জামিনে মুক্তি পাওয়া আট শতাধিক জঙ্গীর দ্বারাই গুপ্ত হত্যা!

দুই হাজার জঙ্গী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখন পুলিশের হাতে। এসব জঙ্গীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর ডাটাবেজে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে জঙ্গী সংক্রান্ত তথ্যে প্রায় পুরোপুরি সমৃদ্ধ হতে যাচ্ছে ডাটাবেজটি। তাতে জঙ্গীর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ডাটাবেজে থাকা জঙ্গীদের বিস্তারিত কয়েক দফায় যাচাই বাছাই শেষে অনেককে টিএফআই (টাস্ক ফোর্স ফর ইন্টারোগেশন) সেলে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসতে পারে ব্লগার, লেখক, প্রকাশকসহ জঙ্গীদের হাতে নৃশংস হত্যার অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

দেশব্যাপী চলমান সাঁড়াশি অভিযানে আটক জঙ্গীদের যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। সংগঠন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে জঙ্গীদের তালিকাভুক্ত করার কাজ চলছে। গত পাঁচ দিনে গ্রেফতারকৃত ১৬৬ জঙ্গীর মধ্যে ১২০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জঙ্গী বলে নিশ্চিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে পিলে চমকানোর মতো তথ্য। সেসব তথ্য অনুযায়ী অভিযান চলছে। জঙ্গী বলে নিশ্চিত হওয়াদেরই প্রযুক্তিনির্ভর ডাটাবেজের আওতায় আনা হচ্ছে। সন্দেহভাজন অন্যরা জঙ্গী কিনা সে বিষয়ে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১০ জুন থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী জঙ্গী নির্মূলে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২১ জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। এরমধ্যে ১৭ জেএমবি, ১ হিযবুত তাহরীর, ২ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এবং একজন হরকত-উল-জিহাদ (হুজি) জঙ্গী সংগঠনের সদস্য। এ নিয়ে কয়েক দিনের টানা অভিযানে ১৬৬ জঙ্গী গ্রেফতার হলো।

পুলিশ সদর দফতরের গোপনীয় শাখার সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারকৃতদের নানাভাবে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এরমধ্যে জঙ্গী সন্দেহে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কয়েক দফা যাচাই বাছাই করা হয়েছে। যাচাই বাছাই শেষে ১২০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এই ১২০ জঙ্গী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই ১২০ জনের কাছ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তারা কোন সংগঠনের সেই সংগঠন অনুযায়ী তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। জঙ্গী সন্দেহে গ্রেফতারকৃত অন্যদের যাচাই বাছাই করার কাজ চলছে। শুধুমাত্র যারা সত্যিকারের জঙ্গী তাদেরই জঙ্গী সংক্রান্ত প্রযুক্তিনির্ভর ডাটাবেজের আওতায় আনা হবে। হালে জঙ্গী ডাটাবেজে স্থান পেয়েছে ২ হাজার জঙ্গী। তাদের সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য রয়েছে। আগামী জুলাইয়ে জঙ্গী সংক্রান্ত ডাটাবেজ আরও সমৃদ্ধ হবে। ডাটাবেজে থাকা জঙ্গীদের কয়েক দফা যাচাই বাছাই করে একটি আলাদা তালিকা করা হবে। সেই তালিকায় থাকা জঙ্গীদের টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসতে পারে সম্প্রতি ব্লগার, প্রকাশক, লেখক ও শিক্ষকসহ নৃশংস হত্যাকা- সম্পর্কিত নানা রহস্য।

পুলিশ সদর দফতর ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সাঁড়াশি অভিযানে দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর লাপাত্তা হওয়া জঙ্গীদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। এমন জঙ্গীর সংখ্যা অর্ধ শতাধিক। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর লাপাত্তা হয়ে গেছে আট শতাধিক জঙ্গী। তারা আত্মগোপনে থেকে একের পর এক নৃশংস হত্যাকা- ঘটাচ্ছে। এই ৫০ জঙ্গী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। দেশব্যাপী চলমান সাঁড়াশি অভিযান শেষ হওয়ার পরেই পর্যায়ক্রমে এই ৫০ জঙ্গীকে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বিদেশে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গীদের সম্পর্কেও কাজ চলছে। পলাতক জঙ্গীরা যেসব দেশে রয়েছে, সে সব দেশকে এ সংক্রান্ত তথ্যাদি পাঠিয়ে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে বিদেশে পলাতক জঙ্গীদের গ্রেফতার করে হস্তান্তরের আবেদন করার প্রক্রিয়া চলছে। এ সংক্রান্ত একটি পৃথক প্রোফাইল তৈরি হচ্ছে পুলিশ সদর দফতরে।

পুলিশ সদর দফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দেশে যত জঙ্গী ও উগ্র মৌলবাদী সংগঠন রয়েছে, তাদের প্রতিটির নামে একটি করে গোপনীয় ফাইল খোলা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে আলাদা আলাদা ডাটাবেজ। সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জঙ্গী সংক্রান্ত তথ্য পুলিশ সদর দফতরের একটি বিশেষ সেলে জমা দিতে বলা হয়েছে। এমনকি জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যও জমা দিতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দফতরের সেই বিশেষ সেলে। এমনকি জঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে জঙ্গী আস্তানায় এবং অন্য জঙ্গীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালানোর জন্য অনেকটা লিখিত অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জঙ্গীরা নানা নামে পরিচিত। এজন্য তাদের গ্রেফতার করা কঠিন। তাই জঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে সরাসরি দেখানো মতে জঙ্গীদের গ্রেফতার করার কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে যেকোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরাসরি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর বলছে, ডাটাবেজে জঙ্গী সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য রাখা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত জঙ্গীদের বিভিন্ন মামলায় দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। জঙ্গীবাদ সম্পর্কিত আদ্যোপান্ত রয়েছে সেই ডাটাবেজে। চলমান সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের যাচাই বাছাই শেষে যারা জঙ্গী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। জঙ্গী শনাক্ত করার এটি সহজ উপায়। কারণ জঙ্গীদের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়ে থাকে।

জঙ্গী ডাটাবেজ ছাড়াও নৃশংস হত্যার দায় স্বীকারের সঙ্গে জড়িত সাইট ইন্টেলিজেন্সের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে গভীর তদন্ত করছে। এ সংক্রান্ত অতি জরুরী গোপন ফাইল খোলা হয়েছে। সেই ফাইলে সাইট ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই সাইট ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে যোগাযোগকারী দু’জন প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে। যারা বাংলাদেশী। তারা একটি বিশেষ ইসলামী রাজনৈতিক দলের সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দারা। তারা একেক সময় একেক ভাষায় সাইট ইন্টেলিজেন্সের হয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে যোগাযোগ রাখছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, চলমান সাঁড়াশি অভিযানে রাজধানী থেকে ৬ জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হতে পারে। এ এ ছয়জনকে টিএফআই সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। জনকণ্ঠ



মন্তব্য চালু নেই