চুইংগামে ঢেকে যাবে ভূ-পৃষ্ঠ

মিডিয়া আমাদের জীবন যাত্রার বিভিন্ন অনুসঙ্গ পাল্টে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখন মিডিয়াতে বেশ ঘটা করে দেখানো হয় মানুষের মুখে দুর্গন্ধ হলে কি করতে হয়। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী মানুষের মুখে দুর্গন্ধ হলে সুগন্ধিযুক্ত চুইংগাম চিবুতে হয়। পাশাপাশি এটাও বলা হয় যে, চুইংগাম চিবুলে চোয়াল শক্ত হয়, যাতে আপনি একটা কথার জায়গায় দশটা কথা বলতে পারেন। এরকম অনেক উপায়েই চুইংগামকে পৌছে দেয়া হচ্ছে আমাদের শিশুদের হাতে। শুধু শিশু বললে ভুল হবে বুড়ো হাবড়ারাও আজকাল ফোকলা দাত দিয়ে দিব্যি দেধারছে চিবিয়ে যাচ্ছে চুইংগাম।

চুইংগামকিন্তু যারা আমরা দেধারছে চুইংগাম চিবুচ্ছি তারা কি জানি, এই চুইংগামের উৎপত্তি আছে কিন্তু শেষ নেই। পৃথিবীতে আজ অবধি যতগুলো চুইংগাম উৎপাদিত হয়েছে তার একটিও নষ্ট হয়ে যায়নি। এর সবই প্রকৃতিতে রয়ে গেছে অথবা মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। তাই বলে কিন্তু পঁচে যাচ্ছে না চুইংগামগুলো। কিন্তু নগররাষ্ট্রগুলোতে এক টুকরো মাটি পাওয়া দুষ্কর, সেখানে খেয়ে ফেলে দেয়া চুইংগাম কোথায় যাবে?

পরিবেশ বিষয়ক বিজ্ঞানীদের মতে, আগামী ২০৪৭ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বের ভূ-পৃষ্ঠ ঢেকে যাবে চুইংগামে। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, এখনই বিশ্ববাসীর উচিত চুইংগামকে বয়কট করা এবং এটা নিষিদ্ধে এগিয়ে আসা। উন্নত দেশগুলোর শহর কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর জনগণের কাছ থেকে নেয়া ট্যাক্সের একটা বিশাল অঙ্ক খরচ করে রাস্তা থেকে এই চুইংগাম অপসারণের জন্য। মনে রাখা দরকার, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ সিঙ্গাপুর ইতোমধ্যেই চুইংগাম নিষিদ্ধ করেছে।

আপনি হয়তো বা ভাবছেন আপনারই ফেলে দেয়া চুইংগামের আয়তনইবা আর কতটুকু যে এই পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠকে ঢেকে ফেলবে। কিন্তু এরকম সবাই যদি ভাবতে শুরু করে তাহলে ২০৪৭ সাল শুরুর আগেই চুইংগামে ঢেকে যাবে গোটা বিশ্ব। অনেকেই আছেন যারা চুইংগাম গিলে ফেলেন এই ভেবে যে, পেটের মধ্যে থাকা এসিড চুইংগামটিকে ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু এই ধারণা খুবই ভুল কারণ চুইংগাম যে পাস্টিক পদার্থ দিয়ে তৈরি সেটা মানুষের পাকিস্থলীতে থাকা এডিস ধ্বংস করতে পারে না।
LONDON২০০৫ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যায়, প্রতিবছর ছয় লাখ পঁঞ্চাশ হাজার মেট্রিক টন চুইংগাম উৎপাদিত হয় গোটা বিশ্বে। শুধু ২০০৫ সালেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে গত ১০ বছরে কি পরিমান চুইংগাম উৎপাদিত হয়েছে তা একটু চিন্তা করলেই অনুমান করে নেয়া যায়। শুধুমাত্র ৩৭৪ ট্রিলিয়ন স্টিক গামই তৈরি হয় প্রতিবছর, যার আয়তন হিসেব করলে দাড়ায় প্রায় ২৩ লাখ ৫ হাজার ৮০০ মাইল লম্বা। উল্লেখ্য, এরমধ্যে নেই অন্যান্য চুইংগাম। সিগারেটের ফেলে ধেয়া অংশের পর চুইংগাম হলো পৃথিবীর জন্য দ্বিতীয় ক্ষতিকর উপাদান।

গবেষকদের কল্যাণে আমরা এখন জানতে পেরেছি যে প্রায় ১৬শ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া আমাদের চারপাশে উপস্থিত। এরমধ্যে কিছু আমাদের কাশি, ঘাম, অপরিচ্ছন্ন হাত, বাসী খাবার, চুইংগাম এবং অসুস্থ ব্যাক্তির শরীর থেকে নির্গত ফ্লুইড থেকে ছড়ায়। তাহলে একবার ভেবে দেখুন আপনার চারপাশে প্রতিনিয়ত কত মানুষ তাদের চিবিয়ে ফেলা চুইংগাম রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে কিংবা হাতে নিয়ে খেলা করছেন। অথবা শিশুদের কথাই যদি ভাবেন, তারা চুইংগাম নিয়ে যে পরিমান খেলাধুলা করে তাতে অতিদ্রুত তারা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনের শিকার হচ্ছে। তাই সময় থাকতেই চুইংগামকে পরিহার করে পরিবারকে সুস্থ এবং পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখা সম্ভব।



মন্তব্য চালু নেই