গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়বে জনজীবনে

সরকার আবারও গ্রাহকপর্যায়ে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোয় জনজীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। তাদের মতে, গৃহস্থালি খাতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে প্রত্যেক সংসারে খরচ বাড়বে। অন্যান্য খাতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে জিনিসপত্রের মূল্যও বাড়বে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। পাশাপাশি দেশের তৈরি পোশাক খাত, চামড়া, জাহাজ নির্মাণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ অন্যান্য গ্যাসনির্ভর কলকারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘গৃহস্থালি খাতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রত্যেক সংসারে খরচ বাড়বে। এছাড়া অন্যান্য খাতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে জিনিসপত্রের মূল্যও বাড়বে।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মনে করে, গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলে জীবনযাত্রার ব্যয় আরেক দফা বাড়বে। দেড় মাস আগে তৈরি করা বার্ষিক প্রতিবেদনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জ্বালানি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রয়োজনই হবে না।

এদিকে শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর পর যখন বেসরকারি খাত চাঙ্গা হতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে বেসরকারি খাতের চরম ক্ষতি হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘যারা গ্যাসনির্ভর শিল্প থেকে রফতানি করেন, তাদের খরচ বেড়ে যাবে। গ্যাসনির্ভর শিল্পকারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হবে।’

বিকেএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে চামড়া, জাহাজ নির্মাণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ গ্যাসনির্ভর সব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অধিকাংশ কারখানাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া যায় না। অথচ প্রতি মাসে গ্যাস বিল ঠিকই পরিশোধ করতে হয়। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে এবং রফতানি খাতের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাবে।’

বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য এখন ১১ টাকা ৩৬ পয়সা। ১ মার্চে বাণিজ্যিক খাতে বেড়ে দাড়াবে ১৪ টাকা ২০ পয়সায়। ১ জুন থেকে হবে ১৭ টাকা ৪ পয়সা। এ ছাড়া সিএনজির মূল্য ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটার হবে ৩৮ টাকা ও ১ জুন থেকে হবে ৪০ টাকা। একইভাবে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্যাপটিভ জেনারেটরে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ছিল ৮ টাকা ৩৬ পয়সা। ১ মার্চ থেকে বেড়ে হবে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা এবং ১ জুন থেকে দিতে হবে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের পড়বে ৯ টাকা ৬২ পয়সা।

শিল্পে এখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য দিতে হয় ৬ টাকা ৭৪ পয়সা। ১ মার্চ থেকে গুনতে হবে ৭ টাকা ২৪ পয়সা। ১ জুন থেকে দিতে হবে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য দিতে হয় ২ টাকা ৮২ পয়সা। ১ মার্চ থেকে বেড়ে ২ টাকা ৯৯ পয়সা হবে। ১ জুন থেকে হবে ৩ টাকা ১৬ পয়সা।

সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য দিতে হয় ২ টাকা ৫৮ পয়সা। মার্চে দিতে হবে ২ টাকা ৬৮ পয়সা। জুনে দিতে ২ টাকা ৭১ পয়সা।

চা বাগানে এখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দিতে হয় ৬ টাকা ৪৫ পয়সা। মার্চ থেকে দিতে হবে ৬ টাকা ৯৩ পয়সা এবং জুন থেকে দিতে হবে ৭ টাকা ৪২ পয়সা।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আবাসিক খাতে এখন মিটার ব্যবহারকারীদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য দিতে হয় ৭ টাকা। ১ থেকে মার্চে দিতে হবে ৯ টাকা ১০ পয়সা। জুনে দিতে হবে ১১ টাকা ২০ পয়সা।

সরকারের এই ঘোষণার ফলে ১ মার্চ থেকে এক চুলা ব্যবহারকারীকে দিতে হবে ৭৫০ টাকা। এখন পর্যন্ত তারা দিচ্ছেন ৬০০ টাকা। এখন যারা দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকা করে দিচ্ছেন, তাদের গুনতে হবে ৮০০ টাকা। এরপর দ্বিতীয় ধাপে বাড়েবে ১ জুন। ওই সময়ে এক চুলার জন্য দিতে হবে ৯০০ টাকা। আর যে সব গ্রাহক দুই চুলা ব্যবহার করছেন, তাদের দিতে হবে ৯৫০ টাকা হারে।

মিটার ব্যবহারকারীদের প্রতি ঘনমিটারে বেড়েছে ৪ টাকা ২০ পয়সা। এছাড়া যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যও বৃদ্ধি করা হয়েছে। দুই দফায় গ্যাসের মূল্য বাড়ছে গড়ে ২২.৭ শতাংশ হারে।



মন্তব্য চালু নেই