গ্রামীণফোনের একটি নম্বরের দাম ৯ লাখ টাকা!
মোবাইল ফোনের পুরনো একটি সংযোগের দাম ৯ লাখ টাকা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনই বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে ই-কমার্সভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটে। দেশের সেলফোন অপারেটরদের অধিকাংশ প্যাকেজের নতুন সংযোগের মূল্য ৫০০ টাকার মধ্যে থাকলেও পুরনো বা বিশেষ নম্বরের সংযোগ বিক্রি হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত দামে। মূলত এ-সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা না থাকার কারণেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে পুরনো ও বিশেষ নম্বর বিক্রির ব্যবসা। বণিক বার্তা বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
সাধরণত সংযোগ কেনার সময় নিজের পছন্দ অনুযায়ী নম্বর পেতে চান গ্রাহক। এছাড়া পুরনো ও বিশেষ ধরনের নম্বর এখন অনেকের কাছে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। সেলফোনের পুরনো গ্রাহকের জন্য নানা সুবিধাও চালু করেছে অপারেটররা। ফলে অনেকেই বেশি দামে এ ধরনের নম্বর কেনার প্রতি ঝুঁকছেন। নীতিমালা না থাকায় এর সুযোগ নিচ্ছেন সিম বিক্রেতারা।
ই-কমার্স সাইট ক্লিকবিডিতে সিম বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন রাজধানীর মতিঝিলের এক ব্যক্তি। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের একটি নম্বর বিক্রির জন্য ৯ লাখ টাকা দাম উল্লেখ করেছেন তিনি। একই বিজ্ঞাপনে গ্রামীণফোনের ৭ লাখ টাকার একটি, ৬ লাখ টাকার একটি, ৫ লাখ টাকার তিনটি, ৫০ ও ২৫ হাজার টাকা দামের আরো বেশ কয়েকটি সংযোগ বিক্রির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে বিজ্ঞাপনে। এছাড়া বাংলালিংকের ৫ লাখ, ৫০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা দামের কয়েকটি নম্বরও বিক্রি করতে চান ওই বিক্রেতা। একই ধরনের বিজ্ঞাপন রয়েছে ই-কমার্সভিত্তিক আরো বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে।
জানা গেছে, বিশেষ নম্বর বিক্রির এ ব্যবস্থা রয়েছে সেলফোন অপারেটরদেরও। অপারেটরদের গ্রাহকসেবা কেন্দ্র থেকে যে কেউ কিনতে পারেন এ ধরনের নম্বর। ০১৭১১৫ ও ০১৭১১৭ সিরিজের নম্বর ২৯ হাজার ৯৯৯ এবং ০১৭১১ সিরিজের নম্বর ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছে শীর্ষ সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। বাংলালিংক গোল্ড ও সিলভার নম্বর বিক্রি করছে যথাক্রমে ৯৪৯ ও ৫০০ টাকায়।
এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, অন্য প্যাকেজের মতো এসব নম্বরের ক্ষেত্রেও সিমের দাম একই। তবে বিশেষ ফোন নম্বরের জন্য গ্রাহককে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও একই ধরনের চর্চা চালু রয়েছে। আর বিশেষ নম্বর তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেলফোন সংযোগের দাম বিষয়ক সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই বলে উল্লেখ করেন বাংলালিংকের মুখপাত্র।
মূলত অনলাইনভিত্তিক পণ্য বা সেবা কেনাবেচার বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে অপারেটরদের শুরুর দিকের ক্রমসংখ্যাবিশিষ্ট নম্বর। পাশাপাশি এসব সাইটে বিশেষ ধরনের ক্রমানুযায়ী বিন্যস্ত নম্বরও বিক্রি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে সিমের দাম নির্ধারণ করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। অপারেটরদের প্রথম দিকের নম্বরের প্রতি অনেক নতুন গ্রাহকেরই বিশেষ আর্কষণ রয়েছে। এছাড়া অনেকেই নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালুর ক্ষেত্রে আভিজাত্য ও বিশ্বস্ততার প্রতীক হিসেবেই পুরনো নম্বর ব্যবহারে আগ্রহী। ফলে এসব নম্বর কিনতে সাধারণ সংযোগের তুলনায় বেশি অর্থ ব্যয় করছেন তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, পুরনো কিংবা বিশেষ নম্বরের প্রতি অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে সেলফোন সংযোগের দাম বিষয়ক কোনো নীতিমালা নেই। এ সুযোগেই নিয়ন্ত্রণহীন দামে বিক্রি হচ্ছে এ ধরনের সংযোগ।
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সেলফোন সংযোগের দাম নির্দিষ্ট না থাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে পুরনো ও বিশেষ নম্বরবিশিষ্ট সংযোগের দাম। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পুরনো নম্বর সিম রিপ্লেসমেন্ট ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অপারেটরদের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রের কোনো কোনো কর্মীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে সম্প্রতি দেশের শীর্ষ এক সেলফোন অপারেটর তাদের অব্যবহূত পুরনো সংযোগ নতুন করে বিক্রির অনুমতি পেয়েছে। এক্ষেত্রেও দামের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় চড়া দামে এসব নম্বর বিক্রির সুযোগ রয়েছে।
দৈনিক বণিক বার্তার সৌজন্যে।
মন্তব্য চালু নেই