জ্বর কেন হয় জানেন কি?
জ্বর একটি সাধারণ উপসর্গ। বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবে জ্বর হয়ে থাকে। জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে যায়।শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৯৮•৬ ফারেনহাইট (মুখগহ্বরে জিহ্বার নিচে) এই তাপমাত্রা বেড়ে গেলেই আমরা তাকে জ্বর বলতে পারি। এই জ্বর হলে করণীয় কী? এ সম্পর্কে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে।
জ্বর হলেই অনেকে রোগীর গায়ে কাঁথা চাপিয়ে দেন। তাদের ধারণা, এতে করে রোগীর ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়বে। জ্বর হলে ঠান্ডা হাওয়া আসার ভয়ে ঘরের দরজা-জানালাও অনেকে বন্ধ করে রাখেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোনটাই জ্বর কমানোর পদ্ধতি নয় বা জ্বর কমাতে সাহায্য করে না।
জ্বর হলে এমনিতেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তখন যদি আবার শরীরে মোটা কাপড়, কম্বল জড়ানো হয় তবে শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়। ঠিক তেমনি জ্বর হলে গায়ে তেল মালিশ করাও ঠিক নয়।
এতে করে শরীরের লোমকূপগুলো ময়লায় বন্ধ হয়ে যায় এবং শরীরের বাড়তি তাপ বের হতে পারে না। জ্বর হলে শরীরে মোটা কাপড়-চোপড় জড়ানো উচিত নয়; কাপড়চোপড় যতটুকু খোলা সম্ভব খুলে দিতে হবে। খোলা রাখতে হবে ঘরের দরজা-জানালা। মোট কথা, উন্মুক্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যান থাকলে সেটিও মধ্যগতিতে চালিয়ে দিতে হবে।
তারপর একটি তোয়ালে বা গামছা, পরিষ্কার বা স্বাভাবিক পানিতে ডুবিয়ে নিংড়ে নিয়ে তা দিয়ে সারা শরীর আস্তে আস্তে মুছে দিতে হবে। এভাবে বেশ কয়েকবার করলে তাপমাত্রা কমে আসবে। ইচ্ছে করলে মাথাও পানি ঢালতে পারেন। এরপরও জ্বর না কমলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
জ্বর আসলে কি ?
গত দু’দিন ধরে জ্বরের প্রকোপে বিপর্যস্ত। ঋতু পরিবর্তনের এই সন্ধিক্ষণে আমার মত অবস্থা অনেকেরই! তাই আজ লিখছি জ্বর কি বা কেন হয়, জ্বর কি কোনো রোগ নাকি রোগের উপসর্গ মাত্র!
সহজ কথায় জ্বর মানে হল, দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া। দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৭.৫-৯৯.৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট। অর্থাৎ ৯৯.৫ ডিগ্রীর উপরে দেহের তাপমাত্রা স্থির থাকাটাই প্রচলিত ভাষায় জ্বর। জ্বরকে অবশ্য ডাক্তারী ভাষায় বলা হয় Pyrexia বা পাইরেক্সিয়া। কারন দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানে হলো- দেহে পাইরোজেন উৎপন্ন হয়েছে।
তাহলে বলতে হয়, পাইরোজেন কি?
পাইরোজেনকে বলা হয় একধরণের তাপজীবাণুঘটিত বিষ। এর প্রধান কাজ হলো বাইরে থেকে জীবাণুরা আমাদের আক্রমণ করলে তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। পাইরোজেন যখন এই চেষ্টা করে তখন শরীরের হরমোন, এনজাইম ও রক্তকণিকাদের (মূলত শ্বেতকণিকা) খুব দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে যাতে করে বাইরের শত্রুদের ঠেকানো সম্ভব হয়। শত্রুরা আমাদের দেহে আক্রমণ করলে আমাদের দেহ থেকে প্রচুর পাইরোজেন নিঃসৃত হতে থাকে। পাইরোজেন আমাদের দেহের সব জায়গা থেকে খুঁজে খুঁজে জীবাণুদের মারতে শুরু করে।
এজন্য পাইরোজেন রক্তের মাধ্যমে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই রক্তের মাধ্যমে কিছু কিছু পাইরোজেন আবার পৌঁছে যায়, আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অঞ্চলে। হাইপোথ্যালামাস পাইরোজেনের সংস্পর্শে এলেই মস্তিষ্কের ভেতরের দিকের আর একটা অঞ্চল ‘ভেসোমোটর’-এ সংকেত পাঠায় যে, দেহে শত্রুরা আক্রমণ করেছে।
ভেসোমোটর করে কি, দেহের সব লোমকূপ দেয় বন্ধ করে, যেন আর বাড়তি কোন জীবাণু ঢুকতে না পারে। সেই সাথে আমাদের রক্তনালীগুলোকেও সংকুচিত করে দেয়, যেন পাইরোজেন সহজেই জীবাণুদের ধরে ধরে মারতে পারে। রক্তনালী সংকুচিত হলে রক্ত প্রবাহের গতি যায় বেড়ে, ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় তাপ। সাথে আমাদের দেহে ক্রমাগত কিছু তাপ তো উৎপন্ন হচ্ছেই। লোমকূপ বন্ধ থাকার ফলে আমাদের দেহের ভেতরে যে তাপ উৎপন্ন হচ্ছে, তা আর বের হতে পারে না। সবমিলিয়ে আমাদের দেহের তাপমাত্রাও যায় বেড়ে।
তার মানে দাঁড়ালো জ্বর আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থারই একটি আপদকালীন প্রতিক্রিয়া! সেই সাথে এও বুঝা গেলো জ্বর কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র! সেটা হতে পারে ছোটোখাটো কোনো অসুখ কিংবা বড়সড় কিছুর!
তাই জ্বরকে মোটেই অবহেলা নয়।
মানে তিনদিনের বেশী জ্বর থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের (হাতুড়ে নয়) কাছে দৌড় মারবেন!
মন্তব্য চালু নেই