চলনবিলে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বোরো ধান

জাহাঙ্গীর আলম, চাটমোহর (পাবনা) : বোরো ধানের ফলন মোটামুটি ভাল হলেও হাসি নেই পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিলাঞ্চলের কৃষকের চোখে মুখে। জোয়ারের পানিতে ইতিমধ্যে চলনবিলাঞ্চলের বেশ কিছু জমির ধান তলিয়ে গেছে। ডুবে যাওয়া আধাপাকা ধান কাটতে হচ্ছে কৃষককে। ফলে ঘটছে ফলন বিপর্যয়। নতুন ধানের দাম আশংকাজনক ভাবে কমে যাওয়ায় গত কয়েক বছরের মতো এবারও তাদের লোকসানের বোঝা বইতে হচ্ছে।

পাশাপাশি শ্রমিকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পরছে তারা। ধান কাটা শ্রমিকের মজুরী পরিশোধের জন্য হাটে ধান বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকের আহাজারীতে ভারী হচ্ছে বাতাস। কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই যেন করার নেই তাদের। অনোন্যপায় হয়ে কম দামে লোকসানে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। এক মন ধানের দামেও মিলছেনা একজন শ্রমিক।

চলতি মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া ধান চাষের উপযোগি ছিল। চৈত্রের শেষে এসে ভূর্গর্ভস্থ পানির স্তর আশংকাজনক ভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ ব্যবস্থা ব্যহত হয়। অগভীর নলকূপের পানি উত্তোলন ক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। সেচ যন্ত্রের মালিকরা ১৫ থেকে ২০ ফিট মাটির নিচে সেচ যন্ত্রের পাম্প স্থাপন করে জমির সেচকার্য স্বাভাবিক রাখার প্রনান্ত চেষ্টা করেন। পাশাপাশি অতিমাত্রায় লোড শেডিং এর কারণে জমিতে ঠিকমতো সেচ দিতে না পাড়া এবং অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে গভীর ও অগভীর নলকূপের আওতাধীন বোরো জমি গুলো ফেটে চৌচির হয়। ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে।

চলনবিলের উত্তরাংশের তাড়াশ, সিংড়া, গুরুদাসপুর, আত্রাই এলাকায় ধান অপেক্ষাকৃত আগাম কাটা শুরু হয়। অপরদিকে দক্ষিনাংশের চাটমোহর, ভাগুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম এলাকার ধান পরে কাটা শুরু হয়। দশ পনের দিন পূর্বে উত্তরাংশের ধান কাটা পুরোদমে শুরু হওয়ায় দক্ষিণাংশের শ্রমিকেরা উত্তর চলনবিল এলাকায় পাড়ি জমায়। এমতাবস্থায় গত কয়েকদিন যাবত চলনবিলাঞ্চলের নদী গুলোতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দক্ষিণ চলনবিলের বোয়াইলমারী, ছাইকোলা, লাঙ্গলমোড়া, নবীন, চরনবীন, বরদানগর এলাকার বিলগুলোর বোরো ধান ডুবতে শুরু করেছে। এসব এলাকার কৃষককে পানির মধ্যে ধান কাটতে হচ্ছে। আগামি কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বিস্তীর্ণ এলাকার ধান ক্ষেত পানিতে ডুবে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ছাইকোলা গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন জানান, গুমানী নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জিয়লগাড়ি লালের মুখের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ছাইকোলা নবীন, চরনবীন, এলাকার অনেক বোরো ক্ষেত ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব জমির আধাপাকা ধান কেটে নিতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক। শ্রমিক সংকট, ধান ক্ষেতে পানি হওয়ায় ধান পরিবহনে সমস্যা পাশাপাশি ধানের দাম কমে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পরছে এ এলাকার কৃষকেরা। এ এলাকার হাট বাজার গুলোতো ৪শ ৭০ টাকা থেকে ৫শ টাকা মন ধান বিক্রি হচ্ছে।

একই এলাকার কিরন মাষ্টার জানান, দুই বিঘা জমিতো বোরো ধান আবাদ করেছিলেন তিনি। বিশ মন হারে ফলন পেয়েছেন। সেচ যন্ত্রের মালিককে চার ভাগের একভাগ ধান দেওয়ার পরে ৩০ মন ধান টিকেছে তার যার বাজার মূল্য ১৫ হাজার টাকা। এ জমি আবাদ করতে তার ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান।

সূত্র মতে, বৃহত্তর চলনবিলাঞ্চলে (পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ) চলতি মৌসুমে দুই লাখ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চাটমোহরে ৯ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। গত বছর ৮ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। এবছর ৯শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ কম হয়েছে।

এ ব্যাপারে চাটমোহর কৃষি অফিসে কর্মরত সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, বোরো ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের লোকসান হচ্ছে। কৃষি সংশি¬ষ্ট সরঞ্জামাদীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তিনি কৃষককে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের আহবান জানান।



মন্তব্য চালু নেই