খালেদার শ্রদ্ধা জাতির সঙ্গে তামাশা

শ্রদ্ধা জানাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যাওয়াকে ‘তামাশা’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার বিকালে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা বলেন,“বুদ্ধিজীবীদের যারা হত্যা করেছিল, তাদেরকে যে মন্ত্রী বানায় সে কোন মুখে শ্রদ্ধা জানাতে যায়? মানুষের সঙ্গে তামাশা করা ছাড়া আর কী?”

“উনি এটা করে কী বোঝাতে চেয়েছেন? কী নাটক করতে চেয়েছিলেন? উনি নটাঙকি ভালোই জানেন,” যোগ করেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মো. মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির কয়েক ঘণ্টা আগে খালেদা জিয়ার লন্ডন থেকে দেশে ফেরার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যেই ফাঁসির ঘোষণা করা হলো, উনি লন্ডন থেকে ছুটে চলে এলেন। ভেবেছিলেন, আন্দোলন করে ফাঁসি বন্ধ করবেন।”

সকাল ৮টার কিছু পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে ফুল দেন ১০টা ২০ মিনিটে।

বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এমন অবস্থা তৈরি করেছিল, দেশের স্বাধীনতা আনাই যেন বিরাট অপরাধ। মুক্তিযুদ্ধটাই যেন অপরাধ।

“একেক রাতে একশ করে সৈনিককে হত্য করেছে জিয়াউর রহমান; যারা মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তান আমাদের বিজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে। তার স্ত্রী একই কাজ করছে।”

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়; তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুদিন আগে বুদ্ধিজীবী হত্যায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।

সেই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত যে চারজনের সর্বোচ্চ সাজার রায় হয়েছে, তাদের মধ্যে একাত্তরের বদর কমান্ডার আলী আহসান মো. মুজহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে গত ২২ নভেম্বর; যিনি খালেদার মন্ত্রিসভায় ছিলেন।

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীও ছিলেন খালেদা সরকারের মন্ত্রী। তার আপিলের রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, তাদেরকে যে মন্ত্রী বানায় সে কোন মুখে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধাও তার সাথে যায়।

“তাদের লজ্জা থাকা উচিত। কোন মুখে যায়। নিজেদের যদি লজ্জা-শরম-ঘেন্না-পিত্তি থাকতো, তাহলে যেত না।”

খালেদা জিয়ার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যাওয়া ‘ধোঁকা দেওয়া ছাড়া কিছুই না’ বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি ঘৃণা জানাতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভনেত্রী বলেন, “বাংলাদেশের কোনো মানুষ যদি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে চায় তাদের ঘৃণা করবেন। তাদেরও বিচার যুদ্ধাপরাধীদের মত হবে। তারাও যুদ্ধাপরাধী।”



মন্তব্য চালু নেই