গ্রেনেড হামলার এক যুগ : ধরাছোঁয়ার বাইরে তারেকসহ ১৮ আসামি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১২তম বার্ষিকী আজ রোববার। ২০০৪ সালের এই দিনে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের জনসভায় বর্বরোচিত ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। গ্রেনেড হামলার এক যুগেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ আসামি। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতেও পারছে না সরকার।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ ১৮ আসামিকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু করা হয়। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরে আনার বিষয় আদালত থেকে সরকারকে বার বার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়া বলেন, সরকার রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য এ মামলায় বিএনপি নেতাদের নাম দিয়েছে। সরকার রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে মামলা দিয়ে দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে বিএনপিকে।

বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা বলেন, ‘বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরকারের অনুমতি নিয়ে দেশের বাইরে গেছেন। কিন্তু সরকার রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য তাকে পলাতক দেখিয়ে মামলার বিচার শুরু করেছে।

১২ বছর আগের আলোচিত হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা দুটি মামলা এখন চলছে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে। মামলায় ৫১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ ওই হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের ৩ শতাধিক নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পুলিশের তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরে মামলাটি যায় সিআইডিতে। ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।

২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নামযুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। তবে মামলায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তার নাম বাদ দেওয়ায় এখন আসামির সংখ্য ৫১।

৫১ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ পলাতক ১৮ জন। জামিনে রয়েছেন ৮ জন এবং কারাগারে রয়েছেন ২৫ জন। পলাতকরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর (অব.) এটিএম আমিন, মাওলানা তাজউদ্দিন, ঝিনাইদহের ইকবাল, বরিশালের মাওলানা আবু বকর, মাগুরার খলিলুর রহমান, ঢাকা দোহারের জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও গোপালগঞ্জের মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার এবং ভারতের তিহার কারাগারে আটক হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মোত্তাকিন।



মন্তব্য চালু নেই