গাইবান্ধার কিছু খবর
গাইবান্ধায় আজও মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে ৫২’র স্মৃতিময় শহীদ মিনার
গাইবান্ধার পৌর পার্ক চত্বরে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিময় শহীদ মিনার। এ জেলায় যা নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৫৫ সালে। পৌর পার্কের দক্ষিণ প্রান্তে পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে সে বছর প্রথম এ শহীদ মিনার নির্মাণের প্রচেষ্টা চালানো হয়। যা কালক্রমে অনেক সংগ্রামের স্মৃতির ইতিহাস বয়ে এখন তা বর্তমান অবস্থানে পার্কের উত্তর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
বিভিন্ন তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ কাপড়ের মধ্যে একটি ইট রেখে কয়েকজন ধরাধরি করে শহীদ মিনারের প্রথম ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন আওয়ামী লীগ নেতা তছলিম উদ্দিন খান। অবশ্য ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হলেও মুসলিম লীগ নেতাদের বাধার মুখে তা বাস্তবায়িত হয়নি। জেলার খোলাহাটি ইউপি’র তৎকালিন নেতা আজিজার রহমান ও মহির উদ্দিনের নেতৃত্বে মুসলিম লীগের একটি মিছিল নির্মাণ কাজে বাধা দেয়।
অবশ্য ছাত্র-জনতার প্রচেষ্টায় ১৯৫৭ সালের শহীদ মিনার নির্মিত হয়। তখন এ শহীদ মিনারটি উচ্চতা ছিল ৫ ফুট। ১৯৭১ সালে পাক বাহিনী মিনারটি ভেঙ্গে ফেলে। স্বাধীনতার পর মহকুমা প্রশাসক জাইদী সাত্তারের উদ্যোগে বর্তমান কাঠামোতে শহীদ মিনারটি নির্মিত হয়। এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে বর্বর পাকসেনাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত শহীদ প্রকৌশলী বদরুল আলম চুনীর পিতা বছির উদ্দিন আহমেদ। এর নকশা তৈরী করেন পৌরসভার তৎকালিন প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান, নদীয়া ভূষণ সরকার।
এ মিনার তৈরীতে ব্যয় হয় ৫ হাজার ৬০০ টাকা। পরবর্তীতে পৌরসভার প্রকৌশলী গুরুদাসের উদ্যোগে শহীদ মিনারটি পুনঃসংস্কার করা হয়। শহীদ মিনারের নির্মাণ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের এ জেলার সর্বস্তরের সংগ্রামী মানুষের স্বত:স্ফুর্ত সম্পৃক্তার ফসল। ২১শে ফেব্রুয়ারির এ দিনে মাতৃভাষার দাবিতে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল ছাত্রজনতার বুকের রক্তে। সেই রক্তের সোচ্চার আহবানে মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশে। আর মর্মান্তিক সেই ঘটনার সুত্র ধরেই গাইবান্ধার জেলা শহরে ২২শে ফেব্রুয়ারি স্বত:স্ফুর্ত হরতাল পালিত হয়। মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গাইবান্ধার বিড়ি শ্রমিকরা ঐ আন্দোলনে জঙ্গী ভূমিকা রাখেন। কাজী আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে গাইবান্ধা কলেজের ছাত্ররাও সমাবেশ মিছিল করে। মিছিলে-সমাবেশে শ্লোগান উঠে, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, নুরুল আমিনের ফাঁসি চাই’। ১৯৫২ সালে গাইবান্ধায় প্রথম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদের কাঠামো ছিল সভাপতি মতিউর রহমান, সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান (গোবিন্দগঞ্জ), খন্দকার আজিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাসান ইমাম টুলু, সদস্য কাজী আব্দুল হালিম, খান আলী তৈয়ব, শাহ্ ফজলুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, শাহ নুরুন্নবী, বিধু ভূষণ, গোলাম কিবরিয়া, খোরশেদ মিয়া, জলিলার রহমান।
নলডাঙ্গার আব্দুল খালেক সরকার কমিটিতে না থাকলেও জঙ্গী কর্মী ছিলেন। পরবর্তীকালে কারাগারে প্রচন্ড নির্যাতনের ফলে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ওই সময় মুসলিম লীগের তৎকালিন গাইবান্ধার স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা ভাষা আন্দোলনের প্রচন্ড বিরোধিতা করেন। এমনকি ভাষা আন্দোলনের বিরোধীতাকারিদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলে সম্পৃক্ত হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখেন।স্থানীয় প্রভাবশালী মুসলিম নেতা এবং তৎকালিন প্রশাসনের বিরূপ ভূমিকা সত্ত্বেও একুশের গুলিবর্ষণের ঘটনার পর থেকে গোটা মহকুমায় আন্দোলন গড়ে উঠে। এটা যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। মুসলিম লীগরা আন্দোলন দমাতে মিথ্যা মামলা দায়ের করতে থাকে।
১৯৫২ সালে মতিউর রহমান সাত মাস এবং হাসান ইমাম টুলু চার মাস কারা নির্যাতন ভোগ করেন। এ দু’জন গাইবান্ধা জেলার প্রথম নির্যাতিত নেতা। যাদের ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে কারা বরণ করতে হয়েছে। ঐ সময় রংপুর আদালতে ভাষা সংগ্রামীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আবু হোসেন সরকার। যিনি পরবর্তীকালে পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।১৯৫৩ সালে গঠিত দ্বিতীয় সংগ্রাম পরিষদে সভাপতি হয়েছিলেন খান আলী তৈয়ব। কমিটি গঠনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন শামসুল আলম তারা ও কার্জন আলী। প্রথম কমিটির প্রায় সকলেই এ কমিটিতে যুক্ত ছিলেন।
১৯৫৪ সালে ৫২(ক) ধারা জারির পর মতিউর রহমান, হাসান ইমাম টুলু, খান আলী তৈয়বকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠে এ স্মৃতিময় শহীদ মিনার।
সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষনা অনুযায়ী আগামী ৫ মার্চ ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০-এর বিধি ১০ অনুযায়ী, জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার শাহীনুর ইসলাম প্রামানিক সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র (শুন্য) পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি হতে ১২ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও দাখিল, ১৫ ফেব্র“য়ারি মনোনয়ন পত্র বাছাই, ২২ ফেব্র“য়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ এবং ৫ মার্চ ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে মর্মে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাশেদুল হক প্রধান তফসিল ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত: ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর সাবেক মেয়র নুরুন্নবী প্রামাণিক সাজুকে বরখাস্ত করে প্যানেল মেয়র হিসেবে কাউন্সিলর লুৎফর রহমান মুক্তাকে দায়িত্ব দেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। কেননা সাজুর বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যা ও অন্যান্য সহিংসতাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই