গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ফ্ল্যাট দেয়া হবে : পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিতে ‘পল্লী জনপদ’ নামক একটি প্রকল্প অচিরেই পাস হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসকারী গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে এসে তাদের জন্য চারতলা বিশিষ্ট ফ্ল্যাট তৈরি করে দেবে সরকার। সেখানে বিদ্যুৎ, গ্যাস সুবিধাসহ সামগ্রিক নাগরিক সুবিধাও দেয়া হবে।’

বুধবার পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি অডিটরিয়ামে ‘বাংলাদেশের উপজেলাগুলোতে ভূমি ব্যবহার’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘যেসব উপজেলা নতুন হয়েছে সেগুলোকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো সম্ভব। এজন্য উপজেলাগুলো উন্নয়নে প্রকল্প বিষয়ক পরিকল্পনা কমিশনে পাঠালে তা একনেকের মাধ্যমে দ্রুত পাস করানো হবে।’

মুস্তফা কামাল আরো বলেন, ‘বর্তমানে দেশের আটটি গ্রামে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘গ্রামীণ জনপদ’ প্রকল্পটি কার্যক্রম চালু করছে। এর মধ্য দিয়ে কৃষি জমি বেঁচে যাবে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী গ্রামে থেকেই শহরের সব সুবিধা পাবে।’

এতে সরকারের খরচ কমে যাবে বলেও জানান মুস্তফা কামাল।

মন্ত্রী দেশের উপজেলাগুলোতে সুষ্ঠু নগরায়ন হবে উল্লেখ করে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণ মডেল নিয়ে কাজ করতে হবে। উন্নত সব দেশেই এ মডেলটি সফল হয়েছে। তবে আমাদেরকে নিজেদের উপযোগী করে গবেষণা কার্যক্রম চালাতে হবে। আমরা সুষ্ঠু নগরায়ন উদ্ভাবন করতে না পারলেও সফল মডেলগুলো কপি করতে পারি। সুষ্ঠু নগরায়নের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তবেই স্থানীয় পর্যায়ে নগরায়ন কার্যক্রমে সফলতা আসবে।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মার দুপারে নগরায়ন গড়ে তুলতে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছেন।’

ভবিষ্যতে পদ্মার দুপারকে হংকং-এর মতো করে গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করেন। কর্মশালায় জানানো হয় বাংলাদেশ প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে কৃষি জমি হারাচ্ছে। বিগত দিনে নগর পরিকল্পনায় শহরের কলেবরই কেবল বৃদ্ধি করা হতো। এতে জমির মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষি জমি তার নিজস্ব চরিত্র হারায়। বর্তমানে সুষ্ঠু নগরায়নে নিবিড় লোকালয় তৈরি করে ভূমি সম্পদের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

বর্তমানে উপজেলা ভিত্তিক নগরায়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়ার কথা কর্মশালায় ওঠে আসে। সমগ্র উপজেলার মূল শহর ও গ্রোথ সেন্টারসহ সব গ্রামীণ জনপদকে নিয়ে ‘শহর প্রবর্তক এলাকা’ এবং কৃষি বা সমশ্রেণীর ভূমি ব্যবহারের জন্যে ‘শহর উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাতি হিসেবে যে দুটি বিষয়ে আমরা অত্যন্ত হতভাগা সে দুটি বিষয় হলো জনসংখ্যা বিষয়ক সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু নগরায়ন পরিকল্পনা। আমি আশা করছি দেরিতে হলেও সুষ্ঠু নগরায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর সত্যিকারভাবেই একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।’

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব গোলাম রব্বানী।

সভাপতির বক্তব্যে সচিব বলেন, ‘কৃষি জমি হারাতে থাকলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় থাকবে না। তখন আমরা খাদ্য-শস্য আমদানি নির্ভর দেশে পরিণত হবো। তা দেশের জন্যে মোটেই ভাল হবে না। আর একটি বিষয় শুধু মাত্র পরিকল্পনা প্রণয়ন নয় বরং তা বাস্তবায়নে সফলতার ওপরেই সুষ্ঠু নগরায়ন নির্ভর করবে।

এ কর্মশালায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই