ছিটমহল বিনিময়ে সীমান্ত বিল রাজ্যসভায় পাস

বাংলাদেশের কাছে বহু প্রতীক্ষিত সীমান্ত বিল পাস হয়েছে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায়, যা ছিটমহল বিনিময়ের পথ প্রশস্ত করল।

নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বিলটি বুধবার রাজ্যসভায় সর্বসম্মতভাবে পাস হয় বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভূমি বিনিময়ে ভারতের সংবিধান সংশোধনের এই বিলে ১৮০ সদস্য পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে কোনো ভোট পড়েনি।

রাজ্যসভায় পাস হওয়া বিলটি এখন লোকসভায় যাবে। বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকসভায় বিলটি পাস হলে দুর্ভোগের অবসান ঘটবে বলে আশায় আছেন দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের বাসিন্দারা।

বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার এবং ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।

গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া মোদী দুই দেশে অনিষ্পন্ন এই সমস্যার সমাধান করেই ঢাকা সফরে আসতে চাচ্ছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর।

আসাম বিজেপির পক্ষ থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতার মুখে চুক্তি থেকে আসামের ছিটমহলগুলো বাদ দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিবেচনা করছেন বলে এর আগে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এরপর স্থল সীমান্ত চুক্তি থেকে আসামকে বাদ না দিতে মোদীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ।

আসামকে বাদ দিলে রাজ্যসভায় এ বিল পাসে সমর্থন দেওয়া হবে না বলে ইঙ্গিতও দিয়েছিল কংগ্রেস, যারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এই বিল পার্লামেন্টে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর বাসভবনে এক বৈঠকে আসামকে রেখেই প্রস্তাবটি পাসের জন্য তোলার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মোদীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার ভারতের মন্ত্রিসভা সংবিধান সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করে।

আগামী ৮ মে লোকসভার চলতি অধিবেশন শেষে চীন, মঙ্গোলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী। এরপর জুন বা জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসতে চান তিনি।

তবে ভারতীয় কূটনীতিকরা ইংগিত দিয়েছেন, ‘খালি হাতে’ ঢাকা সফরে যাওয়া মোদীর ‘ঠিক হবে না’। এ কারণে লোকসভার চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস করিয়ে আনতে মোদীর এই তাড়াহুড়ো।

ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে পরিচিত ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

এর আওতায় বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় এবং ছয় দশমিক এক কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমানা চিহ্নিত হওয়ার কথা।

বাংলাদেশ ওই চুক্তিতে অনুসমর্থন দিলেও জমি হস্তান্তরে ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হওয়ায় বিষয়টি আটকে থাকে। ভারতের বিগত কংগ্রেস সরকার কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও বিজেপি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় রাজ্যসভা ও লোকসভায় তা পাস করাতে ব্যর্থ হয়।

এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অংশ হিসাবে ৬৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নেন। শুরু থেকে আপত্তি করে আসা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও নানা চাপের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেন।



মন্তব্য চালু নেই