ঝুলে গেছে মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যা মামলার তদন্ত

প্রায় সাত মাস হয়ে গেলো। সচিবের গলা ধাক্কার অপমানে মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব খানের আত্মহত্যার ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এখনও।

ঘটনাটি জানাজানি হলে তোলপাড় হয় সারাদেশে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয় সরকার। গঠন হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু সে প্রতিবেদন কবে জমা দেয়া হবে, কবে ব্যবস্থা নেয়া হবে সে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ।

গত ৭ জুলাই রাজধানীর তোপখানা রোডে কর্ণফুলি আবাসিক হোটেলে বিষপানে আত্মহত্যা করেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব আইয়ুব খান। মৃত্যুর আগে তিনি চার পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোট লিখে যান। ঢাকার জেলা প্রশাসক বরাবর লেখা চিঠিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিট কমান্ড ঘোষণার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ হান্নানকে মাছ, শুঁটকি ও টাকা দেয়ার পরও কমিটি ঘোষণা না করায় টাকা ফেরত চাইলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওই অপমানের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেন বলেও লিখে যান আয়ুব খান।

এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়। এখন সুসাইড নোট হাতে পেয়ে এই মামলায় আত্মহত্যার প্ররোচনার একটি ধারা সংযোজিত হবে।

মামলাটি তদন্ত করছেন শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন ফরাজী। প্রতিবেদন দিতে এতদিন কেন লাগছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আমার কাছে এসেছে। তবে ভিসেরা প্রতিবেদন আমার হাতে এখনো আসেনি। ওই প্রতিবেদন পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেবো’।

ভিসেরা প্রতিবেদন দেয় মহাখালীতে অবস্থিত রাসায়নিক পরীক্ষাগার। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার শরীরের কিছু অংশ রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয় মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য। নিয়মানুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে এই প্রতিবেদন দিয়ে থাকে রাসায়নিক পরীক্ষাগার। তবে মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব খানের মরদেহের ভিসেরা প্রতিবেদন কেন এতদিনেও পাওয়া যায়নি, তা বলতে পারছেন না তদন্ত কর্মকর্তা।

ভিসেরা প্রতিবেদন পেতে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে যেগাযোগ করেছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে একাধিকবার রাসায়নিক পরীক্ষাগারে চিঠি দেওয়া হয়েছে’।

তবে মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরীক্ষক দীলিপ কুমার সাহা বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, কে বলেছেন আমরা এখনো ভিসেরা প্রতিবেদন দেয়নি। আমরা কোন ভিসেরা প্রতিবেদন পেন্ডিং রাখিনা। আপনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে খোঁজ নিতে বলেন।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আয়ুব খানের মরদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়ার চার পৃষ্ঠার নোটটি সিআইডির হস্তলিপি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, এটা আয়ুবের নিজ হাতের লেখা। সিআইডির ওই প্রতিবেদনও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতে পেয়েছেন।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অভিযুক্ত সচিব এমএ হান্নানের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন ফরাজী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কথা বলবেন’।

এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এ মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আত্মহত্যার বিষয়টি এসেছে। তবে আত্মহত্যায় কেউ প্ররোচনা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন মিটিং-এ আছি। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই