‘ছাত্রলীগের পাঁচটা ছেলের সঙ্গে পারো না, আবার কিসের আন্দোলন’ (ভিডিও)

‘বাঁচাও সুন্দরবন’ স্লোগানে সাইকেল মিছিলটি এগোনোর পথে বাধা দেওয়ার এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদেরকে উদ্দেশ করে পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বলেন,‘ছাত্রলীগের পাঁচটা ছেলের সঙ্গে পারো না, আবার কিসের আন্দোলন।’ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে শুরুতেই ছাত্রলীগ কর্মীদের বাধার মুখে সাইকেল মিছিল সফল করতে পারেননি আন্দোলনকারীরা। এ সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের বেশ কয়েকবার হাতাহাতি হয়। কাছেই পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও দু’পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেনি তারা বরং মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা এগোতে গেলে তাদের বাধা দেয়।পরে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবে অবস্থান নিলে সেখানেও বাধা দেয় পুলিশ।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে আয়োজিত সাইকেল মিছিল কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে। মিছিল শুরু করতে গেলে ছাত্রলীগ পুরো শহীদ মিনার এলাকা ঘিরে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকেও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

এ প্রসঙ্গে ‘সুন্দরবন বাঁচাও সাইকেল মিছিল’ এর সমন্বয়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘মিছিল শুরুর সময়ই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ মানববন্ধন শুরু করে। তারা শহীদ মিনার ঘিরে রাখে। শহীদ মিনার থেকে নেতা-কর্মীদের বের হতেও তারা বাধা দেয়। আমাদেরকে অবরুদ্ধ অবস্থায় রাখে।’

এদিকে সুন্দরবন বাঁচানোর দাবিতে আয়োজিত সাইকেল মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগ শহীদ মিনারে একটি মানববন্ধন করেছে। ছাত্রলীগের মানববন্ধনের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমরা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চাই।’ পরে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে একটি মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে আসে।

‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চাই’ ব্যানারে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। সে অনুযায়ী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুন্দরবন থেকে ৬০-৬১ কিলোমিটার দূরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, এতে বনের কোনও ক্ষতি হবে না।’

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের মিছিলে যোগ দিতে সাইকেলে আরও মানুষ যোগ দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা সাইকেল নিয়ে মিছিল করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও বাধা দিলে পুলিশ সরে আসে।

ঢাবি মহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মো.ইমরান বলেন,‘আমরা রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন করছি। এই কর্মসূচি আগেই আমরা ঘোষণা করেছিলাম। সে অনুযায়ী এখানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রুম্মন হোসেন বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনও ক্ষতি হবে না। আমরা চাই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হোক। এখানে আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করছি। কিন্তু যারা রামপালের বিরোধিতা করছে, তারাই গায়ে পড়ে এসে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে। আমাদের কর্মসূচি পণ্ড করার জন্য তারা ধাক্কাধাক্কি করছে।’

শাহাবাগ থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এখানে দু’পক্ষই তাদের নিজ নিজ দাবি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। আমরা কাউকেই বাধা দিচ্ছি না। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। যারা যেদিকে যেতে চাইবে প্রটোকল দিয়ে তাদের সেদিকে নিয়ে যাওয়া হবে। আমাদের পক্ষ থেকে কোনও বাধা নেই। তবে এখানে অনুষ্ঠান করার জন্য দু’পক্ষের কেউই শাহাবাগ থানার অনুমতি নেয়নি। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছে কিনা সে বিষয়টি জানা নেই।’

এদিকে শহীদ মিনারে বাধার মুখে পড়ে সাইকেলের বদলে পায়ে হেঁটে মিছিল করে প্রেসক্লাবের যায় আন্দোলনকারীরা। সেখানেও তাদের অবস্থান করতে বাধা দেয় পুলিশ। বাধার মুখে পড়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এসময় প্রেসক্লাবের সামনে দায়িত্বরত অতিরিক্ত উপ কমিশনার আজিম আন্দোলনকারীদের বলেন,‘কিছু বলি না, কি মনে করছো, তাড়াতাড়ি পাঁচ মিনিট।’
এসময় আন্দোলনকারীরা তাকে বলেন,‘আপনারা যা পারেন করেন, আমরা দেখি।’

জবাবে অতিরিক্ত উপ কমিশনার আজিম আন্দোলনকারীদের বলেন, ‘কী দেখবি ব্যাটা,ছাত্রলীগের পাঁচটা ছেলের লগে পারছ না,কী দেখবি।আবার বড় বড় কথা বলে।’

এরপর আন্দোলনকারীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন প্রেসক্লাবের সামনে। সেখানে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘যাদের নৈতিক সাহস থাকে তাদের শক্তির দরকার হয় না, গুণ্ডাপাণ্ডা ভাড়া করতে হয় না। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন চলছে যুক্তির জোরে, নৈতিক সাহসের উপর ভর করে। সুন্দরবন ঘেরাও হয়েছে দস্যুদের দ্বারা, আজকে আমরাও ঘেরাও হয়েছি দস্যুদের দ্বারা। সুন্দরবন মুক্ত হবে, বাংলাদেশ মুক্ত হবে। যারা আজকে সাইকেল নিয়ে এসেছে তারা বাধার মুখে পড়েছে।আরও জোরদারভাবে আন্দোলন অব্যহত থাকবে।’

প্রসঙ্গত, সুন্দরবন বাঁচানোর দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ নানা পেশাজীবীরা এই সাইকেল মিছিলের আয়োজন করে। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মোহাম্মদপুর, সংসদ ভবন, ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।



মন্তব্য চালু নেই