গুলশান হামলা: এক মাসেও হয়নি রহস্যের কূলকিনারা, তিনজনকে নিয়ে ধ্রুমজাল

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের এক সাবেক শিক্ষকসহ তিন জনকে গোয়েন্দাদের আটকের বিষয়ে রহস্যের কূলকিনারা হয়নি এক মাসেও। প্রায় এক মাস পর ওই শিক্ষক হাসনাত আর করিম তার বাড়ি ফিরে গেছে বলে প্রচার হলেও তার পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। পুলিশের স্থানীয় থানাও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না। খবর ঢাকাটাইমসের।

আর্টিজান হামলার ঘটনায় নিখোঁজ অন্য দুই জন কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসিব খান এবং নরসিংদীর শিবপুরের বাসিন্দা রুমা আক্তারের বিষয়ে কোনো তথ্যই দিচ্ছেন না নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা। স্বজনরা অভিযোগ করলেও এদেরকে আটকের কথা স্বীকারই করছে না পুলিশ।

মানবাধিকার কর্মী সারা হোসেন বলেন, আইনে স্পষ্ট বলা আছে কাউকে ধরলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করুন, এই তিন জনকে সরকার কোন আইনে আটকে রেখেছে।

হলি আর্টিজানে হামলার সময় রেস্টুরেন্টের ভেতরেই সপরিবারে ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত আর করিম। জঙ্গিরা ২০ জনকে হত্যা করলেও তার পরিবারের কোনো সদস্যকে কিছুই বলেনি। ওই ঘটনায় আর্টিজানের ভেতরকার ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে হাসনাত করিমকে জঙ্গিদের সহযোগী বলেই সন্দেহ করছে পুলিশ।

এই হামলার পর রেস্টুরেন্টটি থেকে জীবিত উদ্ধার সবাইকে পুলিশ নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হাসনাতের পরিবারের সদস্যরা ফিরলেও তিনি ফেরেননি। তবে তাকে পুলিশ আটকের কথা অস্বীকার করে। অবশ্য গত ২৬ সচিবলায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘হাসনাত করিম আমাদের হেফাজতে রয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

হাসনাত করিমের কোনো খোঁজ পেয়েছেন কি না-যোগাযোগ করা হলে হাসনাত করিমের বাবা বলেন, ‘ আমি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারবো না’। হাসনাত করিম ঘরে ফিরেছেন কি না-কেবল এটুকু বলুন- এমন অনুরোধের পর তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনি ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

যোগাযোগ করা হলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হাসনাত করিম বাসায় ফিরেছেন এমন তথ্য আমার জানা নেই।’

আর্টিজানে থেকেও বেঁচে ফেরা কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে নিয়েও সন্দেহের কথা বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। আর্টিজানে কমান্ডো অভিযান শেষে গোয়েন্দারা তাকেও আটক করেছে বলে অভিযোগ করেন তাদের স্বজনরা। তাহমিদ দেশে ফেরেন আর্টিজান হামলার আগের দিন। আর হামলার দিন তিনি বন্ধুদের সঙ্গে ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন বলে তার স্বজনরা বলছেন।

তাহমিদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চেয়ে কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মন্ত্রী স্টেফানে ডিওনের কাছেও চিঠি পাঠিয়েছে তার পরিবার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রডোর সহায়তাও চেয়েছে তারা। দেশটির শীর্ষস্থানীয় দৈনিক টরোন্টো স্টার জানিয়েছে, এই তরুণের অবস্থান জানতে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কানাডা।

আবার গুলশান হামলায় জড়িত সন্দেহে গত ২২ জুলাই নরসিংদীর শিবপুরের রুমা আক্তারকে গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোন্দকার ইমাম হোসেন তখন জানান, রুমা আক্তারকে গোয়েন্দারা নিয়ে গেছে বলে শুনেছেন তিনি। তবে গত শনিবার তিনি বলেন, ‘রুমা আক্তার কোথায় আছে তা আমি বলতে পারবো না। তাকে গ্রেপ্তারের কথা আমাকে কোনো সংস্থা জানায়নি।

তবে নয় দিনেও রুমার কোনো সন্ধান মেলেনি। পুলিশের কর্মকর্তারাও তাকে তুলে আনার কথা স্বীকার করেননি।

রুমা আক্তারের মেজো বোন সাবিনা আক্তার সাথী বলেন, ‘আমরা ধরে নিয়েছি রুমা সরকারের কাছেই আছে। তাই এ বিষয়ে কোথাও আর খোঁজ খবর করিনি। তবে বহুদিন হয়ে গেলো, দুশ্চিন্তা হচ্ছে। দুই একদিনের মধ্যে ঢাকায় যাবো।



মন্তব্য চালু নেই