গুপ্তচরদের সমন্বয়ের অভাবই আটকাতে ব্যর্থ ২৬/১১- র হানাদারি

ব্রিটিশ গুপ্তচর বাহিনীর নজরে ছিল লস্কর-ই- তৈবার এক শীর্ষ নেতা৷ আভাস পাওয়া গিয়েছিল কোনও এক গভীর ষড়যন্ত্রের জাল রচনা হচেছ৷ পর্যাপ্ত তথ্য ছিল তার গতিবিধি সম্পর্কেও৷ কিন্ত্ত তা সত্ত্বেও সমন্বয়ের অভাবেই আটকানো যায়নি মর্মান্তিক ২৬/১১৷ প্রাণ গিয়েছিল ১৫৪ জন নিরপরাধ মানুষের৷
কেটে গিয়েছে ছ’টি বছর৷ কিন্ত্ত ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদী হানার কোনও কিনারা এখনও হয়নি৷ সীমান্তের ওপারের প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমেই আরও খারাপ হয়েছে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের৷ এখনও অধরা মাস্টারমাইন্ড৷ যদিও বিক্ষিপ্তভাবে স্পষ্ট হচেছ ষড়যন্ত্রের জাল৷
জারার শাহ৷ বয়স বছর ৩০৷ কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ৷ লস্কর-ই-তৈবার টেকনিক্যাল চিফ৷ পাকিস্তানের পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাসা নিয়েছিল আরব সাগরের তীরে৷ গুগল আর্থ-এর ম্যাপ থেকে বের করেছিল কোন পথে বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে ঢোকার সহজ রাস্তা বের করা যায়৷ অনলাইনেই খুঁজে বের করেছিল মুম্বইয়ের বুকে দু’টি বিলাসবহুল হোটেল এবং একটি ইহুদি হস্টেল, যা হবে সন্ত্রাসবাদীদের হানাদারির লক্ষ্য৷ ভারতীয় এক ব্যবসায়ীর পরিচয়ে এই জারার শাহই কিনেছিল একটি ইণ্টারনেট ফোন৷ যা পরে ব্যবহার করে লস্কর-ই-তৈবা৷ সেই ফোন ব্যবহার করে নিজের আবাসস্হল আড়াল রেখেই গোটা বিষয়টি পরিচালনা করেছিল জারার৷ প্রযুক্তিতে চোস্ত জারার পাকিস্তান থেকেই গোটা ব্যাপারটি পরিচালনা করলেন, সমস্ত কল ডাইভার্ট করিয়েছিল অস্ট্রিয়া এবং মার্কিন মুলুকের নিউ জার্সি থেকে৷ মুম্বইয়ে ‘অপারেশন’ চালানো জঙ্গিদের ফোনে জারারের ফোন নম্বর ভেসে উঠেছিল ২০১ এরিয়া কোডে৷
কিন্ত্ত একটা ব্যাপার তার নজরে পড়েনি৷ জারার জানতেও পারেনি অনলাইনে তার সমস্ত গতিবিধির উপর নজর রেখেছে ব্রিটিশ গুপ্তচরেরা৷ এমনকী, ইণ্টারনেটে কোন ওয়েবসাইট সে সার্চ করছে তা-ও জানতে পেরেছিলেন তাঁরা৷ আর ব্রিটিশ গুপ্তচরেরা যে এ কথা জানতে পেরেছে, সেই তথ্য জানতে পেরেছিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্হা এনএসএ এমনকী ভারতের উপর মহলের কর্তাদের একাংশ৷ গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে পলাতক এডওয়ার্ড স্নে্াডেনও এ কথা জানতে পেরেছিলেন৷ শুধু তা-ই নয়, ভারতের একটি গুপ্তচর সংস্হাও এ কথা জানতে পেরেছিল৷ কিন্ত্ত ভারত, আমেরিকা আর ব্রিটেনের মধ্যে সঠিক সমন্বয় না থাকাতেই ঘটে গিয়েছে ভয়ানক ২৬/১১৷ যদি এই তিন দেশ নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করত তাহলে হয়তো আটকানো যেত এই হত্যালীলা৷ পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত যে ঘটনাকে গুপ্তচরবৃত্তির ‘সবচেয়ে ভয়ঙ্কর’ ব্যর্থতা বলে চিহিত করা হচেছ৷



মন্তব্য চালু নেই