২১ বছরে সারাদেশে ২৮ সাংবাদিক নিহত

গত ২১ বছরে রাজধানীসহ সারাদেশে সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে ২৮টি। বিভিন্নভাবে ২৮ জন সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হয়নি। দুর্বল তদন্ত ও শক্তিশালী মহলের চাপের কারণে খালাস পেয়ে যাচ্ছে আসামীরা।

২০০২ সালে খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বাঞ্চলের সিনিয়র রিপোর্টার হারুন উর রশিদ হত্যা এবং ২০০৪ সালে খুলনা প্রেসক্লাব সভাপতি দৈনিক জন্মভূমির সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালু হত্যা মামলার সব আসামি খালাস পেয়েছে।

অন্যান্য মামলাগুলো ঝুলে আছে। দুর্বল তদন্তের কারণেই আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সাংবাদিক নেতারা।

এ বিষয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এ পর্যন্ত যত সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ফরিদপুরের গৌতম ছাড়া কোনো হত্যার বিচার হয়নি। সেক্ষেত্রেও নিশ্চিত হয়নি সর্বোচ্চ শাস্তি। মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন।

সাগর রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ৫ বছরে পড়ল। কোনো কূল কিনারা হল না। সে সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপরাধী সনাক্তের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। পরে কত হাজার ৪৮ ঘন্টা পার হল কিন্তু বিচার হল না। এ ধরণের হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলেই ঘটে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আর তা না হলে অপরাধীরা একের পর এক এ ধরণের অপকর্ম চালিয়েই যাবে।

সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট ( সিপিজে) এর তথ্যমতে গত ২১ বছরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে ২৮টি। এর মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ১টির। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক হত্যার বিচার এড়ানো দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম।

এ বিষয়ে ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানি বলেন, নির্বিচারে সাংবাদিক হত্যা এবং এর কোনো বিচার না হওয়ায় সারা দেশের মানুষসহ সাংবাদিক সমাজ ক্ষুদ্ধ। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে হামলা মামলাসহ হত্যার সঠিক বিচার হচ্ছে না। সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দাবি আদায় সহজ হত।

সাগর-রুনিসহ অন্যান্য সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে তালবাহানা দেখতে চাই না। সঠিক তদন্তের জন্য বিচার দাবি করছি। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সেই ৪৮ ঘন্টার অপেক্ষা শেষ হয়নি ৫ বছরেও। সমকালের সাংবাদিক শিমুল হত্যাকাণ্ডেও যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল দিয়ে বিচারকার্য দ্রুত সম্পন্ন করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

১৯৯৬ সালে সাপ্তাহিক নীল সাগর এর প্রতিবেদক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, নির্বাচন ফলাফল পরবর্তী সহিংসতার সংবাদ সংগ্রহকালে নিরাপত্তা কর্মীর গুলিতে নিহত হন। পরবর্তী সময় প্রতিবছর এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন নাম। সাইফুল আলম, মীর ইলিয়াস হোসাইন, শামসুর রহমান, নাহার আলি, হারুনুর রশিদ, শুকুর হোসাইন, সৈয়দ ফারুক আহমেদ, মানিক সাহা, হুমায়ন কবির বালু , কামাল হোসেন, দিপঙ্কর চক্রবর্তি, শহীদ আনোয়ার, শেখ বেলাল উদ্দিন, গোলাম মাহফুজ, গৌতম দাস, বেলাল হোসেন, ফরহাদ খা, গোলাম মোস্তফা সারোয়ার, মেহেরুন রুনি, অনন্ত বিজয় দাস, জামাল উদ্দিন, আলহাদ আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, মিশিউর রহমান এবং সর্বশেষ সমকালের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল ৩ রা ফেব্রুয়ারি ২০১৭ নিহত হন।

এ বিষয়ে প্রেসক্লাবের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, ‘সাংবাদিক হত্যার এ তালিকায় নতুন কোনো নাম আর দেখতে চাইনা। রাজনীতিবিদ আমলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবার অভিন্ন শত্রু সাংবাদিকরা। দেশব্যাপী লুটপাটের যে সংস্কৃতি চলছে তার একমাত্র প্রতিবন্ধক সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা তাদের প্রতিবেদনে ছিটেফোটা হলেও তার প্রকাশ করে। সাংবাদিক হত্যার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ প্রতিবেদন দেয় না। পুলিশ আইওয়াশ করে, লোক দেখানো ব্যবস্থা নেয় কিন্তু পরিশেষে দিনশেষে যা হবার তাই হয়।

ভবিষ্যতে যেন এরকম ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করছি। কিন্তু সাংবাদিকদের মাঝে মূলত ঐক্য না থাকার কারণে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর সমগ্র দেশের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ হয়েছিল কিন্তু কিছু নেতার লেজুড়ভিত্তিক সংস্কৃতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তিনি মনে করেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চর্চা ও এর পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেই সম্ভব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড বন্ধ এবং বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া সাংবাদিক হত্যার বিচার সম্পন্ন করা।খবর চ্যানেল আইয়ের সৌজন্যে।



মন্তব্য চালু নেই