টানা বৃষ্টিতে সীমাহীন দুর্ভোগ

প্রচণ্ড খরতাপের পর গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় নাগরিক জীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। জলাবদ্ধতার এই ভোগান্তি ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে দেশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। নদ-নদী উপচে বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ছে নিম্নাঞ্চলে। ক্রমেই বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা।

অন্যদিক টানা বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ধসের ঘটনা বিপজ্জনকহারে বেড়েছে। পাহাড়ধসে শুক্রবার বান্দরবানে দুই শিশুর (ভাই-বোন) মৃত্যু হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণ ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটতে পারে। কোথাও কোথাও শিলা ও বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়েরও আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, সারাদেশে চলমান বৃষ্টি শনিবার বিকেল নাগাদ কমতে পারে।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে শুক্রবার ভোর থেকেই রাজধানীবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে এদিন অডিট অধিদফতরের অডিটর পদে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের কষ্টের কোনো সীমা ছিল না। সকালে যানবাহন সঙ্কটের কারণে নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রে যেতে তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। কাকভেজা অবস্থায় কোনোমতে তারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় অফিস-আদালতগামী মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে না হলেও রাজধানীর অলিগলিতে বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, মালিবাগ, মুগদা-বাসাবো, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলবাদ্ধতার কারণে নাগরিক দুর্ভোগ বেড়েছে। আর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের অভ্যন্তরে নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক জলাবদ্ধতার চিত্র যেন আরও দুর্বিষহ। এই এলাকার অনেক বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

মুগদা-বাসাবো এলাকার বাসিন্দা মনোজ কুমার দে জানান, মুগদার অলিগলিতে এত পানি জমেছে যে, ঘর থেকে বেরোনোই মুশকিল। আবার এই পানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা। এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

জলাবদ্ধতার এই চিত্র শুধু ঢাকা বা এর আশপাশেই সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের জেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সময়ের পরিক্রমায় দেশের নদ-নদী ও নালাগুলো দখল বা ভরাট হওয়ায় জেলা-উপজেলা শহরগুলোও এখন জলাবদ্ধতার শিকার। একটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট।

শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, দেশের কংশ, সাংগু, মাতামুহুরী নদীর পানি ১৭ সেন্টিমিটার থেকে ১৬৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের ৮৪টি নদ-নদীর মধ্যে ৪৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্রাস পেয়েছে ৩৪টি নদ-নদীর পানি। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ৫টি নদীর পানি।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণাঞ্চল সব এলাকাতেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি বেশি ভোগাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার চাঁদপুরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যার পরিমাণ ২৮৮ মিলিমিটার। কক্সবাজারে বৃষ্টি হয়েছে ২১০ মিলিমিটার। উত্তরের জেলা রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়েছে ১০০ মিলিমিটার।

আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারিবর্ষণ হতে পারে। অতিবর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসেরও আশঙ্কা রয়েছে।

ওই সূত্রে আরও জানা যায়, শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে পরবর্তী ১৮ ঘণ্টায় রাজশাহী, পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলে ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এ সব অঞ্চলের উপর দিয়ে অস্থায়ীভাবে পশ্চিম-উত্তর দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে অথবা কোথাও কোথাও আরও অধিক বেগে বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই