ঘুম থেকে ডেকে তুলে মাদক ব্যবসায়ীকে গুলি!

নওগাঁর বদলগাছীতে আব্দুল জলিল মন্ডল (৪২) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে পায়ে গুলি, তিনলাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে উপজেলার সাগরপুর (গোয়ালপাড়া) গ্রামে মাদক ব্যবসায়ী জলিল মন্ডলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাদক ব্যবসায়ী জলিল মন্ডলসহ তিনজনকে আটক করেছে। তারা হলেন ওই গ্রামের আব্দুল জলিল মন্ডলের ছেলে মিঠুন মন্ডল (২২) ও তার আত্মীয় রাজশাহীর বাঘার উপজেলার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা (৪০)।

এ ঘটনায় আব্দুল জলিল মন্ডল, তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ জলিল মন্ডলকে নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, রাতের অন্ধকারে পুলিশ গ্রামবাসীদের না জানিয়ে অভিযান চালানোর সময় গুলি করায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। গুলির শব্দ শুনে রাতে ডাকাত এসেছে বলে পাড়ার সবাই ঘর-বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

তবে পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদে জানা যায় জলিল মন্ডলের বাড়িতে মাদক আছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ রাতে অভিযান পরিচালনা করলে জলিলের লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় জলিলের পায়ে গুলি লাগে। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। পুলিশ সদস্যদের বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জলিল মন্ডলের নির্মাণাধীন বাড়ির টয়লেটের পাশে একটি স্থানে ডালি (বাঁশের ঝুড়ি) দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। প্রতিবেশীরা এসে ডালিটি সরিয়ে ফেললে সেখানে রক্ত ও তিনটি গুলি পড়ে থাকতে দেখা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, জলিল মাদক ব্যবসা করতেন। তিনি একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। গত ১৫ মার্চ রাজশাহী থেকে ফেরার পথে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানা পুলিশ তাকে আটক করে। তার কাছে কোনো মাদক না পেলেও পুলিশ জলিলকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক মাসের সাজা দেয়। কারাভোগের পর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে জলিল তার বাড়িতে আসেন।

বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে নিজ বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে বদলগাছী থানা পুলিশের একটি দল গ্রামবাসীকে না জানিয়ে জলিলের বাড়িতে অভিযানে যায়। পুলিশ জলিলকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে পায়ে গুলি করে। এরপর পুলিশ জলিলসহ তিনজনকে ধরে থানায় নিয়ে যায়।

জলিলের মামাতো ভাই শকিল হোসেন (৮) বলেন, আমি জলিল ভাইয়ের বাড়িতেই থাকি। পুলিশ প্রায় এখানে আসে। এ কারণে পুলিশদের নাম আমার জানা আছে। জলিল ভাই ও তার স্ত্রী এক ঘরে এবং আমি ও গোলাম মোস্তফা ভাই আরেক ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত ২টার দিকে জলিল ভাইয়ের ঘরের দরজায় ধাক্কাধাক্কি শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। জলিল ভাই ঘরের দরজা খুলছিল না। পরে ঘরের দরজা খুলে দিলে আটজন পুলিশ ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ওই সময় এএসআই খোরশেদ তার পকেট থেকে ফেনসিডিল বের করে ঘরের খাটের নিচে থাকা ব্যাগে রাখেন।

এটি দেখে গোলাম মোস্তফা পুলিশকে বলেন, আপনারা আইনের লোক হয়ে বেআইনি কাজ করছেন। তখন পুলিশ গোলাম মোস্তফাকে লাঠি দিয়ে মারধর করে ঘর থেকে বাহিরে নিয়ে যায়। এরপর জলিলের ছেলে মিঠুন এলে তাকে ধরে বাইরে নিয়ে যায়। পরে এএসআই খায়রুজ্জামান জলিল ভাইকে ঘরের বাইরে এনে টয়লেটের দেয়ালে ঠেসে ওপর দিকে দুইটি ফাঁকা গুলি করে। এরপর সেখানে এএসআই খোরশেদ এসে জলিল ভাইয়ে পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। পরে এএসআই নুর ইসলাম এসে জলিল ভাইয়ের পায়ে দ্বিতীয় গুলি করে তাকে নিয়ে চলে যায়।

জলিলের স্ত্রী মিনা খাতুন জানান, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তার স্বামীর পায়ে গুলি করে তার স্বামীসহ ছেলে ও আত্মীয়কে থানায় ধরে নিয়ে যায়। ইটের নির্মাণাধীন ঘর করার জন্যে তাদের কাছে থাকা তিন লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের ওপর তারা কোনো আক্রমণ করেননি বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ছাড়াও পুলিশ তাদের বিভিন্ন হুমকি দিয়ে গেছেন।

বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম খান জানান, আব্দুল জলিল ও তার লোকজনের হামলায় সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নুর ইসলাম, পুলিশ সদস্য মাহমুদুল হাসান, আতিকুর রহমান ও শাহিনুর আলম আহত হন। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুড়লে আব্দুল জলিলের বাম পায়ে গুলি লাগে। পরে জলিলের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২০ বোতল ফেনসিডিল ও একটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। মাদক ব্যবসা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জলিল, তার ছেলে এবং তার এক আত্মীয়কে (৪২) আটক করা হয়েছে।

ওসি তিন লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করার কথা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাদক ব্যবসা ও পুলিশের কাজে বাঁধা প্রদানের অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। এর আগেও মাদক ব্যবসার অভিযোগে আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা রয়েছে এবং সম্প্রতি মাদক ব্যবসার অভিযোগে তার এক মাসের সাজাও হয়েছিল।



মন্তব্য চালু নেই