিত দুর্ঘটনার বিষয়টি মাথায় এলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অজানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। আবার অন্যদিকে, পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে তৈরি হচ্ছে ধূম্রজাল।
ট্রেনে কর্তব্যরত রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ সদস্য বোরহান জানান, সিলেট থেকে ট্রেনটি মাইজগাঁও স্টেশনে আসার পর ইঞ্জিনের পেছনের বগিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। দুটি বগির সংযোগস্থল তার দিয়ে বেঁধে সচল করে চালানো হয়। কিন্তু মাইজগাঁও স্টেশন ছাড়ার পর থেকেই বগি দুটির যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন। দুর্ঘটনার সময় বিকট শব্দ করে বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়। পার্শ্ববর্তী জমিতে ছিটকে পড়ে বগিগুলো। এতে ট্রেনে অবস্থানরত কমপক্ষে ৫ শতাধিক যাত্রীর মধ্যে তীব্র আতঙ্ক দেখা দেয়। চরম দুর্ভোগের শিকার হন অক্ষত অবশিষ্ট বগিগুলোর যাত্রীরাও।
কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন মাস্টার মির্জা মো. শামসুল ইসলাম জানান, সিলেট থেকে রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে উদয়ন। ভোর ৩টায় কুলাউড়া স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় টিলাগাঁও ও মনু রেলওয়ে স্টেশনের মাঝখানে টিলাগাওয়ের মনু স্টেশনের এক কিলোমিটার আগে ইসবপুরে দুর্ঘটনা কবলিত হয়। এতে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। বগিগুলো হলো ৮৩০৯, ৮৪৯৭, ৯১৭১, ৭০১১, ২১৪৩ ও ৯৩৯৬।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সিলেট, মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া ৩টি ইউনিট, কুলাউড়া থানা পুলিশ, রেলওয়ে জিআরপি থানা পুলিশ দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহমদ, সহকারী পুলিশ সুপার জুনায়েদ আলম সরকার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অমল কুমার ধর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় উদ্ধারকারী একটি ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে যায় এবং ট্রেনটি উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
অপরদিকে দুর্ঘটনার পর শমসেরনগর ও শ্রীমঙ্গলে স্টেশনে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন আটকা পড়েছে। অপরদিকে কুলাউড়া স্টেশনে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে আছে।
ট্রেনের চালক কবির ও কুলাউড়া জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গির হোসেন জানান, ট্রেনটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।
উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (মেকানিক) শ্রীপদ দত্ত ও ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলী (পথ) এরফানুর রহমান দুর্ঘটনার জন্য নাশকতার আশঙ্কা করেছেন। দুর্ঘটনায় রেললাইনের ২০ ফুট জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, এটা কোনো নাশকতা নয়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই