গহীন বনে অবৈধ ইট ভাটা: ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের দূর্গম এলাকা কাগজীখোলায় ইট তৈরি ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ উপেক্ষা করে চলছে অবৈধ ইট ভাটা এবং ব্যবহৃত হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতিকারক ড্রাম চিমনি। সরকারী স্কুল, পুলিশ ফাঁড়ি, জনবসতি ও বনায়ন এলাকার সন্নিকটে এ ইট ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে তিন বছর ধরে। ইতিপূর্বে এ ইট ভাটায় ব্যবসায়িক কাযক্রর্ম নাইক্ষ্যংছড়িস্থ তৎকালীন বিজিবি জনস্বার্থে বন্ধ করে দিলেও স্থায়ী ভাবে এই অবৈধ ইট ভাটা বন্ধ করা হয়নি। ফলে চলতি বছর আবারো ইট ভাটা কার্যক্রম চলছে। ইট ভাটা পরিচালনার কোন নীয়মনীতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে জ্বালানি কাঠ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কাগজিখোলা পুলিশ ক্যাম্পের নিচে বিগত তিন বছরের ন্যায় আবারো কাচাঁ চিমনী হিসেবে পরিচিত কাটা ড্রাম চুল্লি দিয়ে তৈরী ইট ভাটায় বনের মূল্যবান কাঠ পুড়ানো হচ্ছে। এখানে প্রায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিল। উপজেলা সদর থেকে যাতায়ত সড়ক দূর্গম হওয়ায় প্রশাসন কিংবা ইউনিয়নের অনেকে জানেনা এ অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়ে। আনুমানিক ১৫ ফুটের মত লম্বা কাচাঁ চিমনী দিয়ে তৈরী ড্রাম চুল্লির এ ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবে বনের মূল্যবান চারা গাছ পুড়াঁনোর ফলে কালো ধুয়া চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে।
কয়েক জন শ্রমিকের সাথে কথা হলে, পাহাড়ী মাটি ও লাকড়ী দিয়ে ইট পুড়ানোর কথা এ প্রতিবেদকের নিকট স্বীকার করেন। তবে উক্ত ইট ভাটা অবৈধ হলেও চুক্তির ভিত্তিতে তারা কাজ করেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। এছাড়াও এ ইট ভাটায় কাচাঁ মাল হিসেবে পার্শ্ববর্তী পাহাড় ও জমির টপ সয়েল কেটে মাটি এনে স্তপ করার দৃশ্য দেখা গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ও লামা উপজেলার ফাসিয়াখালী সীমান্ত ঘেষা কাগজিখোলা নামক এলাকায় প্রশাসনের অগোচরে এ ইটভাটায় অবৈধ ভাবে কাজ চলছে। এর আগে স্থানীয় পরিবেশবিদ ও সাংবাদিকদের অভিযোগমতে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ তৎকালীন বিজিবি জনস্বার্থে উক্ত ইট ভাটার অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেও বর্তমানে পুনরায় কাজ শুরু করেছে পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর জনৈক তিন ব্যবসায়ী পার্টনার নাজমুল হক পিয়ারো, শামসুদ্দিন আহামেদ ও কামাল উদ্দিন মেম্বার।
অবৈধ ইট ভাটার বিষয়ে জানতে ভাটার মালিক শামসুদ্দিন আহামেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইট ভাটার একজন ব্যবসায়ীক পার্টনার হিসেবে পরিচয় দেন। ইট ভাটার বৈধতার বিষয়ে তিনি কিছু জানেনা। প্রশাসনিক বিষয় গুলো অপর পার্টনার নাজমুল হক পিয়ারো দেখা শুনা করায় এ প্রতিবেদককে তার সাথে যোগাযোগের অনুরোধ করেন। নাজমুল হক পিয়ারু’র বলেন- হাইকোর্টের রিটের কপি নিয়ে আপাতত ড্রাম চুল্লি দিয়ে ইট ভাটায় কাজ চলছে। জেলা প্রশাসনের কোন অনুমোদন নেই বলে তিনি এক বাক্যে স্বীকার করেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু শাফায়ৎ মুহম্মদ শাহে দুল ইসলাম এর নিকট যোগাযোগ করা হলে, পাহাড়ের ভিতর ইট ভাটা তৈরীর বিষয়টি তিনি এখনও জানেন না। তবে এ বিষয়ে তিনি খোজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা এ প্রতিবেদককে জানান।
অপরদিকে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর দৃষি আকর্ষন করা হলে, তারা ঢাল তলোয়ার বিহীন একটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছেন। ইচ্ছে করলে কিংবা আইন প্রয়োগের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব হয়না। তবে জেলা কিংবা উপজেলা প্রশাসন তাদের সহযোগিতা চাইলেই ঘটনাস্থলে অভিযান চালাতে পারেন বলে জানান।
জানতে চাইলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার সাইফুল ইসলাম জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির কোন ইট ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই এবং নতুন আইন অনুযায়ী পার্বত্য এলাকায় এ ইট ভাটার ছাড়পত্র পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
কৃষি ও পরিবেশবিদগণের মতে, পাহাড়ের মাটি ও জমির টপ সয়েল কেটে ইট ভাটায় নেওয়ার ফলে এলাকায় কৃষি বিপ্লবে মারাত্মক ব্যাঘাত হচ্ছে। এছাড়াও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব ইট ভাটার কালো ধুয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও সংশ্লিষ্টদের কাছে যেন এসবের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
উল্লেখ্য, সংরক্ষিত এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করলে পাঁচ বছরের কারাদন্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্ধদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) বিল-২০১৩’ আইনে ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। আর অনুমোদন না নিয়ে ইটভাটা খুললে এক বছরের কারাদন্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তোলেন।
মন্তব্য চালু নেই