চুইংগাম নিষিদ্ধ সিঙ্গাপুরে

প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে সিঙ্গাপুরের নাম বেশ পরিচিত। তবে ছোটো একটি নৌ-বন্দর থেকে বিশাল বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে সিঙ্গাপুরকে উঠে আসতে পারি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। আর এই বর্তমান সিঙ্গাপুর হয়ে ওঠার পেছনের কারিগর লী কুয়ান ইয়ে নামের এক সিঙ্গাপুরবাসী। দেশের উন্নতির প্রশ্নে অনেক পরিকল্পনা কিংবা সিদ্ধান্ত এই মানুষটির মাথা থেকেই এসেছে। এমনকি সিঙ্গাপুর থেকে চুইগাম নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও তার মাথা থেকেই এসেছে। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত লী কুয়ানের।

১৯৯২ সালে সর্বপ্রথম সিঙ্গাপুরে চুইংগাম নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। সেসময় বিদেশি সাংবাদিকরা এই বিষয়টি নিয়ে লী কুয়ানের সঙ্গে আলোচনার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কুয়ানের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সদুত্তর দেয়া না হলেও পরবর্তী সময়ে মার্কিন লেখক টম প্লেটের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় বিষয়টি তিনি তুলে ধরেন।

যদিও সিঙ্গাপুরে চুইংগাম নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রতিবাদ বা সমাবেশ হয়নি। কারণ কুয়ান গোটা সিঙ্গাপুরকে এমন একটি উন্নত মডেল হিসেবে তৈরি করেছেন যে, কোনো অনৈতিক সিদ্ধান্ত বা নৈতিক সিদ্ধান্ত দেশটির তৃনমূল পর্যায়ে আলোচিত হওয়ার পরেই তা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনায় আসে। তাই চুইংগামের বিষয়টি নিয়ে কোনো তর্ক-বিতর্ক হয়নি। দেশটিতে গ্রাফিটি, রাস্তায় থুথু-সর্দি ফেলা, প্রসাব করা, যত্র-তত্র গাড়ি পার্কির করা ইত্যাদি বেশ কঠোর ভাবেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

১৯৬৫ সালে যখন সিঙ্গাপুর স্বাধীনতা লাভ করেন তখন হাতে গোটা কিছু সম্পদ ছিল দেশটির হাতে। তৎকালীন সময়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লী কুয়ান। ক্ষমতায় বসার পরপরই তিনি টিকে থাকার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেন। এই পরিকল্পনার ফলেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে সিঙ্গাপুর কথিত তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তবে বাণিজ্যিক উন্নয়নের আগে সিঙ্গাপুর নজর দেয় তার দেশের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে।

টম প্লেটের বই থেকে জানা যায়, ‘এটা সত্যিকার অর্থেই অ্যান্টি ইউটোপিয়ান। লী কুয়ান ও তার দল অগের সকল ধ্যান ধারণাকে শত্রু হিসেবে গণ্য করে প্রগতির দিকে এগিয়ে যান। তার এই উন্নয়ন পরিকল্পনা এতটাই শক্তিশালী যে ইউটোপিয়াও বেশ সাধারণ একটা ব্যাপার হয়ে যায়। আর এই সাধারণ হিসেব অনুযায়ীই দেশ থেকে চুইংগাম নিষিদ্ধ করা হয়।’

এরকম অনেক আইনের ফলে এবং জনপ্রিয়তার কারণে পরবর্তী ৩১ বছর পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন লী কুয়ান। প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে অবসরে চলে যাওয়ার পরেও ‘সিনিয়র মিনিষ্টার’ হিসেবে দেশের ক্ষমতার ভরকেন্দ্র ধরে রেখেছেন। চুইংগাম নিষিদ্ধের ব্যাপারে একবার বেশ যুক্তিযুক্তভাবেই বক্তব্য তুলে ধরেন লী কুয়ান, ‘আমাদের সাবওয়ের ট্রেনের দরজায় চুইংগাম লাগার কারণে অনেক সময় দরজা খুলতে সমস্যা হয়। আমি এটাকে কোনোভাবেই ভালো বলবো না। এটাকে আমি খারাপ কাজ হিসেবেই চিহ্নিত করবো। আপনি চুইংগাম খাওয়ার বদলে একটা কলা খেতে পারেন।’



মন্তব্য চালু নেই