চলনবিলের সাদা সোনা

আর কয় দিন পরেই সাদা রসুনের হাসিটা হাসবেন চাষিরা। পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিলের অধ্যুষিত উপজেলাগুলোর বিস্তৃর্ণ মাঠে সাদা সোনা হিসেবে পরিচিত রসুনের ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। আবাদের শেষ মুহূর্তে মাঠে রসুনের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।

বিনা হালের রসুন আবাদ চলনবিলে ১৫ বছর ধরে জনপ্রিয় ও লাভজনক আবাদ হিসেবে কৃষকরা ধরে রেখেছেন। প্রতি বছরই রসুনের আবাদ বাড়ছে। বোরো ধানের পরেই এই রসুন এখন চলনবিলের কৃষকদের মুখে হাসি আর অভাবী সংসারে সচ্ছলতা এনে দেওয়ার অন্যতম প্রধান ফসল।

চলতি মৌসুমে পাবনার চাটমোহরে রসুনের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রসুন চাষিদের মুখে দেখা যাচ্ছে স্বস্তির আমেজ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রসুন তোলার কাজ পুরোদমে শুরু হবে। দাম ও ফলন মোটামুটি ভালো হওয়ায় গত কয়েক বছরে বেড়েছে রসুন আবাদের জমি।

এ পদ্ধতিতে জমি চাষের কোনো প্রয়োজন হয় না। বিল থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর শুরু হয় আমন ধান কাটা। সেই কাদামাটির জমিতেই কৃষক পুঁতে দেন রসুন কোয়া (কোষ)। এরপর নাড়া (খড়) দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় রসুনের খেত। কয়েক দিনের মধ্যে নাড়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে সবুজ রসুনের চারা গাছ।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (তথ্য) আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০৭ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত রসুন চাষ চাষ হয়েছে। গত বছর উপজেলায় রসুন চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। গতবারের চেয়ে এবার ৫০৭ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ বেশি হয়েছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে রসুনের বীজ লাগে ৩ মণ। রোপণ করতে শ্রমিক প্রয়োজন হয় ১৮-২০ জন। মাস খানেক পর আগাছা পরিষ্কারে বিঘাপ্রতি শ্রমিক লাগে ৮-১০ জন। তোলার সময়ও শ্রমিক প্রয়োজন হয় ৮-১০ জন। বীজ রোপণের সময় ৪০ কেজি ড্যাপ, ৩০ কেজি পটাশ, ১৩ কেজি জিপসাম ও দেড় থেকে ২ কেজি বোরন এবং উপরি প্রয়োগ হিসেবে মাস খানেক পর ১৫ থেকে ২০ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। সব মিলিয়ে সার বাবদ বিঘাপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা। বীজ, শ্রমিক ও সার মিলে এক বিঘা জমিতে রসুন আবাদে খরচ পড়ে প্রায় ২১-২২ হাজার টাকা।

আর প্রতি বিঘা জমিতে রসুন ভালো হলে উৎপাদন হয় ২৫ থেকে ৩২ মণ। বর্তমান বাজার হিসেবে যার মূল্য প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। তবে যখন রসুনের ভরা মৌসুম তখন রসুনের দাম কিছুটা কম যায়। আবার কোনো কোনো বছর বাজারে রসুনের চাহিদা কম থাকায় কৃষক লাভবান হতে পারেন না।

ধানকুনিয়া গ্রামের মকসেদ আলী জানান, রসুন চাষ লাভবান হওয়ায় কৃষকেরা রসুনের আবাদে ঝুঁকছেন। তবে ফলন ও বাজার খারাপ হলে কৃষককে লোকসানও গুনতে হয়।

ছাইকোলা গ্রামের রসুনচাষি আল-মামুন জানান, রসুন আবাদ প্রান্তিক চাষিদের সচ্ছলতা এনে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, অধিকাংশ জমি আমরা লিজ নিয়ে আবাদ করি বড় কৃষকদের কাছ থেকে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রওশন আলম জানান, বিলের পলিমিশ্রিত মাটি রসুন চাষের খুব উপযোগী। তাছাড়া রসুনের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা রসুন চাষে আগ্রহী। কৃষক যে ফসলে লাভ বেশি পান, সেই ফসলেই ঝুঁকবেন, সেটাই স্বাভাবিক।



মন্তব্য চালু নেই