সিরিজ বোমা হামলার ১১ বছর

চার্জশিটভুক্ত অর্ধশতাধিক জঙ্গি ধরাছোঁয়ার বাইরে

আজ ১৭ আগস্ট। ২০০৫ সালের আজকের এইদিনে দেশের সাড়ে ৪শ স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের প্রচারণা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। মুন্সিগঞ্জ বাদে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় তারা। এ ঘটনার ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার চার্জশিটভুক্ত অর্ধশতাধিক জঙ্গিকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সেদিন ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ’র নামে দেশের আদালত, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারি স্থাপনায় একযোগে বোমা হামলায় দুজন নিহত এবং ১০৪ জন আহত হন।

র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় সারাদেশে মোট ১৬১টি মামলা হয়। সবগুলো মামলা তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে ৫৮টি মামলা এখনো বিচারাধীন। রায় ঘোষণা করা হয়েছে ১০৩ মামলার।

দায়ের করা ১৬১টি মামলায় পুলিশের চার্জশিটে মোট ৬৬০ জঙ্গির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জামিনে আছে ৩৫ জন। বাকিদের ১১ বছরেও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এদের অনেকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছে।

এরপরই শুরু হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জেএমবিবিরোধী অভিযান। গ্রেফতার করা হয় জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম (বাংলাভাই), আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহসহ সাড়ে ৪শ জঙ্গিকে। ঝালকাঠিতে বোমা হামলায় দুই বিচারককে হত্যা মামলায় ২০০৭ সালে ফাঁসি কার্যকর হয় শীর্ষ এই নেতাদের।

১৭ আগস্টের হামলার একের পর এক নাশকতা চালাচ্ছে জেএমবি। গত এক বছরে ইতালিয়ান প্রবাসী তাবেলা সিজার, জাপানের হোসে কুনিও এবং সর্বশেষ গুলশানের রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনা ঘটায় তারা। যদিও এসব ঘটনার পর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস) দায় স্বীকার করেছে, তবে বাংলাদেশ পুলিশের তদন্তে জেএমবির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে।

পুলিশের দাবি, বর্তমানে তামিম আহমেদ চৌধুরী নামে কানাডিয়ান প্রবাসী এক বাংলাদেশি নতুনভাবে জেএমবিকে সংগঠিত করেছেন। তারই মদদে গত ১ জুলাই গুলশানের আর্টিসান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত জেএমবি। একটি গ্রুপ জেএমবি প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমানের অনুসারী। তামিমের নবগঠিত আরেকটি গ্রুপ আইএসের অনুসারী। প্রথম গ্রুপটি ব্লগার ও মাজারপন্থীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত। দ্বিতীয় গ্রুপটি বিদেশিদের হত্যা করে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছে।

গোয়েন্দা সংস্থার আরেকটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জেএমবিসহ আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), হিজবুত তাহরির, ইসলামিক স্টেটসের (আইএস) সদস্যরা একজোট হয়ে কাজ করছে। ভিন্নমতাদর্শী হওয়া সত্ত্বেও নিষিদ্ধ ঘোষণার কারণে একজোট হয়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে তারা।

এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, বর্তমানে জেএমবি দুইভাবে বিভক্ত। পুরান গ্রুপটি মাজারপন্থীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত। ভিন্নমতাদর্শের আরেকটি গ্রুপ নতুনভাবে সংগঠিত হয়েছে। তারা বিদেশিদের হত্যা করছে।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জেএমবি দেশব্যাপি বোমা হামলা চালিয়ে তাদের শক্তির জানান দিয়েছিল। পরে অনেকের বিচার হয়েছে, জেলে রয়েছেন শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা।

তিনি আরো বলেন, ত্রিশালের প্রিজন ভ্যানে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল জিএমবির আরেকটি বড় ঘটনা। জেএমবি আগের মতো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী নয়, তবে জেএমবি ভেঙে গঠিত নব্য জেএমবি গঠিত হয়েছে। নব্য জেএমবির সদস্যরাই সাম্প্রতিক হামলাগুলোর সঙ্গে জড়িত।



মন্তব্য চালু নেই