চার মাসেও শুনানি নেই সাঈদীর মামলার রিভিউ

জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদনের চার মাস পার হলো। তবে এখনো শুনানি শুরু হয়নি।

গত জানুয়ারিতে সরকার ও আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন করে। ১২ জানুয়ারি করা রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালের দেয়া সাঈদীর সর্বোচ্চ সাজা বহাল চেয়েছে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ ১৭ জানুয়ারি করা তাদের রিভিউ আবেদনের সাঈদীর খালাস চায়।

চার মাস হয়ে গেলেও সেই আবেদনের শুনানি হয়নি এখনো। শুনানির জন্য আবেদনও করেনি রাষ্ট্র কিংবা আসামিপক্ষ।

সদ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদনের ছয় দিনের মাথায় তা শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। গত ২৯ মার্চ রিভিউ আবেদন দাখিল করেন নিজামী। এর পরদিন ৩০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ আবেদনটির ওপর শুনানির দিন ধার্য করার আবেদন করে। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকাভুক্তির আদেশ দেন। আদেশ অনুযায়ী ৩ এপ্রিল নিজামীর রিভিউ আবেদন কার্যতালিকাভুক্ত হয়।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্র্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, রিভিউ শুনানির দিন নির্ধারণ করা আদালতের এখতিয়ার। তবে পর্যায়ক্রমে এমনিতেই শুনানিতে আসবে সাঈদীর রিভিউ আবেদন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি শেষে দণ্ড কার্যকর হয়েছে। সেগুলোর কোনোটিতেই শুনানির জন্য এতদিন অপেক্ষায় থাকতে হয়নি।

খোজঁ নিয়ে দেখা যায়, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি হয়েছে এক দিনের মধ্যে। আরেক সহকারী সেক্রেটারি জোনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ শুনানি হয় এক মাসের মধ্যে। আর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের শুনানি হয়েছে আবেদন করার এক মাসের মাথায়।

কাদের মোল্লা ছাড়া বাকি চারটি রিভিউয়ের শুনানির জন্য তারিখ চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছিল। তবে সাঈদীর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ এ ধরনের আবেদন এখনো করেনি।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাঈদীর আপিলের সংক্ষিপ্ত রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সংক্ষিপ্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ওই রায় দেন। অন্য চার বিচারক হলেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে আংশিকভাবে মঞ্জুর করা হয় সরকার ও আসামিপক্ষের করা দুই আপিল। বিচারিক আদালতে প্রমাণিত মোট আট অভিযোগের তিনটিতে আপিলে খালাস পান সাঈদী। আর বাকি পাঁচটির মধ্যে তিনটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও দুটিতে তাকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেন আপিল বিভাগ।

আপিলের রায়ে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরের বাধ্য করা এবং এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতার মতো অপরাধে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই তিন অপরাধের মধ্যে ১০ নম্বর অভিযোগে বিসাবালীকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল।

ট্রাইব্যুনাল ৮ নম্বর অভিযোগে হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে সাঈদীকে ফাঁসির রায় দিলেও আপিল বিভাগ অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অন্য অংশের জন্য খালাস দেন। এ ছাড়া ৭ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সহযোগিতার জন্য ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।

১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে দোষী সাব্যস্ত করলেও অন্য দুই অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় এ দুই ঘটনায় কোনো সাজার উল্লেখ করেনি। ৬, ৭, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগেও একই রায় এসেছিল ট্রাইব্যুনালে। এই ছয় অপরাধে শাস্তি স্পষ্ট করতে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিল ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। আপিলের রায়ে ৬, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন সাঈদী। আর ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮ ও ২০ নম্বর অভিযোগে প্রমাণিত হয়নি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছিল।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে করা এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয় জামায় তের নেতা সাঈদীকে। মামলাটি করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাঈদীকে আটক দেখানো হয়। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১১ জুলাই ২০টি ঘটনায় আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ১৪ জুলাই অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

২০ অভিযোগে সাঈদীর বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ৭ ডিসেম্বর। প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৮ জন। এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া ১৫ জনের জবানবন্দিকে তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।

সাঈদীর পক্ষে ১৭ জনের সাক্ষ্য শেষে যুক্তিতর্ক শুরু হয় ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এরই মধ্যে স্কাইপ কথোপকথনের জের ধরে পদত্যাগ করেন বিচারপতি নিজামুল হক। পরে বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হলে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক আবার নেয়া হয়।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই