যে কারণে জিয়ার স্বাধীনতা পদক বাতিল করছে সরকার

আদালতের রায় অনুসরণ করে কমপক্ষে তিনটি কারণ দেখিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক বাতিল করতে চায় সরকার। এরই মধ্যে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পদক বাতিলের সুপারিশও করেছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সুপারিশ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দফতরে পাঠানো হবে।

মন্ত্রিসভা কমিটি তাদের সুপারিশে বলেছে, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তি পাওয়া উচিত। যা দেখে ভবিষ্যতে কেউ সংবিধান লঙ্ঘন করার সাহস না পায়। তা না করে যে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালের মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্র বা দেশ পরিচালিত হয়েছে সংসদ ছাড়াই। যা সুস্পষ্টভাবে একনায়কতন্ত্র। আর ওই সময়ের বাংলাদেশের একনায়কতন্ত্র সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।’

প্রসঙ্গত, জিয়াকে ২০০৩ সালে মরণোত্তর এই পদক দেওয়া হয়।

বুধবার বিকালে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি জিয়াউর রহমানকে দেওয়া মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারের মেডেল ও সম্মাননাপত্র জাতীয় জাদুঘর থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। তবে তার আগে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করবে সরকার।

ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

বুধবারের বৈঠকে কমিটি এই মতও দেয় যে, স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত ২০১৬ সাল পর্যন্ত সংশোধিত নির্দেশাবলীর সঙ্গে ২০০৩ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্তটি সাংঘর্ষিক। আর এই পুরস্কার যদি জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে আগামী প্রজন্মের কাছে ভুল ইতিহাস উপস্থাপিত হবে। তাই এটি প্রত্যাহার করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র মতে, যেহেতু জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা আরোহণকে হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট ও আপিলেট ডিভিশন অবৈধ ঘোষণা করেছেন তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আমলে নিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেওয়া মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত সদস্যদের সবার মতৈক্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, বুধবার জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে আদালতের রায় বিবেচনায় নেওয়ার পাশাপাশি স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত সংশোধিত নির্দেশমালা নিয়েও আলোচনা হয়। এসময় কমিটির সদস্যরা একমত পোষণ করেন যে- ‘স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। এই পুরস্কারের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার সময় দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসাধারণ অবদান রেখেছেন এবং বিতর্কিত নন, এমন সীমিত সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেই বিবেচনা করা হবে।’

জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি পদ বা রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ সুপ্রিম কোর্টের আদেশের মাধ্যমে অবৈধ ঘোষণার বিষয়টিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছিল, ‘১৯৭৫-এর নভেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালের মার্চ পর্যন্ত সংসদ ছাড়াই বাংলাদেশে সরকার চলেছে। একনায়কতন্ত্র হিসেবে দেশ চালিয়েছে সরকার, যেখানে ছিল না কোনও গণতন্ত্রের ছোঁয়া।’

রায়ে আরও বলা হয় ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তি পাওয়া উচিত। যেন মানুষ সংবিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ভয় পায়।’

উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জামায়াতসহ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় এই পুরস্কারের মেডেল ও সম্মাননাপত্র জিয়াউর রহমানের কোনও উত্তরাধিকারীকে না দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের এক পাশে যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে সেগুলো জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।



মন্তব্য চালু নেই