চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে শেষে বাবার কাঁধেই মৃত্যু!

কিশোর ছেলেকে কাঁধে নিয়ে হাসপাতালের এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে ছুটছেন এক ব্যক্তি। এক চিকিৎসক পাঠাচ্ছেন আরেক চিকিৎসকের কাছে। গুরুতর অসুস্থ সন্তানকে নিয়েই ছুটছেন বাবা। তবে শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা জুটল না শিশুটির। বাবার কাঁধেই মৃত্যু হলো তার।

হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের কানপুর এলাকায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের কানপুর এলাকার মিস্ত্রি সুনীল কুমার। গত শুক্রবার ছেলে আনসকে (১২) নিয়ে চিকিৎসকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে তাঁকে।

পেশায় মেকানিক সুনীল কুমার বলেন, প্রচণ্ড জ্বরে পড়া ছেলেকে দুদিন স্থানীয় ক্লিনিকে রাখেন তিনি। পরে নিয়ে যান স্থানীয় এক হাসপাতালে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। দ্রুত সন্তানকে শহরের হাল্লাত সরকারি হাসপাতালে নেন সুনীল।

সুনীল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, গুরুতর অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে তাঁকে আধাঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। কোনো ডাক্তারই তাঁর ছেলেকে পরীক্ষা করে দেখেনি। পরে তাঁকে যেতে বলা হয় ২০০ মিটার দূরবর্তী শিশুদের ওয়ার্ডে। ওই সময় তাঁকে কোনো স্ট্রেচারও দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে সন্তানকে কাঁধে নিয়েই শিশু ওয়ার্ডে ছোটেন সুনীল। আর তাঁর এই ছুটে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন এক প্রতিবেদক।

আনসকে শিশু ওয়ার্ডে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানান, তাকে কয়েক মুহূর্ত আগে সেখানে নেওয়া হলেও বাঁচানো যেত।

আনসের বাবা সুনীল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শিশু ওয়ার্ডে যেতে আমার নয় মিনিট সময় লেঘেছে, এরই মধ্যে কীভাবে তাঁর মৃত্যু হলো।

হাল্লাত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আনসের মৃত্যু হয়েছিল। হাসপাতালটির প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা আরসি গুপ্তা বলেন, তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে তার কোনো হার্টবিট পাওয়া যায়নি, নাড়ির কোনো স্পন্দনও ছিল না।

উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনৌ থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকায় শিশুর এমন মৃত্যুর ঘটনায় দুটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের সরকার।

উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবিদাস মালহোত্রা বলেন, এ জন্য দায়ী কেউ রক্ষা পাবে না।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, চিকিৎসার জন্য বাবার কাঁধে শিশুর এই মৃত্যু দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার দুরবস্থার অবস্থা আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিল।

এর আগে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় স্ত্রীর মরদেহ ঘাড়ে বয়ে ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন এক ব্যক্তি। একই রাজ্যে অপর একটি ঘটনায় হাসপাতালের যানের অভাবে মরদেহ ভেঙে ছোট করে নিয়ে যান স্বজনরা। ওই ঘটনায় ভারতের চিকিৎসা খাতে সরকারি অব্যবস্থাপনার তীব্র সমালোচনা হয়।



মন্তব্য চালু নেই