প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকছে না সরকারি কলেজ

সরকারি কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোকে বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। একই সঙ্গে গৃহীত ব্যবস্থাও জরুরি ভিত্তিতে জানাতে বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি শিক্ষাসচিবকে চিঠি দিয়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে গত শনিবার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েই আছে। এখন তা বাস্তবায়নে শিগগিরই সভা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সূত্রমতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেক (৪৮ শতাংশ) অধিভুক্ত কলেজগুলোতে পড়ছেন। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি-বেসরকারি কলেজ আছে ২ হাজার ১৫৪টি। এর মধ্যে ২৭৯টি সরকারি কলেজ। স্নাতক (সম্মান) পড়ানো ১৮১টি সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ২৬ হাজার। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সম্মান পড়ানো কলেজের সংখ্যা ৫৫৭টি। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হারুন-অর রশিদ।

সূত্রমতে, শিক্ষার্থী ও কলেজের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোকে ঠিকমতো দেখভাল করতে পারছে না। তা ছাড়া যে চিন্তা থেকে দুই দশক আগে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা পূরণে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।

এসব কারণে ২০০৯ সালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কাঠামো ভেঙে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু ওই সময় সরকারি দল-সমর্থক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপককে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য এবং একজন বেসরকারি শিক্ষক নেতাকে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার পর তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে রক্ষার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু শেষমেশ তাঁরা ব্যর্থতার অভিযোগ নিয়ে বিদায় নেন। এরপর কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হয়নি। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সেশনজট লেগে আছে। ১৪ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

গত বছর প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক প্রতিবেদনেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোকে বিভাগীয় পর্যায়ে পুরোনো বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়।

এ রকম পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী গত বছরের ৩১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করতে গিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থিত সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

কিন্তু এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি ঢিলেমি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ৭ ডিসেম্বর ইউজিসিতে উপাচার্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় পক্ষে মত এলে তা বাস্তবায়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মাদ মোহাব্বত খানকে। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ মাসের বেশি সময় পরও দিতে পারেনি। এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আবার এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে তাগিদ দিল।



মন্তব্য চালু নেই