‘এই অভিযান লোক দেখানো, ১৫০ জন জঙ্গি এমনিই ধরা যেত’

বাংলাদেশের জঙ্গি হামলা বন্ধের লক্ষ্যে যখন দেশজুড়ে অভিযান চলছে ঠিক সেই সময়ে বুধবার মাদারিপুরে একজন অধ্যাপককে কুপিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। সপ্তাহব্যাপি এই পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। অভিযান শুরু প্রথম দিনে পাবনায় একটি হিন্দু সেবা আশ্রমের একজন সেবককে হত্যা করা হয়। এই দুই ঘটনায় পূর্বের ঘটনার সাথে জঙ্গি তৎপরতার মিল রয়েছে।

পুলিশি অভিযানের মধ্যে এ ধরণের ঘটনা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসর প্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যারা এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে তার একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য করে এবং উদ্দেশ্য নিয়ে এই হামলা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের পুলিশ যে অভিযান চালাচ্ছে, সেখানে পুলিশ তো জানে না যে তারা কোথায় হামলাটা করবে। আগাম তথ্য যেটা থাকার কথা সেই তথ্যই আমাদের পুলিশের কাছে নেই। সুতরাং আমি মনে করি এই সকল সংগঠনগুলো পুলিশকে এক ধরণের চ্যালেঞ্জ করে বলছে যে, এই ধরণের অভিযানে কোনো কিছু হবে না এবং আমাদেরকে নিবৃত করা যাবে না।

তিনি বলেন, এই ধরণের সংগঠনের কর্মীদের লক্ষ্য ‘কর নয়তো মরো’। সুতরাং যারা এই ধরণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে তাদেরকে দমন বা নিবৃত করা খুবই কঠিন ব্যাপার। পুলিশের এই অভিযান কোনোভাবে তাদের কর্মকা- বন্ধ করতে পারছে না। আমার মনে হয় পারবেও না।

পুলিশ বলছে আমরা জঙ্গিদের ঐক্যবদ্ধ হতে দেব না বলেই এই অভিযান। সেটা কতটা অর্জিত হচ্ছে বলে মনে করেন?

জবাবে সাখাওয়াত বলেন, আমরা জানি ৪ দিনে পুলিশ ১১ হাজার সন্দেহভাজন গ্রেফতার করেছে যাদের মধ্যে মাত্র ১৫০ জন জঙ্গি। আমার কথা হলো জারা জঙ্গি তারা কী গ্রেফতার হওয়ার জন্য বসে থাকবে? তাদেরকে এইভাবে ধরা যাবে না।

জঙ্গিবিরোধী অভিযান করে ১১ হাজার গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে যদি ১ হাজারও দাগী আসামি হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে ধরার জন্য ঘটা করে এই অভিযান করে ধরার কোনো মানে হয় না। সাধারণভাবে প্রতিদিন পুলিশের যে অভিযান চলে তার মধ্য দিয়েই এই অপরাধীদের ধরা সম্ভব।

তিনি বলেন, যারা সক্রিয় জঙ্গি এবং যারা এই ধরণের হত্যাকা-ের সাথে জড়িত তাদেরকে এইভাবে ধরা সম্ভব না। এদেরকে যে বড় সংগঠনের কথা বলা হয়েছে এরা কোনো ভাবেই বড় সংগঠন না। এরা ৩ জন ৪জন কিংবা ৫ জনের একটি ছোট দল। এখন এই ছোট ছোট দলগুলো ধরা বা ভাঙ্গা খুবই কঠিন। বিশ্বের উন্নত দেশেও অনেক জায়গায় জঙ্গি হামলা হয় কিন্তু সেই সকল উন্নত দেশেও বাংলাদেশের মত এই ভাবে ঢালাওভাবে জঙ্গি ধরা হয় না। তাই আমি মনে করি পুলিশ যে কাজটি করছে এটা অনেকটা লোক দেখানো যে আমরা তৎপর আছি বা কাজ করছি।

ঘোষণা দিয়ে এই ধরণের বড় অর্ভিযান এবং এই অভিযানে অনেকে গ্রেফতারও হচ্ছে তাহলে এই অভিযান কতটা সফল হচ্ছে?

জবাবে সাখওয়াত হোসেন বলেন, অভিযান যাদের জন্য করা তাদের তো নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। ঘোষণা দিয়ে অভিযান চালালে জঙ্গিদের ধরা যাবে না। কারণ তারা ঘোষণা পাওয়ার পরেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। অথবা জনগণের সাথে মিশে গেছে। যারা এইসব করছে তাদের সম্পর্কে হয়তো পুলিশের কাছে কোন তথ্যই নেই।

তিনি বলেন, এই অভিযানের ফলে যে জঙ্গিবাদ বন্ধ হয়ে যাবে বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেরকমের কোনো কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কারণ, তাদের এই ১ সপ্তাহ অভিযানের মধ্যে ১টি হত্যা এবং একটি হত্যার চেষ্টা যা প্রমাণ করে পুলিশের এই ধরণের অভিযান করে জঙ্গিদমন করা যাবে না।



মন্তব্য চালু নেই