জেনে নিন সেই হোসনী দালান সম্পর্কে (ভিডিও)

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড়ে অবস্থিত হোসেনী দালান ইমামবাড়ায় পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ‘গাহওয়ারা গাশত’ (ভোররাতের) মিছিলের জন্য সমবেত শিয়া মুসলমানদের উপর পরপর তিনটি বোমা হামলা করা হয়েছে। বোমার আঘাতে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক কিশোর শহীদ হয়েছেন। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা। এছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক।

তবে যে দালানকে নিয়ে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা সে সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেকেরই। চলুন আজ জেনে নেই হোসনী দালান সম্পর্কে।

হোসনি দালান পুরান ঢাকায় অবস্থিত ইসলাম ধর্মাবলম্বী শিয়া সম্প্রদায়ের একটি উপাসনালয় এবং কবরস্থান। প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো এ স্থাপনা মোগল আমলের ঐতিহ্যের নিদর্শন। ১৭ শ শতকে এই দালানটি নির্মিত হয়। মুসলমানদের সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পৌত্র হোসেন (রা.)-এর কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। ইমাম হোসেন (রা.)-এর স্মৃতির স্মরণে হোসনি দালান নির্মাণ করা হয়েছে। দালানটির নির্মাণকাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। তবে সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত মত হলো, শাহ সুজার সুবেদারির সময় তাঁর এক নৌ সেনাপতি মীর মুরাদ এটি হিজরি ১০৫২ সনে নির্মাণ করেন। বলা হয়ে থাকে, তিনিই ভবনটির নাম দেন ‘হোসনি দালান’। একটি উঁচু মঞ্চের ওপর ভবনটি নির্মিত।

হোসনি দালানের দক্ষিণাংশে রয়েছে একটি বর্গাকৃতির পুকুর। এর উত্তরাংশে শিয়া সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের কবরস্থান অবস্থিত। সাদা রঙের এই দালানটির বাইরের দিকে নীল রঙের লিপিচিত্রের কারুকাজ রয়েছে। নানা সময়ে সংস্কার এবং সম্প্রসারণের ফলে এই দালানটি বর্তমানের রূপ ধারণ করেছে। ইস্ট-ইন্ডিয়া কম্পানির আমলে দুই দফায় দালানটির সংস্কার হয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে খাজা আহসানউল্লাহ সংস্কার করেন।

ইরান সরকারের উদ্যোগে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে হোসনি দালানের ব্যাপক সংস্কার করা হয়। ইরানের স্থপতি ও শিল্পীরা এই সংস্কারকাজে যুক্ত ছিলেন, ফলে এই সংস্কারকাজে ইরানের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর প্রভাব পড়েছে। সংস্কারের আগে ভেতরে রং-বেরঙের নকশা করা কাচের মাধ্যমে যে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল, তা পরিবর্তন করে বিভিন্ন আয়াত ও মুদ্রা লিখিত নীল রঙের টাইলস লাগানো হয়েছে। একইভাবে এর পূর্বদিকের ফটকে এবং উত্তর দিকের চৌকোনা থামগুলোয় আয়াত ও সুরা লিখিত নীল রঙের টাইলস লাগানো হয়েছে। টাইলসগুলো ইরান থেকে আমদানি করা এবং এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইরানের ধর্মীয় শিল্পকলা ক্যালিগ্রাফি। ইরানের বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনায় এ ধরনের টাইলস রয়েছে বলে জানা যায়।



মন্তব্য চালু নেই