জেনে নিন জামিন কী, জামিন নেবেন কীভাবে?

দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তির ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। মামলায় জড়িয়ে পড়লে আদালতে উপস্থিত হয়ে তাকে জামিন নিতে হয়। জামিন দুই ধরনের। একটি হলো আগাম জামিন এবং অপরটি হলো অন্তর্বর্তীকালীন জামিন। তবে জামিন কীভাবে নেবেন এবং জামিন কী সে বিষয়টি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

জামিনের সংজ্ঞা

কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তিনি গ্রেফতার এড়াতে আদালত থেকে যে জামিন নিয়ে থাকেন সাধারণত তাকে আগাম জামিন বলে। আর কারাগারে আটক অবস্থায় মামলা নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত যে জামিন নেওয়া হয় তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বলে।

আগাম জামিন

যখন কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনায় বা গ্রেপ্তার হওয়ার অনুমানে কোনো ব্যক্তিকে জামিন দেওয়া হয়, তখন তাকে Anticipatory Bail বা আগাম জামিন বলে। অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রেফতারের আগেই আদালত থেকে জামিন নিতে পারেন। জামিনের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম হিসেবে হাইকোর্টের একান্ত এখতিয়ার অনুযায়ী এ ধরনের জামিন দেওয়া হয়। যখন কোনো ব্যক্তির নিকট বিশ্বাস করার এমন কারণ থাকে যে, তিনি কোনো জামিন অযোগ্য অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে পারেন, তখন তিনি হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করলে আদালত যদি যথাযথ মনে করেন তাহলে ওই মুহহূর্তে উক্ত ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে গ্রেপ্তার করা থেকে বিরত রাখার জন্য আগাম জামিনের নির্দেশ দেবেন।

আগাম জামিন অনুমোদন করার জন্য আইনের বিধানে কোনো নির্দিষ্ট ধারা নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারাকে ব্যাখ্যা করে পরবর্তীকালে আগাম জামিন দেওয়া অব্যাহত রাখেন আদালত। তাই আগাম জামিনের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। এই ধারার শব্দাবলি হাইকোর্ট বিভাগ যে কোনো ব্যক্তিকে জামিন মঞ্জুর করার নির্দেশ প্রদান করতে পারেন; এই অংশের ব্যাখ্যা দেন কেবল মাত্র হাইকোর্ট বিভাগ।

জামিনের শুনানিতে যা উপস্থাপন করতে হয়

আগাম জামিন পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি সরকারের বিরাগভাজন হয়ে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন। তাঁকে দেখাতে হবে যে, রাষ্ট্রপক্ষ অসৎ উদ্দেশ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চায় এবং এতে করে তাঁর সুনাম এবং স্বাধীনতায় অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। পিএলডি ১৯৮৩ সালের একটি মামলায় বলা হয়েছে, পুলিশ যে তাঁকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে গ্রেপ্তার করতে চাইছে, আদালতের সামনে তা প্রমাণ করতে হবে। ১৯৮৫ সালের নথিভুক্ত একটি মামলায় আপিল বিভাগের পূর্ণ বেঞ্চের এক সিদ্ধান্তে বলা হয়, কাউকে খাটো করার উদ্দেশ্যে বিদ্বেষমূলক মামলায় জড়ানোর আশঙ্কা থাকলে একজন ব্যক্তি আগাম জামিন পেতে পারেন। তবে আসামি যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারেন এবং আদালতের নির্দেশমাত্র হাজির হতে পারে, আগাম জামিন মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন জামিন

কোনো ব্যক্তি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত কারাগার থেকে বের হতে হলে তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে জামিনের জন্য কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে তাঁকে গ্রেফতার হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁকে জামিন আবেদন করতে হয়। জামিন নামঞ্জুর হলে দায়রা জজ এবং জেলা জজ আদালতে আসতে হয়। সেখানেও জামিন নামঞ্জুর হলে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করতে হয়। হাইকোর্টে জামিন নামঞ্জুর হলে সর্বশেষ ভরসা আপিল বিভাগের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এর প্রতিটি ধাপের যে কোনো একটি আদালতে জামিন হলে তিনি কারাগার থেকে বের হতে পারবেন। যদি না এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ বা বিরোধী পক্ষ আপিল না করে।

করণীয়

মামলায় জড়ানোর পর জামিন পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তবে এর আগে আসাসিকে প্রমাণ করতে হবে তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বা অসৎ উদ্দেশ্যে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বা হবে। তাই জামিন নেওয়া তাঁর একান্ত প্রয়োজন।



মন্তব্য চালু নেই